বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবিধান নিয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘এটি কারও বাপের না।’
আজ বুধবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ওয়ালে তিনি এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘বংশগত আর রক্তের বড়াই দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের যে অসম সুবিধা দেওয়া হত, আজকাল সংবিধান কমিটির সদস্যদের সন্তানদের সেরকম অসমভাবে মুজিববাদী সংবিধানের পক্ষে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘যে কমিটি এই ৭২’এর সংবিধান করেছে, সে কমিটি পাকিস্তানের সংবিধান বানানোর ম্যান্ডেট নিয়ে তারা ভোট পেয়েছিলেন। না মানে মনে করাই দিলাম।’
এই পোস্টের সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমে ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সন্তানদের পাঠানো এক বিবৃতি তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘ছুড়ে ফেলে দেওয়া’ বা ‘কবর দেওয়া’র মতো কথা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কথা মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সর্বোপরি দেশের জনসাধারণকে অবজ্ঞা করার শামিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধানকে টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু) করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান ‘ছুড়ে ফেলা’ এমনকি সংবিধানের ‘কবর রচনা’ করার কথাও বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছে, তার সঙ্গে এই দেশের প্রত্যেক মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও স্বপ্ন-সাধনা জড়িত।
বিবৃতিদাতার বলেন, ‘সংবিধানকে অধিকতর গণতান্ত্রিক করা এবং দেশের গণতন্ত্র সুসংহত করতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এই সংবিধানে সংশোধন ও পরিমার্জন, পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু সংবিধান ‘‘পুনর্লিখন বা ছুড়ে ফেলে দেওয়া” কিংবা ‘‘কবর দেওয়া”র মতো কথা বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিবৃতিদাতারা হলেন বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের মেয়ে তানিয়া আমীর, তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ, অধ্যাপক হাফেজ হাবীবুর রহমানের ছেলে মইনুর রহমান, এ কে মোশাররফ হোসেন আকন্দের ছেলে মাসুদ আলম আকন্দ, অধ্যাপক খোরশেদ আলমের মেয়ে নাসরিন আলম, লুৎফর রহমানের মেয়ে জেবুন নাহার শিউলী, মুহাম্মদ আবদুর রশীদের ছেলে সাজ্জাদুর রশীদ, নাইমূর রশীদ ও সাইফুল রশিদ, মোহাম্মদ বায়তুল্লাহর মেয়ে পারভীন আক্তার, শামসুদ্দীন মোল্লার ছেলে আহমেদ জাকারিয়া, শেখ আবদুর রহমানের ছেলে শেখ আনিসুর রহমান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মইনুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে নাসরিন ইসলাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ছেলে মোহাম্মদ জহির, আইনজীবী দেওয়ান আবুল আব্বাছের ছেলে দেওয়ান আফতাবুল আলম।