বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন শেখ হাসিনা সীমান্তের দিকে চলে যান—এমনটা উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তাহলে জিয়াউর রহমানের হত্যাকারী কে? পর্দার আড়ালে তাহলে কে আছে? এ অভিযোগ তো জনগণের মুখে মুখে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তবে এ সব কথা বলেন রিজভী। সংগঠনের সাবেক দফতর সম্পাদক মুন্সি জামাল উদ্দিন আহম্মেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
আগস্ট মাস আওয়ামী লীগ গুম করে নিয়েছে—এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আগস্ট মাস কি আপনারা গুম করে নিয়েছেন? যেমন চৌধূরী আলম, ইলিয়াস আলী, সুমন, হিরু, পারভেজকে গুম করে নিয়েছেন। বার মাসের একটি মাস আপনারা গুম করে নিবেন। এ মাসে আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারব না। আমাদের দুই মাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। দলের সদস্য নবায়ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জেলায় জেলায় আমাদের সিনিয়র নেতারা যাচ্ছেন সেখান পুলিশ বাধা দিচ্ছে, অসংখ্য তুফান লেলিয়ে দিচ্ছেন তারা মারামারি করছে, কর্মসূচিতে ভাংচুর চালাচ্ছে। তারপর পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, আগস্ট মাসে ভয়াবহ একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এটা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন পালন করবে। তার মানে এই নয় যে অন্য কেউ কোনো কর্মমূচি পালন করতে পারবে না। এটা হচ্ছে বাকশালী মনোবৃত্তি।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চলমান সংলাপকে ‘তামাশা’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন, সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রায় ৯০ ভাগই যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন, ‘‘তারা যে সুপারিশ করেছেন, তা শাসনতন্ত্র ও প্রচলিত আইন যা বলা আছে তাই করা হবে।’’ তাহলে আপনি সংলাপের নামে তামাশা করছেন কেন। এ নাটক না করলেই পারতেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ ও ১৭ আগস্ট সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ৯০ ভাগ বুদ্ধিজীবীর সুপারিশ অগ্রাহ্য করার জন্য, তাদের অপমান করার জন্য আপনি তাদের সংলাপে ডেকে ছিলেন? যদি প্রচলিত আইনেই নির্বাচন হয়, তাহলে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে না। আপনি তো সেই অঙ্গিকারে আসেননি। আপনি চাকরি করে চলে যাবেন, এটাই হচ্ছে আপনার মূল উদ্দেশ্য। গণতন্ত্র কোথায়? ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা কোথায়? সেটা নিশ্চিত করছেন না। সংলাপের নামে যা করছেন তা মানুষ তামাশা বলেই ধরে নেবে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ভোটাধিকার যেভাবে কেড়ে নিয়েছে, জেলায় জেলায় তুফানদের সৃষ্টি করে সেখান থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) আশার বাণী শুনাবেন। সেটি না করে শাসনতন্ত্র ও প্রচলিত আইনের কথা বলছেন। প্রচলিত আইন তো প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছামতো পরির্বতন করেছেন, একদলীয় বাকশালী সংসদ দিয়ে। শাসনতন্ত্রের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তাহলে আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বাকশালকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
আওয়ামী ঘরোয়ানার বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের বুদ্ধিজীবী ও অন্যরা শুধু এক ব্যক্তির কোরাস গাইছেন। দৃশ্যমান অন্যায়গুলো আমলে নিয়ে প্রতিবাদ করছেন না। এমন বিবেক বিক্রি করা, আত্মা বিক্রি করা আওয়ামী ঘরোয়ানার বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে এর আগে কথনো দেখা যায়নি।
দলের নেতাকর্মীদের হত্যা-গুমের ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা জারি রয়েছে শুধু একব্যক্তির শাসন ব্যবস্থা প্রলম্বিত করার জন্য। তারা কিছুই মানবে না। সব কিছুই তাদের দরকার। সব কিছু এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।