ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০ হাজার রোহিঙ্গা এক দিনেই ঢুকলো

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আনজিমান পাড়া পয়েন্ট দিয়ে একদিনেই ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। আরো রোহিঙ্গা এপারে ঢুকতে মিয়ানমার কুয়ান্সিবং সীমান্তে অপেক্ষা করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। ১৫ই অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে করেছে। বর্তমানে তারা আনজিমানের উত্তর পাড়া সীমান্তে অর্থাৎ নাফ নদের বেড়ি বাঁধে অবস্থান করছেন। এদিকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়েও রাতের আঁধারে নৌকাযোগে প্রায় দেড় হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এদের মধ্যেও বেশির ভাগ রাখাইনের বুছিডং থানার বাসিন্দা। এর মধ্যে রোববার রাতে নাফ নদ পার হতে গিয়ে নাফ নদ ও সাগরের মোহনায় আবারো নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নৌকা ডুবির ঘটনায় ৫ শিশু ও ৬ নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২১ জনকে। আরো অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশির ভাগ বুচিডং থানার মগনামা, কোয়াইনডং, জাদীপাড়া, লাওয়াডং গ্রামের বাসিন্দা রয়েছে। অপরদিকে আনজিমান পাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বুচিডং থানার কোয়াইডং গ্রামের মৃত গনি মিয়ার পুত্র মো. ইসমাইল (৬৫) জানান, রাখাইনের সহিংসতার পর থেকে তাদের বাজার বন্ধ রয়েছে। কোন কাজ কর্ম করতে পারছেনা। বাড়িতে খাদ্য নেই। পরিবারের ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেকদিন ধরে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছি। মগ সেনারা কোথাও দেখলে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে আছি। প্রতি মুহূর্ত আতঙ্ক আর প্রাণের ভয়। তাই এপারে আসতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো জানান, গত ৭ দিন যাবৎ পাহাড়ের ঢালা ও বিভিন্ন গ্রাম অতিক্রম করে সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়েছে। লাউয়াডং এলাকার বদর উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৪৫) জানান, এক বিভীষিকাময় ও অবরুদ্ধ পরিবেশ থেকে উদ্ধার হয়ে খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। অর্ধাহারে অনাহারে হাঁটতে হাঁটতে শরীর ক্লান্ত ও ব্যথা হয়ে গেছে। স্থানীয় মেম্বার সোলতান আহমেদ জানান, রাতভর প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বর্তমানে ওপারে হত্যা নির্যাতন বন্ধ হলেও অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের ভুল বার্তার মাধ্যমে তারা এপারে ঢুকছে। নুতন করে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গারা বর্তমানে বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে ৩৪ বিজিবির মেজর আশিকুর রহমান জানান, ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা হতে পারে। তবে তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারছেন না জানিয়ে আরো বলেন, এপারে রোহিঙ্গারা ওপারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের ডেকে আনছেন বলে ধারণা করছেন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে কুয়ান্সিবং সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষা করেছিলেন। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এপারে ঢুকতে থাকে। আরো ঢোকার আশঙ্কা করেছেন তারা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

২০ হাজার রোহিঙ্গা এক দিনেই ঢুকলো

আপডেট টাইম : ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আনজিমান পাড়া পয়েন্ট দিয়ে একদিনেই ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। আরো রোহিঙ্গা এপারে ঢুকতে মিয়ানমার কুয়ান্সিবং সীমান্তে অপেক্ষা করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। ১৫ই অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে করেছে। বর্তমানে তারা আনজিমানের উত্তর পাড়া সীমান্তে অর্থাৎ নাফ নদের বেড়ি বাঁধে অবস্থান করছেন। এদিকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়েও রাতের আঁধারে নৌকাযোগে প্রায় দেড় হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এদের মধ্যেও বেশির ভাগ রাখাইনের বুছিডং থানার বাসিন্দা। এর মধ্যে রোববার রাতে নাফ নদ পার হতে গিয়ে নাফ নদ ও সাগরের মোহনায় আবারো নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নৌকা ডুবির ঘটনায় ৫ শিশু ও ৬ নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২১ জনকে। আরো অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশির ভাগ বুচিডং থানার মগনামা, কোয়াইনডং, জাদীপাড়া, লাওয়াডং গ্রামের বাসিন্দা রয়েছে। অপরদিকে আনজিমান পাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বুচিডং থানার কোয়াইডং গ্রামের মৃত গনি মিয়ার পুত্র মো. ইসমাইল (৬৫) জানান, রাখাইনের সহিংসতার পর থেকে তাদের বাজার বন্ধ রয়েছে। কোন কাজ কর্ম করতে পারছেনা। বাড়িতে খাদ্য নেই। পরিবারের ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেকদিন ধরে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছি। মগ সেনারা কোথাও দেখলে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে আছি। প্রতি মুহূর্ত আতঙ্ক আর প্রাণের ভয়। তাই এপারে আসতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো জানান, গত ৭ দিন যাবৎ পাহাড়ের ঢালা ও বিভিন্ন গ্রাম অতিক্রম করে সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়েছে। লাউয়াডং এলাকার বদর উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৪৫) জানান, এক বিভীষিকাময় ও অবরুদ্ধ পরিবেশ থেকে উদ্ধার হয়ে খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। অর্ধাহারে অনাহারে হাঁটতে হাঁটতে শরীর ক্লান্ত ও ব্যথা হয়ে গেছে। স্থানীয় মেম্বার সোলতান আহমেদ জানান, রাতভর প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বর্তমানে ওপারে হত্যা নির্যাতন বন্ধ হলেও অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের ভুল বার্তার মাধ্যমে তারা এপারে ঢুকছে। নুতন করে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গারা বর্তমানে বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে ৩৪ বিজিবির মেজর আশিকুর রহমান জানান, ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা হতে পারে। তবে তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারছেন না জানিয়ে আরো বলেন, এপারে রোহিঙ্গারা ওপারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের ডেকে আনছেন বলে ধারণা করছেন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে কুয়ান্সিবং সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষা করেছিলেন। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এপারে ঢুকতে থাকে। আরো ঢোকার আশঙ্কা করেছেন তারা।