বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের সময় দুটি বার্তা দিয়ে গেছেন। এরমধ্যে একটি রোহিঙ্গা এবং অপরটি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সংক্রান্ত। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের একজন দায়িত্বশীল কূটনীতিক বাঙালী কণ্ঠকে গতকাল বুধবার জানান, ভারত মনে করে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করাই সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে। মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে ভারতের যোগাযোগ আছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ভারত। নির্বাচনকালীন সরকারের পদ্ধতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওই কূটনীতিক জানান, ভারতসহ পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাদের দেশে যে নিয়মে নির্বাচন হয় এর বাইরে অন্য কোন নির্বাচনকলীন সরকার পদ্ধতির কথা বাংলাদেশ কেন, কোন দেশকে পরামর্শ দিতে পারে না ভারত।
সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপি চেয়ারপারসর বেগম খালেদা জিয়ার। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে ভিন্নমত পোষন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ভারতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বেই সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সে নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিপুল আসনে জয়ী হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কূটনীতিক জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে সকল ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। ভারত নিজ দেশে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করে, অন্যদের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়ার পক্ষে। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার বিষয়েও মত দেন।
যদি আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হয় সেক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের সেসময়ের সরকারের সঙ্গে কাজ করবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক বলেন, ভারত জাতিসংঘ নয়। ফলে কোনো সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া না দেয়ার বিষয় এখানে আসে না। আর বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সকল সরকারের সঙ্গে ভারত কাজ করেছে। এমনকি সামরিক সরকারের সঙ্গেও কাজ করেছে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করতে চায় না ভারত।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে ওই কূটনীতিক বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। রাখাইনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে ভারতও সহায়তা করতে চায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুইদিন সফর শেষে সোমবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা তোলার প্রস্তুতি নেয়া হয়। সফরের প্রথম দিন রবিবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ভারতের সমর্থন থাকবে বলেও জানানো হয়।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের আলোচনা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। সুষমা স্বরাজের সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রতি চাপ দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এই পর্যায়ে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে ভারতও কাজ করে চলেছে বলে জানানো হয়। এছাড়া সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারতের জোরালো সমর্থন প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সুষমা স্বরাজ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ পরামর্শক কমিশনের সভায় যোগ দিতে রবিবার দুপুরে ঢাকায় আসেন। দুই দিন সফর শেষে সোমবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। গত এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের কোনো শীর্ষ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসলেন। এর আগে গত ৩ অক্টোবর ঢাকায় আসেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।