বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় এশিয়া ও ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক (আসেম) সামনে রেখে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন চারটি প্রতিবেশী দেশের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস এ চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরাতে এ সহযোগিতা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চার রাষ্ট্রদূতকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গৃহীত দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগের বিস্তারিত অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১০ লাখেরও বেশি মিয়ানমার নাগরিকের অস্থায়ী আশ্রয় গ্রহণে বাংলাদেশ গভীর সংকটে পড়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, আসন্ন এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম) সম্মেলনকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক প্লাটফরম বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সম্মেলনের সাইডলাইনে অং সান সু চির সঙ্গেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ সম্মেলনে এশিয়া ও ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও যোগ দিচ্ছেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে চীন, জাপান, জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জানতে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
অন্যদিকে ১৫ নভেম্বর কয়েক ঘণ্টার জন্য মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। ২০ ও ২১ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। মাহমুদ আলী ১৯ নভেম্বর মিয়ানমার যাচ্ছেন।
সূত্র জানান, মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন ওই চার দেশের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গতকাল বাংলাদেশের এ সহযোগিতা চাওয়ার কথা তাদের স্ব স্ব দেশের সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (হেডকোয়ার্টারে) জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত প্যানপিমন সোয়াননাপোন্গসে, দিল্লিতে লাওসের রাষ্ট্রদূত (বাংলাদেশেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাওদাম সাকোনিনহোসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি : চার দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে সে দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
তবে, ১৮ ও ১৯ নভেম্বর চীন, জাপান, জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তাদের সফরকালে তাকে (মাহমুদ আলী) ঢাকায় থাকতে হবে।
এজন্য তিনি দুই দিন পর ২০-২১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় আসেম সম্মেলনকালে মিয়ানমার সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আসেম সম্মেলনের পরও দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী আরও দুই দিন মিয়ানমারে অবস্থান করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর পরিচয়পত্র পেশ : জাতিসংঘের নবনিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন।
মিয়া সেপ্পো তার নিয়োগসংক্রান্ত জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। তিনি রবার্ট ওয়াটকিনসের স্থলাভিষিক্ত হলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগের সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। – বিডি প্রতিদিন