বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করে সাহসী ও বীরোচিত কাজের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপিত হয়।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতিসংঘ সম্প্রতি মহিলা প্রতিনিধিত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫৭ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই লুিফর সচিত্র অবস্থান আমাদের নারী শান্তিরক্ষীর অবস্থানকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে। তা সত্ত্বেও জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চপর্যায়ের নিযুক্তিতেও আমাদের মহিলা শান্তিরক্ষীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২৪টি দেশের ৯১ হাজার ৫৮ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে সাত হাজার ৭৫ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছে, যা সত্যিই গর্ব করার বিষয়। বর্তমানে ১০টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫৭ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।’
বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় কর্মরতদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে সামনের কাতারে।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা অনুকরণীয় পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করে বিশ্বের অন্যান্য সহযোগী শান্তিরক্ষীদের শ্রদ্ধা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। একই সঙ্গে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় দেশের জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা অর্জন করেছেন।’
জাতিসংঘ এবং বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় দেশ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাফল্য এবং উপযুক্ততার প্রশংসা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া আপনারা দেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে প্রথম সারির শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে যে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে, তা আপনাদের সাহস, বীরত্ব, অসামান্য পেশাদারি ও দক্ষতারই ফসল। এ গৌরব আপনাদের সমুন্নত রাখতে হবে।’
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরো উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছেন আবদুল হামিদ। শান্তিরক্ষীদের প্রযুক্তি দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ শান্তিরক্ষীদের পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ারও আহ্বান জানান। তিনি শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিহত ১০ জনের পরিবার এবং আহত ১১ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মালি, ডিআর কঙ্গো, লেবাননে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।