ঈদ মানে উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। এই উৎসব-আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে গ্রামে ছোটেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাদ যান না রাজনীতিবিদরাও। বছরব্যাপী রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকা নেতারা ঈদের দিনও ব্যস্ত সময় পার করেন। কেউ কেউ নিজের নির্বাচনি এলাকার জনগণের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারাও কেউ ঢাকায়, কেউ নিজের নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন।
এদিকে অনেকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে পারলেও কয়েক সহস্রাধিক নেতার ঈদ কাটবে কারাগারে। চার দেয়াল ঘেরা আবদ্ধ ঘরে। এছাড়া এবারও অর্ধশতাধিক নিখোঁজ নেতাকর্মীর স্বজনদের ঈদ কাটবে বিবর্ণ। এখনও তাদের ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা।
রাজনীতিবিদদের বাড়ি ফেরার তাগিদ অন্যদের চেয়ে তাদের একটু বেশিই। কারণ, যে মানুষদের সমর্থনে ও ভোটে তারা সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন, তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা অবশ্য কর্তব্য বৈকি!
গত কয়েক বছর বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের কাটছে নিরানন্দ ঈদ। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দলটির চেয়াপারসন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বেশির ভাগ নেতা রয়েছেন কোনো না কোনো ঝামেলায়। মামলা-মোকদ্দমা, কারাবাস, গুটিয়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্যে, গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন, হুলিয়া তো আছেই সঙ্গে যোগ হয়েছে জাতীয় কাউন্সিলের পর কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ার যন্ত্রণা।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করবেন সৌদি আরবে। তিনি বর্তমানে হজ পালন করতে নৌদি আবর রয়েছেন।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর দলটির বেশির ভাগ নেতাই এবার ঈদ করবেন নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায়। প্রতিবার বেশির ভাগ নেতারা দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ঢাকায় ঈদ করেন। কিন্তু তিনি দেশে না থাকায় বেশির ভাগ নেতারাই এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজ এলাকা ঠাকুরগায়ে ঈদ করবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এম কে আনোয়ার কুমিল্লায়, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ঢাকায় ঈদ করবেন। তবে স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতা তরিকুল ইসলাম তার নিজ এলাকা যশোরে ঈদ করবেন। বরাবরই তিনি যশোরে ঈদ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া নতুন সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।
আরেক নতুন সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারতে আছেন। অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তার নামে মামলা চলছে। সালাহ উদ্দিন জামিনে থাকলেও দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ভারতেই ঈদ করতে হচ্ছে।
তবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচ হাসপালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থার উন্নতি না হলে হাসপাতালেই তাকে ঈদ করতে হচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান ঢাকায় ঈদ করবেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এলাকা পটুয়াখালী, তবে ঈদ করবেন ঢাকায়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকায় ঈদ করবেন। এম মোর্শেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তাদের নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বরিশালে এবং শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গায় ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। সপরিবারে তিনি সেখানেই এবারের ঈদ উদযাপন করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আমেদ, রিয়াজ রহমান, ঢাকায় ঈদ করবেন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে কারাগারে ঈদ করতে হচ্ছে। যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ঢাকায়, মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশালে, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল হজ পালন করতে যাওয়ায় তিনি সৌদি আরব, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী, হারুণ-অর রশিদ হারুণ ঈদ করবেন গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ফরিদপুরে ঈদ করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার প্রতিবারের মতো এবার গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন। এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুমসহ বিএনপির অনেক নেতারা আত্মগোপনে থাকায় প্রকাশ্যে ঈদ পালন করতে পারবে না।
কারাগারে কাটবে যাদের ঈদ
এদিকে দীর্ঘ দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন হবিগঞ্জের পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ। একই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর কারাগারে থেকেই দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচন করেন তিনি। তাই এবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে কাটবে জনপ্রিয় এই বিএনপি নেতা ঈদ।
এছাড়া দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ কয়েক সহস্রাধিক বিএনপি নেতাকর্মী ঈদ কাটবে কারাগারে।