বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর। ইতিমধ্যে সম্মেলনের সব ধরনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে শুধু মঞ্চসজ্জার কাজ। কেন্দ্রীয় নেতারা তাই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসছেন মঞ্চ ও আশপাশের এলাকা দেখার জন্য। নান্দনিকতায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেখানে তাদের প্রতিনিধি সার্বক্ষণিক নিযুক্ত রাখছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শুধু দলের গুণকীর্তন করা হবে না, নানা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দেশের কৃষ্টি-কালচারও উপস্থাপন করা হবে। ভিনদেশি প্রতিনিধিরা একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলন থেকে যেন বাংলাদেশের একটি পূর্ণ চিত্র দেখতে পায় সে লক্ষ্যেই এমন আয়োজন।
নেতারা যখন সম্মেলনকে ঘিরে ব্যস্ত, তখন রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে চলছে নানান রটনা, জল্পনা-কল্পনা। এসব জল্পনা-কল্পনার মুখ্য বিষয় আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বেকে ঘিরে; কারা আসছেন আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্বে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের সম্ভাব্য নেতাকর্মীদের নাম প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি জনমনে আলোচনার মাত্রাকে আরো তীব্রতর করেছে। বলতে গেলে, প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে সম্ভাব্য তালিকায় থাকা নেতাকর্মীদের নাম। যদিও বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে থাকা শতভাগ নিশ্চিত বিষয়, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তবে সাধারণ সাম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের থেকে যাওয়ার বিষয়টি এক সময় নিশ্চিত মনে হলেও বর্তমানে এই পদের ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নামও উচ্চারিত হতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সিংহভাগেরেই ভাষ্য, সভাপতি পদে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে, দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামেরও আপাতত কোনো বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও রাজধানীর রাজনীতিকেন্দ্রিক বিভিন্ন আড্ডাস্থল পর্যবেক্ষণে যতটুকু পূর্বাভাস মিলছে তাতে করে বলা চলে, আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসছে বেশ কজন নতুন মুখ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে প্রায় এক ডজন পদে আসতে পারে নতুন মুখ। অনেকের ধারণা, আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে ভূমিকা রাখা এবং দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধ নেতাকর্মীদের জায়গা দেওয়া হবে নতুন কমিটিতে।
দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই নতুন প্রাণে উজ্জীবিত একদল বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের অনুসন্ধান। এবারেও তাই হবে।’
নতুন কমিটি নিয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য না থাকলেও দলটির প্রেসিডেয়াম সদস্য সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য, আগামী সম্মেলনে নবীন এবং প্রবীণের সংমিশ্রণে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব আসবে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয় আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহ্যগত বিষয়।
আওয়ামী লীগের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭টি সাংগঠনিক সম্পাদক পদ রয়েছে। তবে ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক ১০ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী আগামী সম্মেলনে ময়মনসিংহ বিভাগে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
দলীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে পৃথক দুটি নতুন বিভাগ করার করার আলোচনা রয়েছে সরকারের মধ্যে। বিভাগ দুটি গঠন করা হলে আরও দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদ সৃষ্টি হবে। আগামী সম্মেলনের গঠনতন্ত্র-সংক্রান্ত সংশোধনীতে এমনটা উল্লেখ থাকবে।
রাজনীতিক ও জনসাধারণের জল্পনা-কল্পনায় উঠে এসেছে নতুন নেতৃত্বে সম্ভাব্য নেতাকর্মীদের অনেকের নাম।
বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা শাহে আলম মুরাদ, ইসহাক আলী খান পান্না, পংকজ দেবনাথ ও খলিলুর রহমান খলিলের নাম শোনা যাচ্ছে।
খুলনা বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নতুন মুখের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন, বীরেন শিকদার, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, সাইফুজ্জামান শিখর ও আব্দুল মজিদ।
চট্টগ্রাম বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আতাউর রহমান কায়সার পরিবারের একজন, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, শাহজাদা মহিউদ্দিন, সীমান্ত তালুকদারের নাম আলোচনায় আছে।
রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইসরাফিল আলম, হাসান কবির আরিফ, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি ও উমা চৌধুরী।
রংপুর বিভাগে মাহবুবা আরা বেগম গিনি, রাশেক রহমান, মাহমুদ হাসান রিপন, নুরুল ইসলাম সুজন। ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন মুখ হিসেবে দেখা যেতে পারে যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা শফী আহমেদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল হক শাকিল, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন ও মারুফা আক্তার পপি।
নতুন বিভাগ হলে ফরিদপুর বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে নতুন মুখ হিসেবে উঠে আসতে পারেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাহালুল মজনুন চুন্নু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, ইকবাল হোসেন অপু, বাহাদুর বেপারি, নাহিম রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন ও শাহাবউদ্দিন ফরাজী।
কুমিল্লা বিভাগের আলোচনায় আছেন জহির উদ্দিন মোহাম্মদ লিপ্টন, শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজু।
ঢাকা বিভাগে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে।
কার্যনির্বাহী পদে আলোচনায় আছেন জাহিদ আহসান রাসেল ও মনিরুজ্জামান মনির।
দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী সম্মেলনে বেশ কিছু নতুন মুখ উঠে আসতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে অতীতে দলের জন্য অবদান রাখা নারী নেত্রীদের মূল্যায়ন করার কথা ভাবছে দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেত্রী হিসেবে যুক্ত হতে পারেন এমন আলোচনায় রয়েছেন দলটির মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মেহের আফরোজ চুমকি, তারানা হালিম, নুরজাহান বেগম মুক্তা, ওয়াসিকা আয়শা খান, উমা চৌধুরী, নাজমা আক্তার ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল। এই দলকে নিয়ে মানুষের মনে অনেক আকাঙ্ক্ষা আছে। সুতরাং দলটির সম্মেলনকে ঘিরে নানা রটনা থাকা স্বাভাবিক। তবে এতে করে কেউ যেন কোনো গেইম না খেলে। যেন কোনো ইন্টেনশন তৈরি না করে।’