রাস্তার ধারে লাল কাপড়ে মোড়া বড় হাড়ি দেখলেই যেন পেটের খিদা নড়েচড়ে ওঠে। আর যদি ঘ্রাণ নাকে যায় তো কথাই নেই। ডায়েট, কোলেস্টেরল সব ভুলে মাথায় ঘুরতে থাকে কেবল একটি শব্দ- ‘বিরিয়ানি’।
হলুদ আর সাদা রঙের মিশেল চাল, সেসঙ্গে মাখনের মতো আলুর দুই একটি টুকরো আর মাখোমাখো মাংস। ইশ! পড়েই কেমন জিভে জল চলে এসেছে তাই না? বিরিয়ানির প্রতি এই ভালোবাসা অবশ্য সব বাঙালিরই রয়েছে। আর তাইতো আট থেকে আশি সব মজে এই লোভনীয় খাবারে।
কখনো কি মনে প্রশ্ন উঠেছে, মন ভালো করা এই খাবার এসেছে কোথায় থেকে? কখনো বিরিয়ানির আলু মুখে পুরো চোখ বন্ধ ভেবেছেন, এত নাম থাকতে এই খাবার নাম বিরিয়ানিই কেন হলো? আপনি যদি একজন বিরিয়ানিপ্রেমি হয়ে থাকেন তবে এ ফিচার আপনার জন্যই-
বিরিয়ানির নাম যে কারণে বিরিয়ানি-
অনেকেই ভাবেই বহুযুগ ধরে বাঙালির ঐতিহ্যে মিশে রয়েছে বিরিয়ানি, আর তাই দেশীয় খাবার এটি। কেউ কেউ আবার ভাবে লোভনীয় এই খাবারের চল শুরু হয়েছিল ভারতীয়দের হাত ধরে। দুটো ধারণাই কিন্তু একদম ভুল। পারস্য দেশ থেকে আমদানি হয়েছিল জিভে জল আনা এই খাবারটি। পার্সিয়ান শব্দ ‘বিরিয়ান’ যার অর্থ ‘রান্নার আগে ভাজা চাল’। এই শব্দ থেকে জন্ম হয় ‘বিরিয়ানি’ শব্দের।
মুখরোচক বিরিয়ানি; (ছবি- ইন্টারনেট)
আগমনের গল্পে রয়েছে ভিন্ন মত-
অনেকের মতে, ১৩৯৮ সালের দিকে তৈমুর লঙ্গের হাত ধরে ভারতে বিরিয়ানির আগমন ঘটে। মাটির পাত্রে চাল, মাংস আর মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করা হতো। তখন সৈন্যদের খাদ্য হিসেবে প্রস্তুত করা হতো বিরিয়ানির এই আদি ভার্সন।
অন্য একটি মতে লঙ্গের বহু আগে ২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আরবের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে বিরিয়ানি আসে ভারত উপমহাদেশ। তামিল সাহিত্যে ‘ওন সরু’ নামে এক ধরনের খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভাত, ঘি, হলুদ, ধনে, মরিচ, তেজপাতা, মাংস দিয়ে তৈরি করা হতো এই খাবার। আধুনিক বিরিয়ানির সাথে যার ভালোই মিল পাওয়া যায়।
মুমতাজ মজেছিলেন বিরিয়ানির প্রেমে-
বিরিয়ানির আগমন যেভাবেই হোক, তার জনপ্রিয়তা শুরু হয় মুঘল সম্রাটদের হাত ধরে। মুমতাজ মহলের রোজকার খাদ্য তালিকায় বিরিয়ানির উল্লেখ পাওয়া যায়। শাহজাহানের এই সুন্দরী বেগম বিরিয়ানি খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন।
কথিত রয়েছে, একবার মুঘল সেনা ছাউনি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুমতাজ। আর সেখানেই বিরিয়ানি রান্না হতে দেখেন তিনি। খাবার সম্পর্কে রাঁধুনিকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারেন, সৈন্যদের ‘ব্যালেন্স ডায়েট’ এর উদ্দেশ্যেই ভাত আর মাংস মাখানো এ খাবার দেওয়া হয়। নতুন এই খাবার চেখে দেখে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন মুমতাজ। সেই থেকেই শুরু।
অনেক অঞ্চলে বিরিয়ানির সঙ্গে পরিবেশন করা হয় সেদ্ধ ডিম; (ছবি- ইন্টারনেট)
জনপ্রিয়তা ছিল লখনউয়ের নিজাম প্যালেসেও-
কেবল মুঘল রাজপরিবার নয়, নিজের ভালোবাসার জালে লখনউ-এর নিজাম প্যালাসকে জড়িয়েছিলো বিরিয়ানি। এই পরিবার থেকে রকমারি বিরিয়ানির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে যতই বাহারি বিরিয়ানি হোক না কেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ‘দম পুখত’ বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানিকেই এখন আমরা দম বিরিয়ানি বলে চিনি। এই বিরিয়ানি প্রস্তুত করতে সব উপাদান একসঙ্গে দমে বসানো হতো। অল্প আঁচে, ঢাকনা দিয়ে ধীরে ধীরে রান্না হতো বিরিয়ানি।
সময়ের সাথে এখন বিরিয়ানির রাজত্ব বেড়েছে। কেবল ভারতেই পনেরো ধরনের বিরিয়ানি রান্না করা হয়। বিদেশি বাবুরা ভারতীয় উপমহাদেশে ঘুরতে এলে চেখে দেখেন লোভনীয় এ খাবারটি। আর পশ্চিমা দেশগুলোতে যেখানে বাঙালির উপস্থিতি রয়েছে সেখানেও বিশেষ দিনে বাতাস ভরে ওঠে বিরিয়ানির ঘ্রাণে।