ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কান বন্ধ থাকলে কিংবা পানি গেলে কী করবেন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ শীতের সময়ে হাঁচি-সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, ঠাণ্ডার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।  ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে অনেক সময় কান বন্ধ হয়ে যাওয়া ও মধ্যকর্ণে পানি জমার সমস্যা হয়ে থাকে।

অনেকেই কান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে থাকেন।  কিন্তু এটি মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয়। কান বন্ধ হলে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ বা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।

কানের পর্দা আমাদের কানকে বহিঃকর্ণে ও মধ্যকর্ণে বিভক্ত করে। এই রোগে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ হতে পারে, যাকে সংক্ষেপে বলে ওএমই (O.M.E) ।

মধ্যকর্ণের প্রদাহ বিভিন্ন রূপ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। কখনও মধ্যকর্ণে সামান্য তরল পদার্থের উপস্থিতি, কখনও মধ্যকর্ণে পুঁজ সৃষ্টি, আবার মধ্যকর্ণে পুঁজ হয়ে কানের পর্দা হয়ে সেই পুঁজ কান দিয়ে বেরিয়ে আসার মাধ্যমেও এই রোগের প্রকাশ ঘটতে পারে।

কান বন্ধ হয়ে যায় কেন

অডিটরি টিউব যা নাকের সঙ্গে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপন করে, এটি মধ্যকর্ণ ও আবহাওয়ার বায়ুচাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।  কোনো কারণে এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা ঠিকমত কাজ না করলে মধ্যকর্ণে পানি জমে প্রদাহ হতে পারে।

সাধারণত হাঁচি, সর্দি, কাশির বা ঠাণ্ডার লাগার কারণে কানের সঙ্গে নাক এবং গলার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সাময়িক বন্ধ থাকে। ফলে মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে।

শ্বাসনালীর উপরের অংশে জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহ আপনার কানের সমস্যার কারণ হতে পারে।  এজন্য সর্দি ও সাইনোসাইটিস জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসা নিন। না হলে মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয়ে ফুলে গিয়ে পানি জমতে পারে।

কাদের এ সমস্যা  হয় 

সাধারণত শিশুদের এই সমস্যা বেশি দেখা গেলেও যেকোনো বয়সের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।  যে সব শিশুর নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাদের মধ্যকর্ণে পানি জমা হতে পারে।

এছাড়া ঘন ঘন উর্ধ্বশ্বাসনালীর সংক্রমণ, সর্দি কাশি নাক বন্ধ, প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ, ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন, শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, নাকের হাড় বাকা ও ভাইরাল ইনফেকশন থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া নাকের পিছনে ন্যাসোফ্যারিংস নামক স্থানে কোনো টিউমার হলে।

যেসব উপসর্গ দেখা দেয়
১. মধ্যকর্ণে পানি জমা হয়ে প্রদাহ হলে সর্দি কাশির  সঙ্গে হঠাৎ কান বন্ধ হয়ে যায়।

২. হঠাৎ করেই কানে বেশ ব্যথা মনে হওয়া।

৩. কানের মধ্যে ফড়ফড় করে এবং ভোঁ ভোঁ শব্দ  হওয়া ও কানে কম শোনা যাওয়া।

৪. ইনফেকশন বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্ত মিশ্রিত পানির মত পড়ে কিংবা পুঁজ পড়ে।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক- এমবিবিএস ; বিসিএস (স্বাস্থ্য),
নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কান বন্ধ থাকলে কিংবা পানি গেলে কী করবেন

আপডেট টাইম : ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ শীতের সময়ে হাঁচি-সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, ঠাণ্ডার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।  ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে অনেক সময় কান বন্ধ হয়ে যাওয়া ও মধ্যকর্ণে পানি জমার সমস্যা হয়ে থাকে।

অনেকেই কান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে থাকেন।  কিন্তু এটি মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয়। কান বন্ধ হলে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ বা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।

কানের পর্দা আমাদের কানকে বহিঃকর্ণে ও মধ্যকর্ণে বিভক্ত করে। এই রোগে কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ হতে পারে, যাকে সংক্ষেপে বলে ওএমই (O.M.E) ।

মধ্যকর্ণের প্রদাহ বিভিন্ন রূপ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। কখনও মধ্যকর্ণে সামান্য তরল পদার্থের উপস্থিতি, কখনও মধ্যকর্ণে পুঁজ সৃষ্টি, আবার মধ্যকর্ণে পুঁজ হয়ে কানের পর্দা হয়ে সেই পুঁজ কান দিয়ে বেরিয়ে আসার মাধ্যমেও এই রোগের প্রকাশ ঘটতে পারে।

কান বন্ধ হয়ে যায় কেন

অডিটরি টিউব যা নাকের সঙ্গে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপন করে, এটি মধ্যকর্ণ ও আবহাওয়ার বায়ুচাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।  কোনো কারণে এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা ঠিকমত কাজ না করলে মধ্যকর্ণে পানি জমে প্রদাহ হতে পারে।

সাধারণত হাঁচি, সর্দি, কাশির বা ঠাণ্ডার লাগার কারণে কানের সঙ্গে নাক এবং গলার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সাময়িক বন্ধ থাকে। ফলে মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে।

শ্বাসনালীর উপরের অংশে জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহ আপনার কানের সমস্যার কারণ হতে পারে।  এজন্য সর্দি ও সাইনোসাইটিস জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসা নিন। না হলে মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয়ে ফুলে গিয়ে পানি জমতে পারে।

কাদের এ সমস্যা  হয় 

সাধারণত শিশুদের এই সমস্যা বেশি দেখা গেলেও যেকোনো বয়সের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।  যে সব শিশুর নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাদের মধ্যকর্ণে পানি জমা হতে পারে।

এছাড়া ঘন ঘন উর্ধ্বশ্বাসনালীর সংক্রমণ, সর্দি কাশি নাক বন্ধ, প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ, ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন, শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পেছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, নাকের হাড় বাকা ও ভাইরাল ইনফেকশন থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া নাকের পিছনে ন্যাসোফ্যারিংস নামক স্থানে কোনো টিউমার হলে।

যেসব উপসর্গ দেখা দেয়
১. মধ্যকর্ণে পানি জমা হয়ে প্রদাহ হলে সর্দি কাশির  সঙ্গে হঠাৎ কান বন্ধ হয়ে যায়।

২. হঠাৎ করেই কানে বেশ ব্যথা মনে হওয়া।

৩. কানের মধ্যে ফড়ফড় করে এবং ভোঁ ভোঁ শব্দ  হওয়া ও কানে কম শোনা যাওয়া।

৪. ইনফেকশন বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্ত মিশ্রিত পানির মত পড়ে কিংবা পুঁজ পড়ে।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক- এমবিবিএস ; বিসিএস (স্বাস্থ্য),
নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা।