মাঠ ভরে আছে সোনালী ধানে। বাতাসে পাকা ধানের সৌরভ। কৃষকের পরিশ্রম সার্থক। কিন্তু আজ কৃষকের মন ভালো নেই। তাঁর পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার মানুষ নেই। কাটা ধান সময়ের অধিক জমিতে পড়ে আছে। বয়ে আনার লোক নেই। চারদিকে শ্রমিকের তীব্র অভাব।
গ্রামের কামলা এখন শহরে নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক ইত্যাদি। ধান কাটবে কে? সময়মতো না কাটলে সব ধান মাটিতে ঝরে পড়বে! ঝড়, বৃষ্টি আর আগাম বন্যার আশংকাতো আছেই! কিছুদিন আগে হাওড়ের শত শত একরের ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান কাটার লোক ছিল না। যেটুকু কাটতে পেরেছিল তা বয়ে আনার লোকের অভাবে জমিতেই তলিয়ে গেছে পাকা ধানের আঁটি।
এই ধান কৃষকের বেঁচে থাকার জোগান। উৎপন্ন চালে দেশের মানুষের সাধ্য মূল্যে ভাতের নিশ্চয়তা। ওদিকে চাল আমদানীর পর্ব শেষ বিধায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলছে পদ্মা সেতু আর বাকি উন্নয়ন কাজ।
ধান উৎপাদনে কৃষকের জমি পরিশ্রম আর পুঁজি লগ্নি হয়। সেচের জন্য লক্ষ লক্ষ গ্যালন জ্বালানি খরচ হয়। সেচের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশঃ নিচে নেমে যা্য। সুবিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জমিতে বিরামহীন চাষবাস করতে গিয়ে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া সারে ভর্তুকি দেয়ায় ও মাঠ পর্যায়ের ব্লক সুপারভাইজার থেকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা অফিস এবং যানবাহনে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব খরচ হয়। এই যে কৃষিক্ষেত্রে এক বিপুল আয়োজন চলে এর সার্থকতা থাকে তখন যখন ভাতের দেশের মানুষদের পাতে জুঁই ফুলের মতো মুঠো মুঠো ভাতের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। কিন্তু এতকিছুর পরে যদি চোখের সামনে সোনালী আয়োজন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তবে তো সব শেষ!
এই শেষ হওয়াটাকে কিন্তু আমরা চাইলেই রুখে দিতে পারি। সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য স্কুলের উপরের ক্লাসের ছাত্রছাত্রী থেকে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সামর্থ্য ও সুবিধানুযায়ী সমাজের সকল স্তরের নারী-পুরুষরা মিলে এলাকা ভাগ করে নিয়ে কৃষকদের পাশে থেকে মাঠের কাজে শ্রম দিতে হবে! ছাত্রছাত্রীরা স্বেচ্ছাশ্রম দিবেনা, কিছু উপার্জনও করবে। কৃষক ছাত্রছাত্রীদেরকে নির্ধারিত মজুরি পরিশোধ করবে। আমি বিশ্বাস করি এই উপার্জন মনুষ্য জীবনের সেরা উপার্জনের একটি হবে। এই উপলক্ষ্যে দেশের মাটির সাথে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে। গ্রামের মানুষ সন্মানিত বোধ করবে এবং সুন্দর জীবনের অনুপ্রেরণা পাবে।
এই ব্যাপারে সরকারী সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশাকরি। দরকার হবে প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সহযোগিতা।
শুরু হোক নাগরিক ও গ্রামীণ জনপদের মেলবন্ধনে “শস্য কর্তন উৎসব” ।
চলুন তৈরি হই।