ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মাছ-মুরগির দাম

সপ্তাহের ব্যবধানে আগেও রাজধানীর বাজারগুলোয় যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা; এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। অনেক পাড়া-মহল্লায় ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতেও দেখা গেছে। একইভাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। ডিমের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা দরে। তবে এক হালি কিনতে গেলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। মাছের বাজারেও নেই স্বস্তি। এতে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এদিন সকালে মাছ ও মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে দুটি পণ্যেরই পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাজারে ক্রেতার সমাগমও আছে বেশ। কিন্তু মাছ ও মুরগির দাম নিয়ে স্বস্তি নেই তাদের মনে।

গত সপ্তাহেও বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়, সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় ও লেয়ার ৩৩০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহে আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিপিস হাঁস এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। কবুতর বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা প্রতিপিস।

হাঁস ও মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে একজন মুরগি বিক্রেতা বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সব ধরনের মুরগির দাম কম ছিল। কিন্তু বুধবার থেকে হঠাৎ দাম বাড়তে থাকে। বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম তাই দাম বেশি।

আরেক বিক্রেতা বলেন, মুরগির খাদ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাই অনেকে মুরগি উৎপাদন না করায় বাজারে সরবরাহ কমেছে। এজন্য দাম বাড়ছে।

এদিকে আগের মতোই আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৪০০ টাকার নিচে খুব কম মাছই পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রত্যেক ধরনের মাছের দামই আকাশছোঁয়া।

বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি ইলিশ মাছ ৯০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, পুঁটি ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ৩০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ১ হাজার টাকা, বাইলা ১ হাজার ২০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ৩০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬৫০ টাকা, হরিনা চিংড়ি ৬৫০ টাকা, টাটকিনি ৮০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০ টাকা, কাজলী ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৭৫০ টাকা, কোরাল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পোয়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ফলি ১ হাজার ২০০ টাকা, চাপিলা ৬০০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা, মাগুর ৮০০ টাকা, শোল ৬০০ টাকা, কাইক্কা ৪০০ টাকা, লইট্টা ২০০ টাকা ও কই ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের এমন আকাশছোঁয়া দামের কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, বাজারে কোনো কিছুরই তো দাম কম নেই। মাছের তো সরবরাহই কম। তাই দাম বেশি। বর্ষাকালে নদ-নদীতে পানি আসছে। মাছেরা নতুন ডিম ছাড়ছে। কিছুদিন পর বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কিছুটা কমবে।

মো. সেলিম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা জেলেদের কাছ থেকে যেই দামে কিনে আনি তার থেকে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করি। জেলেরাই মাছের দাম বেশি রাখছে। তাই বাজারে দাম বেশি।

এদিকে মাছ ও মুরগির আকাশছোঁয়া দামের কারণে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের। বাজারে তাদের দীর্ঘক্ষণ বিক্রেতাদের সঙ্গে পণ্যের দাম নিয়ে দর কষাকষি করতে দেখা গেছে। দরাদরি করে কেউ বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই কিনছেন, কেউবা আবার পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার করছেন।

বাজার করতে আসা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, মাছ-মুরগির দামের কারণে বাজার করতে এসে প্রতিদিন অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু না খেয়ে তো থাকা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। এখন ডেঙ্গুর সিজন চলছে। মানুষের একটু বাড়তি প্রোটিন প্রয়োজন। কিন্তু মাছ-মাংসের দামের কারণে হিসাব করে বাজার করতে হচ্ছে। দাম কিছুটা কম হলে স্বস্তিতে বাজার করতে পারতাম।

আব্দুল আলীম নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, বাজার করতে এসে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছের বাজারে এলে তো দামের কারণে পাগল হয়ে যেতে হয়।

টিপু সুলতান নামে এক প্রবাসী বলেন, সরকার বলে আমরা মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বাজারে এলে তার প্রভাব দেখা যায় না। বরং বিক্রেতারা মাছের সরবরাহ নেই এ অজুহাত দেখিয়ে আকাশছোঁয়া দাম রাখছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আলাদা জীবন পেল জোড়া লাগানো দুই বোন নুহা ও নাবা

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মাছ-মুরগির দাম

আপডেট টাইম : ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০২৩

সপ্তাহের ব্যবধানে আগেও রাজধানীর বাজারগুলোয় যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা; এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। অনেক পাড়া-মহল্লায় ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতেও দেখা গেছে। একইভাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। ডিমের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা দরে। তবে এক হালি কিনতে গেলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। মাছের বাজারেও নেই স্বস্তি। এতে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এদিন সকালে মাছ ও মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে দুটি পণ্যেরই পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাজারে ক্রেতার সমাগমও আছে বেশ। কিন্তু মাছ ও মুরগির দাম নিয়ে স্বস্তি নেই তাদের মনে।

গত সপ্তাহেও বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়, সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় ও লেয়ার ৩৩০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহে আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিপিস হাঁস এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। কবুতর বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা প্রতিপিস।

হাঁস ও মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে একজন মুরগি বিক্রেতা বলেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সব ধরনের মুরগির দাম কম ছিল। কিন্তু বুধবার থেকে হঠাৎ দাম বাড়তে থাকে। বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম তাই দাম বেশি।

আরেক বিক্রেতা বলেন, মুরগির খাদ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাই অনেকে মুরগি উৎপাদন না করায় বাজারে সরবরাহ কমেছে। এজন্য দাম বাড়ছে।

এদিকে আগের মতোই আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৪০০ টাকার নিচে খুব কম মাছই পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রত্যেক ধরনের মাছের দামই আকাশছোঁয়া।

বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি ইলিশ মাছ ৯০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, পুঁটি ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ৩০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ১ হাজার টাকা, বাইলা ১ হাজার ২০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ৩০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬৫০ টাকা, হরিনা চিংড়ি ৬৫০ টাকা, টাটকিনি ৮০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০ টাকা, কাজলী ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৭৫০ টাকা, কোরাল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পোয়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ফলি ১ হাজার ২০০ টাকা, চাপিলা ৬০০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা, মাগুর ৮০০ টাকা, শোল ৬০০ টাকা, কাইক্কা ৪০০ টাকা, লইট্টা ২০০ টাকা ও কই ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের এমন আকাশছোঁয়া দামের কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, বাজারে কোনো কিছুরই তো দাম কম নেই। মাছের তো সরবরাহই কম। তাই দাম বেশি। বর্ষাকালে নদ-নদীতে পানি আসছে। মাছেরা নতুন ডিম ছাড়ছে। কিছুদিন পর বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কিছুটা কমবে।

মো. সেলিম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা জেলেদের কাছ থেকে যেই দামে কিনে আনি তার থেকে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করি। জেলেরাই মাছের দাম বেশি রাখছে। তাই বাজারে দাম বেশি।

এদিকে মাছ ও মুরগির আকাশছোঁয়া দামের কারণে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের। বাজারে তাদের দীর্ঘক্ষণ বিক্রেতাদের সঙ্গে পণ্যের দাম নিয়ে দর কষাকষি করতে দেখা গেছে। দরাদরি করে কেউ বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই কিনছেন, কেউবা আবার পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার করছেন।

বাজার করতে আসা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, মাছ-মুরগির দামের কারণে বাজার করতে এসে প্রতিদিন অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু না খেয়ে তো থাকা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। এখন ডেঙ্গুর সিজন চলছে। মানুষের একটু বাড়তি প্রোটিন প্রয়োজন। কিন্তু মাছ-মাংসের দামের কারণে হিসাব করে বাজার করতে হচ্ছে। দাম কিছুটা কম হলে স্বস্তিতে বাজার করতে পারতাম।

আব্দুল আলীম নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, বাজার করতে এসে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছের বাজারে এলে তো দামের কারণে পাগল হয়ে যেতে হয়।

টিপু সুলতান নামে এক প্রবাসী বলেন, সরকার বলে আমরা মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বাজারে এলে তার প্রভাব দেখা যায় না। বরং বিক্রেতারা মাছের সরবরাহ নেই এ অজুহাত দেখিয়ে আকাশছোঁয়া দাম রাখছে।