ঢাকা , রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরবাসীর চোখে জল নেই

হাওরের দুঃখ কোথায়? মানুষের ব্যবহারে। সখিনার দুঃখ কোথায়? বুকের গহীনে। এই দুই দুঃখ বুকে নিয়ে বেঁচে আছে হাওর পাড়ের পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ কৃষক পরিবার। এবার তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব। সুনামগঞ্জের বৃহত্তম বোরো ধানের হাওরটিও তলিয়ে গেছে রোববার।

হাওর তলিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সবকটি হাওরই এখন পানির নিচে।  ফসল রক্ষা বাঁধে টানা  স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার পরও শেষ রক্ষা হলো না।

নাগরিক নিরাপত্তার কাজে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অনেক জায়গায় দেখা গেলেও বানভাসি প্রায় ছয় লাখ কৃষক পরিবারের পাশে তাদের কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।

হাওর পাড়ের  কৃষক ডুবে যাওয়া সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আল্লায় আমারে কেনে পাইন্নে ভাসাইয়া নেয় না! বাড়িত গিয়া বাচ্চা-কাচ্চারে (ছেলে-মেয়েদের ) কিতা খানি দিতাম।’ এ কান্না শুধু  নয়।  হাওর পাড়ের  ৫০00000টিরও বেশি গ্রামের হতভাগ্য মানুষের। যার সঙ্গে কথা বলেছি, বোবাকান্না ছাড়া আর কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি।

হাওর তলিয়ে যাওয়ার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এড়াতে পারবে না কিছুতেই। একই কথা বলেছেন গ্রামের অনেকেই। তাদের মতে, সরকারের দীর্ঘ সময়ের উদাসীনতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক দুর্নীতির ফলে আজ তারা মরতে বসেছেন।

এর একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। তবে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাঁধ ভেঙে হাওরের মানুষের দুর্গতির পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান বিপদে এ থেকে শিক্ষা নেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। তবে এখান থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে, তা বলেননি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

প্রথমে বানের জলে ভেসে গেল ধান। সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। কৃষকের মাথায় ঋণের বোঝাসহ সুদের চাপ। এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কট। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে উজানে আত্মীয়স্বজনের কাছে গবাদিপশুসহ আশ্রিত।

অপরদিকে, হাওর এলাকা থেকে দলে দলে লোক গ্রাম ছাড়ছেন কাজের সন্ধানে। যাদের এখন গোলা থেকে ধান বিক্রি করে আয়েশ করার কথা, সেখানে প্রায় দুই কোটি হাওরবাসী পড়ে গেলেন সারা বছরের খাদ্য সংকটে। চারপাশে শুধু দুঃস্বপ্ন আর দুর্ভাবনার মহামারি। এমনটিই আজ বিপর্যস্ত হাওরের বাস্তব চিত্র।

এদিকে, রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, হাওরের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি যে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। অনেকেই মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি, বিশেষ করে হাওর পাড়ের মানুষ। তারা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি উত্থাপন করেছেন। এত কিছুর পরও হাওর থেকে একটি সুসংবাদ পাওয়া গেছে।

কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। শেষ অব্দি এসেও এখনো হাওরবাসীর জন্য কোনো সুখবর নেই। যে সময় হাওর পাড়ের অসহায় মানুষের পাশে সকলের দাঁড়ানোর কথা তখন তা হয়নি। অসহায় কৃষকদের এমন দুর্বিপাকের মধ্যেই খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘হাওরে প্রায় প্রতিবছর এরকম ফসল ডুবি হয়।

এবার একটু বেশি হয়েছে। তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।’ ৩০ লাখ টন ফসলহানির ক্ষতি তিনি কিভাবে পোষাবেন তা দেশবাসী জানে না। গায়ে-গতরে খেটে এই কৃষককুলকেই তা সম্ভব করতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

হাওরবাসীর চোখে জল নেই

আপডেট টাইম : ০৬:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

হাওরের দুঃখ কোথায়? মানুষের ব্যবহারে। সখিনার দুঃখ কোথায়? বুকের গহীনে। এই দুই দুঃখ বুকে নিয়ে বেঁচে আছে হাওর পাড়ের পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ কৃষক পরিবার। এবার তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব। সুনামগঞ্জের বৃহত্তম বোরো ধানের হাওরটিও তলিয়ে গেছে রোববার।

হাওর তলিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সবকটি হাওরই এখন পানির নিচে।  ফসল রক্ষা বাঁধে টানা  স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার পরও শেষ রক্ষা হলো না।

নাগরিক নিরাপত্তার কাজে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অনেক জায়গায় দেখা গেলেও বানভাসি প্রায় ছয় লাখ কৃষক পরিবারের পাশে তাদের কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।

হাওর পাড়ের  কৃষক ডুবে যাওয়া সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আল্লায় আমারে কেনে পাইন্নে ভাসাইয়া নেয় না! বাড়িত গিয়া বাচ্চা-কাচ্চারে (ছেলে-মেয়েদের ) কিতা খানি দিতাম।’ এ কান্না শুধু  নয়।  হাওর পাড়ের  ৫০00000টিরও বেশি গ্রামের হতভাগ্য মানুষের। যার সঙ্গে কথা বলেছি, বোবাকান্না ছাড়া আর কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি।

হাওর তলিয়ে যাওয়ার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এড়াতে পারবে না কিছুতেই। একই কথা বলেছেন গ্রামের অনেকেই। তাদের মতে, সরকারের দীর্ঘ সময়ের উদাসীনতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক দুর্নীতির ফলে আজ তারা মরতে বসেছেন।

এর একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। তবে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাঁধ ভেঙে হাওরের মানুষের দুর্গতির পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান বিপদে এ থেকে শিক্ষা নেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। তবে এখান থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে, তা বলেননি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

প্রথমে বানের জলে ভেসে গেল ধান। সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। কৃষকের মাথায় ঋণের বোঝাসহ সুদের চাপ। এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কট। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে উজানে আত্মীয়স্বজনের কাছে গবাদিপশুসহ আশ্রিত।

অপরদিকে, হাওর এলাকা থেকে দলে দলে লোক গ্রাম ছাড়ছেন কাজের সন্ধানে। যাদের এখন গোলা থেকে ধান বিক্রি করে আয়েশ করার কথা, সেখানে প্রায় দুই কোটি হাওরবাসী পড়ে গেলেন সারা বছরের খাদ্য সংকটে। চারপাশে শুধু দুঃস্বপ্ন আর দুর্ভাবনার মহামারি। এমনটিই আজ বিপর্যস্ত হাওরের বাস্তব চিত্র।

এদিকে, রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, হাওরের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি যে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। অনেকেই মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি, বিশেষ করে হাওর পাড়ের মানুষ। তারা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি উত্থাপন করেছেন। এত কিছুর পরও হাওর থেকে একটি সুসংবাদ পাওয়া গেছে।

কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। শেষ অব্দি এসেও এখনো হাওরবাসীর জন্য কোনো সুখবর নেই। যে সময় হাওর পাড়ের অসহায় মানুষের পাশে সকলের দাঁড়ানোর কথা তখন তা হয়নি। অসহায় কৃষকদের এমন দুর্বিপাকের মধ্যেই খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘হাওরে প্রায় প্রতিবছর এরকম ফসল ডুবি হয়।

এবার একটু বেশি হয়েছে। তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।’ ৩০ লাখ টন ফসলহানির ক্ষতি তিনি কিভাবে পোষাবেন তা দেশবাসী জানে না। গায়ে-গতরে খেটে এই কৃষককুলকেই তা সম্ভব করতে হবে।