ঢাকা , সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রবিউলের স্ত্রীর চাকরি: সমালোচনায় জাবি কর্তৃপক্ষের বোধোদয়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জিম্মিদের উদ্ধারে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের স্ত্রী উম্মে সালমাকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে সিদ্ধান্ত পাল্টে তাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শুক্রবার বরিউলের পরিবারকে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জনাব আবু বকর সিদ্দিক।

এরইমধ্যে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছে রবিউলের পরিবার। এতে বলা হয়, ‘গতকাল ০৬-০৭-২০১৭ তারিখে প্রেরিত রেজি/প্রশা-২/৭৩(৪) সংখ্যক অফিস আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক আপনাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে শিক্ষা শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হলো। এই নিয়োগ আপনার যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’

রবিউলের ভাই শামসুজ্জামান শামস বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাবির চাকরির সিদ্ধান্ত পুনর্মুল্যালয়ন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আমার ভাই জাতির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাকে সম্মান জানিয়েছে তারা।’

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল জাতীয় বীর। তার আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার স্ত্রীকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হলো। আগের নিয়োগ বাতিল করেছি আমরা।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা হয়েছে শুনে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই জিম্মিদের উদ্ধারে ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার রবিউল ইসলাম। ভেতরে আটকা পড়াদের উদ্ধারে গিয়েই জঙ্গিদের গুলি ও বোমার ‍মুখে পড়তে হয় তাকে। আর এই হামলায় প্রাণ নিভে যায় রবিউল ও বনানী থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

রবিউলের মৃত্যুর পর জানা যায় সাধারণ মানুষের জন্য তার আরও চেষ্টার কথা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার যে এলাকায় রবিউলের গ্রাম, সেখানে তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্কুল গড়েছেন এবং বেতনের একটি অংশ সেই স্কুলেই ব্যয় করতেন।

পরোপকারী এই পুলিশ কর্মকর্তার এই জীবন উৎসর্গের পর তার পরিবারকে পুলিশ এবং সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়। আর এই মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে রবিউলের স্ত্রীকে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।উম্মে সালমা পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে। তিনি লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষা নেয়ার পরও তাকে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাবি প্রশাসন। অথচ সালমা ভূগোলে অনার্স মাস্টার্স করেছেন। অনার্স ছাড়া সবগুলোতেই সালমার প্রথম বিভাগ রয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি  হলে তীব্র নিন্দার মুখে পড়ে জাবি কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে তীব্র প্রতিবাদ।  তুমুল নিন্দা ও সমালোচনার মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং উম্মে সালমাকে তাঁর যোগ্যতা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অফিসার পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রবিউলের স্ত্রীর চাকরি: সমালোচনায় জাবি কর্তৃপক্ষের বোধোদয়

আপডেট টাইম : ১০:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জিম্মিদের উদ্ধারে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের স্ত্রী উম্মে সালমাকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে সিদ্ধান্ত পাল্টে তাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শুক্রবার বরিউলের পরিবারকে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জনাব আবু বকর সিদ্দিক।

এরইমধ্যে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছে রবিউলের পরিবার। এতে বলা হয়, ‘গতকাল ০৬-০৭-২০১৭ তারিখে প্রেরিত রেজি/প্রশা-২/৭৩(৪) সংখ্যক অফিস আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক আপনাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে শিক্ষা শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হলো। এই নিয়োগ আপনার যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’

রবিউলের ভাই শামসুজ্জামান শামস বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাবির চাকরির সিদ্ধান্ত পুনর্মুল্যালয়ন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আমার ভাই জাতির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাকে সম্মান জানিয়েছে তারা।’

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল জাতীয় বীর। তার আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার স্ত্রীকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হলো। আগের নিয়োগ বাতিল করেছি আমরা।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা হয়েছে শুনে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই জিম্মিদের উদ্ধারে ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার রবিউল ইসলাম। ভেতরে আটকা পড়াদের উদ্ধারে গিয়েই জঙ্গিদের গুলি ও বোমার ‍মুখে পড়তে হয় তাকে। আর এই হামলায় প্রাণ নিভে যায় রবিউল ও বনানী থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

রবিউলের মৃত্যুর পর জানা যায় সাধারণ মানুষের জন্য তার আরও চেষ্টার কথা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার যে এলাকায় রবিউলের গ্রাম, সেখানে তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্কুল গড়েছেন এবং বেতনের একটি অংশ সেই স্কুলেই ব্যয় করতেন।

পরোপকারী এই পুলিশ কর্মকর্তার এই জীবন উৎসর্গের পর তার পরিবারকে পুলিশ এবং সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়। আর এই মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে রবিউলের স্ত্রীকে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।উম্মে সালমা পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে। তিনি লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষা নেয়ার পরও তাকে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাবি প্রশাসন। অথচ সালমা ভূগোলে অনার্স মাস্টার্স করেছেন। অনার্স ছাড়া সবগুলোতেই সালমার প্রথম বিভাগ রয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি  হলে তীব্র নিন্দার মুখে পড়ে জাবি কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে তীব্র প্রতিবাদ।  তুমুল নিন্দা ও সমালোচনার মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং উম্মে সালমাকে তাঁর যোগ্যতা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অফিসার পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।