ঢাকা , সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে নিত্যপণ্য সরবরাহে বিঘ্নের শঙ্কা শিল্পে কাঁচামাল সংকট

চলতি মূলধনের ঘাটতি, ডলার সংকট ও উচ্চমূল্য এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে পড়েছে দেশের কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সমস্যা। কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে না পারায় কাঁচামালও আমদানি করতে পারছে না তারা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কিছু ব্যাংক বিশেষ করে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অসহযোগিতা করছে। যার কারণে তেল-চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন, রড-সিমেন্টসহ নির্মাণশিল্পের তৈরি উপকরণ, ওষুধ, সিরামিক এবং বস্ত্র খাতের মতো বৃহৎ শিল্পগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এলসি খুলতে না পারায় সম্প্রতি সার্বিক তথ্য তুলে ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চিঠি দিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপ। বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে যথাযথ নির্দেশনা দিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

তার আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও একটি চিঠি দেওয়া হয়। সবশেষ গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার নম্বর ১৬/২০২২ অনুযায়ী গ্রুপটির লোন রিসিডিউল করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যাংককে চিঠি দেয় দেশবন্ধু গ্রুপ। তবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিÑ এ তিনটি ব্যাংক লোন রিসিডিউল করেনি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে ক্লাসিফাইড হিসেবে প্রদর্শন করেছে।

এ অবস্থায় বিষয়টি সুরাহার জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবার দেশবন্ধু গ্রুপ। হাইকোর্ট সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশবন্ধু গ্রুপের লোনগুলো রিসিডিউল করে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশনা দেন।

এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখিত তিনটি ইসলামী ব্যাংককে দেশবন্ধু গ্রুপের কোম্পানিগুলোর সুদ মওকুফ করে ব্যাংক হিসাবগুলো নিয়মিতকরণ এবং নিয়মিত ব্যাংকিং কার্যক্রম করার জন্য চিঠি দেয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রুপটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়; কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো তা করেনি।

এতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

সাবেক সচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের নির্বাহী পরিচারক (ইডি) মোমতাজুল ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। তার পর দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; কিন্তু সেটির বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটায় চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে দেশের শিল্প খাত। তিনি বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় শিল্পগ্রুপ এরই মধ্যে এলসি খুলতে না পেরে তাদের উৎপাদন কমিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক ও ঢাকার কয়েকটি শিল্প গ্রুপ অন্যতম। সামনে রমজান মাস, দেশের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হবে; কিন্তু সেই অনুযায়ী এলসি খোলা এবং তার বিপরীতে মাল শিপমেন্টের অবস্থা সন্তোষজনক নয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রমজানে নিত্যপণ্য সরবরাহে বিঘ্নের শঙ্কা শিল্পে কাঁচামাল সংকট

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে

চলতি মূলধনের ঘাটতি, ডলার সংকট ও উচ্চমূল্য এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে পড়েছে দেশের কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সমস্যা। কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে না পারায় কাঁচামালও আমদানি করতে পারছে না তারা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কিছু ব্যাংক বিশেষ করে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অসহযোগিতা করছে। যার কারণে তেল-চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন, রড-সিমেন্টসহ নির্মাণশিল্পের তৈরি উপকরণ, ওষুধ, সিরামিক এবং বস্ত্র খাতের মতো বৃহৎ শিল্পগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এলসি খুলতে না পারায় সম্প্রতি সার্বিক তথ্য তুলে ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চিঠি দিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপ। বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে যথাযথ নির্দেশনা দিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

তার আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও একটি চিঠি দেওয়া হয়। সবশেষ গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার নম্বর ১৬/২০২২ অনুযায়ী গ্রুপটির লোন রিসিডিউল করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যাংককে চিঠি দেয় দেশবন্ধু গ্রুপ। তবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিÑ এ তিনটি ব্যাংক লোন রিসিডিউল করেনি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে ক্লাসিফাইড হিসেবে প্রদর্শন করেছে।

এ অবস্থায় বিষয়টি সুরাহার জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবার দেশবন্ধু গ্রুপ। হাইকোর্ট সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশবন্ধু গ্রুপের লোনগুলো রিসিডিউল করে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশনা দেন।

এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখিত তিনটি ইসলামী ব্যাংককে দেশবন্ধু গ্রুপের কোম্পানিগুলোর সুদ মওকুফ করে ব্যাংক হিসাবগুলো নিয়মিতকরণ এবং নিয়মিত ব্যাংকিং কার্যক্রম করার জন্য চিঠি দেয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রুপটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়; কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো তা করেনি।

এতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

সাবেক সচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের নির্বাহী পরিচারক (ইডি) মোমতাজুল ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। তার পর দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; কিন্তু সেটির বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটায় চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে দেশের শিল্প খাত। তিনি বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় শিল্পগ্রুপ এরই মধ্যে এলসি খুলতে না পেরে তাদের উৎপাদন কমিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক ও ঢাকার কয়েকটি শিল্প গ্রুপ অন্যতম। সামনে রমজান মাস, দেশের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হবে; কিন্তু সেই অনুযায়ী এলসি খোলা এবং তার বিপরীতে মাল শিপমেন্টের অবস্থা সন্তোষজনক নয়।