ঢাকা , রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

চলছে ভোগান্তির খোঁড়াখুঁড়ি

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়ে স্থানীয় সরকার প্রশাসন ব্যবস্থাও। ঢাকার দুটিসহ ১১টি সিটি করপোরেশনে নেই মেয়র, নেই কাউন্সিলর। সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চলছে সিটি করপোরেশনে। নানা কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব এলাকার জনসাধারণ। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ রাস্তা কাটার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের প্রকল্প ভাবনা আর ঠিকাদারদের বাণিজ্যিক চিন্তার ফলে এই ভোগান্তি বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

প্রসঙ্গত, মেয়র-কাউন্সিলর না থাকায় প্রশাসকের নেতৃত্বে চলছে সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) হাফ বেলার প্রশাসক থাকলেও দক্ষিণে (ডিএসসিসি) প্রশাসক নেই প্রায় এক মাস; প্রধান নির্বাহীর পদটিও শূন্য। তাছাড়া প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান অডিট কর্মকর্তাসহ শীর্ষ পদে কেউ নেই। অনেকটাই অভিভাবকহীনভাবে চলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

এ দুই সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজ বলতে এখন শুধু রাস্তা খোঁড়া চলছে। কোথাও কোথাও ফুটপাত ভেঙে সংস্কার করা হচ্ছে। বছরের এই সময়টা শুষ্ক থাকে। তাই সামান্য খোঁড়াখুঁড়িতেও প্রচণ্ড ধুলো ওড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সরকার পতনের পর পুরোপুরি বন্ধ ছিল সিটি করপোরেশনের কাজ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মাসে রাস্তা খোঁড়ার কাজ বেশি হচ্ছে।

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কোথাও ফুটপাত ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াসহ অধিকাংশ এলাকার রাস্তা কাটা হয়েছে।

শীতের সময় রাস্তা খোঁড়ায় ধুলো হচ্ছে, ভোগান্তি হচ্ছে নগরবাসীর। বাড়ছে কাশি, অ্যাজমা ইত্যাদি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৬নং রোডের বাসিন্দা রিপন বকস আমাদের সময়কে বলেন, ১৫ দিন আগে নবোদয় কাঁচাবাজার এলাকার প্রধান সড়ক কেটে ফেলে রেখেছে। এছাড়া আশপাশের বহু রাস্তা কেটেছে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। এত ধুলো, মাস্ক পরেও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য বছরে এই

সময়ে এত খোঁড়াখুঁড়ি হয় না। এবার যে হারে রাস্তা কাটা হয়েছে তা কবে শেষ হবে তাও জানা নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, প্রয়োজনের তাগিদেই কাটা হচ্ছে। এখন কাজ করতে না পারলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সমস্যা হবে। উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ ও নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে বিআইপি প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কোন সময় কোন কাজ করতে হবে সেটি ঠিক করতে না পারলে ভোগান্তি কমবে না। বর্ষা আর শীতের মাঝামাঝি সময়টা হচ্ছে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করার উপযুক্ত সময়। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মাথায় থাকে প্রকল্প আর ঠিকাদারের মাথায় বাণিজ্য। প্রকল্প আর বাণিজ্যের চাপাচাপিতে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। ঢাকা বায়ুদূষণে রেকর্ড করেছে। সরকারের উচিত বর্ষা মৌসুমে পুরোপুরি কাজ বন্ধ রাখা। নগরায়ণের বিষয়টি কোনো সরকার কখনই পরিকল্পনা করে না। গুরুত্বও দেয় না। তাই ভোগান্তিও যায় না।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের কথার সাথে একমত নন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুম হচ্ছে কাজ করার পিকটাইম। বর্ষায় পরিকল্পনা করি শুষ্ক মৌসুমে কাজ করি। অনেক সময় কার্যাদেশ পাওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ শুরু করতে সময় নেয়, এজন্য একটু পরে শুরু হয়। তবে যখনই শুরু হোক আমাদের টার্গেট বর্ষার আগেই কাজ শেষ করা।

জানা গেছে, অধিকাংশ ওয়ার্ডেই এই মুহূর্তে ড্রেনেজ সংস্কার ও পরিষ্কারের কাজ চলছে। অনেক জায়গায় রাস্তা প্রশস্ত করার কাজও চলছে। সিটি করপোরেশনের কাজের পাশাপাশি অন্যান্য সেবা সংস্থাও রাস্তা খুঁড়ে কাজ করছে। গতকাল থেকে গুলশান-২ এলাকায় মেট্রোরেলের জন্য সেবা সংস্থার সঞ্চালন লাইন অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে ডিএসসিসির হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের সড়ক কেটে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ করতে দেখা গেছে। এতে উত্তর সিটি থেকে দক্ষিণগামী নগরবাসীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

পুরান ঢাকার বংশাল নয়াবাজার এলাকায় ৭ থেকে ৮ মাস ধরে রাস্তা কেটে রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ। নয়াবাজারের বাসিন্দা মো. চঞ্চল বলেন, মাঝে একবার বৃষ্টি হওয়ার পর পানি জমেছিল। রাস্তা কাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। মশার উপদ্রবও বেড়েছে। পেরেশানিতে আছি আমরা। এখন তো মেয়র নাই, কাউন্সিলর নাই- কাকে বলব। কর্মকর্তারা অফিস করেন, তারা তো মানুষের কষ্টের কথা বুঝবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিএনপির সঙ্গে সরকার-ছাত্রদের দূরত্ব যেসব ইস্যুতে

চলছে ভোগান্তির খোঁড়াখুঁড়ি

আপডেট টাইম : ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়ে স্থানীয় সরকার প্রশাসন ব্যবস্থাও। ঢাকার দুটিসহ ১১টি সিটি করপোরেশনে নেই মেয়র, নেই কাউন্সিলর। সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চলছে সিটি করপোরেশনে। নানা কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব এলাকার জনসাধারণ। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ রাস্তা কাটার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের প্রকল্প ভাবনা আর ঠিকাদারদের বাণিজ্যিক চিন্তার ফলে এই ভোগান্তি বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

প্রসঙ্গত, মেয়র-কাউন্সিলর না থাকায় প্রশাসকের নেতৃত্বে চলছে সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) হাফ বেলার প্রশাসক থাকলেও দক্ষিণে (ডিএসসিসি) প্রশাসক নেই প্রায় এক মাস; প্রধান নির্বাহীর পদটিও শূন্য। তাছাড়া প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান অডিট কর্মকর্তাসহ শীর্ষ পদে কেউ নেই। অনেকটাই অভিভাবকহীনভাবে চলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

এ দুই সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজ বলতে এখন শুধু রাস্তা খোঁড়া চলছে। কোথাও কোথাও ফুটপাত ভেঙে সংস্কার করা হচ্ছে। বছরের এই সময়টা শুষ্ক থাকে। তাই সামান্য খোঁড়াখুঁড়িতেও প্রচণ্ড ধুলো ওড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সরকার পতনের পর পুরোপুরি বন্ধ ছিল সিটি করপোরেশনের কাজ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মাসে রাস্তা খোঁড়ার কাজ বেশি হচ্ছে।

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কোথাও ফুটপাত ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াসহ অধিকাংশ এলাকার রাস্তা কাটা হয়েছে।

শীতের সময় রাস্তা খোঁড়ায় ধুলো হচ্ছে, ভোগান্তি হচ্ছে নগরবাসীর। বাড়ছে কাশি, অ্যাজমা ইত্যাদি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৬নং রোডের বাসিন্দা রিপন বকস আমাদের সময়কে বলেন, ১৫ দিন আগে নবোদয় কাঁচাবাজার এলাকার প্রধান সড়ক কেটে ফেলে রেখেছে। এছাড়া আশপাশের বহু রাস্তা কেটেছে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। এত ধুলো, মাস্ক পরেও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য বছরে এই

সময়ে এত খোঁড়াখুঁড়ি হয় না। এবার যে হারে রাস্তা কাটা হয়েছে তা কবে শেষ হবে তাও জানা নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, প্রয়োজনের তাগিদেই কাটা হচ্ছে। এখন কাজ করতে না পারলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সমস্যা হবে। উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ ও নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে বিআইপি প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কোন সময় কোন কাজ করতে হবে সেটি ঠিক করতে না পারলে ভোগান্তি কমবে না। বর্ষা আর শীতের মাঝামাঝি সময়টা হচ্ছে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করার উপযুক্ত সময়। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মাথায় থাকে প্রকল্প আর ঠিকাদারের মাথায় বাণিজ্য। প্রকল্প আর বাণিজ্যের চাপাচাপিতে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। ঢাকা বায়ুদূষণে রেকর্ড করেছে। সরকারের উচিত বর্ষা মৌসুমে পুরোপুরি কাজ বন্ধ রাখা। নগরায়ণের বিষয়টি কোনো সরকার কখনই পরিকল্পনা করে না। গুরুত্বও দেয় না। তাই ভোগান্তিও যায় না।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদদের কথার সাথে একমত নন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুম হচ্ছে কাজ করার পিকটাইম। বর্ষায় পরিকল্পনা করি শুষ্ক মৌসুমে কাজ করি। অনেক সময় কার্যাদেশ পাওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ শুরু করতে সময় নেয়, এজন্য একটু পরে শুরু হয়। তবে যখনই শুরু হোক আমাদের টার্গেট বর্ষার আগেই কাজ শেষ করা।

জানা গেছে, অধিকাংশ ওয়ার্ডেই এই মুহূর্তে ড্রেনেজ সংস্কার ও পরিষ্কারের কাজ চলছে। অনেক জায়গায় রাস্তা প্রশস্ত করার কাজও চলছে। সিটি করপোরেশনের কাজের পাশাপাশি অন্যান্য সেবা সংস্থাও রাস্তা খুঁড়ে কাজ করছে। গতকাল থেকে গুলশান-২ এলাকায় মেট্রোরেলের জন্য সেবা সংস্থার সঞ্চালন লাইন অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে ডিএসসিসির হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের সড়ক কেটে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ করতে দেখা গেছে। এতে উত্তর সিটি থেকে দক্ষিণগামী নগরবাসীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

পুরান ঢাকার বংশাল নয়াবাজার এলাকায় ৭ থেকে ৮ মাস ধরে রাস্তা কেটে রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ। নয়াবাজারের বাসিন্দা মো. চঞ্চল বলেন, মাঝে একবার বৃষ্টি হওয়ার পর পানি জমেছিল। রাস্তা কাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। মশার উপদ্রবও বেড়েছে। পেরেশানিতে আছি আমরা। এখন তো মেয়র নাই, কাউন্সিলর নাই- কাকে বলব। কর্মকর্তারা অফিস করেন, তারা তো মানুষের কষ্টের কথা বুঝবে না।