ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫ দিন ধরে নৌকায়, এক পাশে মানুষ আর অপর পাশে গরু ছাগল হাঁস মুরগি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নৌকার এক পাশে মানুষ আর অপর পাশে গরু ছাগল হাঁস মুরগি। তার উপর ঘরের খুলে নেয়া টিনের চালা ও বেড়া। কথা বলতেই বলে উঠলেন চাল চিঁড়া সব আছে নিরাপদ পানি আর পায়খানার অভাব। বাবারে এদান পানি জীবনে দেখি নাই। এবার তাই দেখা হলো। পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী রাজীবপুর, চিলমারী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর সহ ৬ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। স্রোত আর বুক পানিতে থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে যায় নদী বেষ্টিত মানুষ। উজানের পাহাড়ি ঢলে মোল্লার চর ইউনিয়ন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম মাইজবাড়ির চর। চারপাশে পানি আর পানি। পূর্ব প্রান্তে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ।

মাইজবাড়ির চরে দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছিল ৩শ’ ৪ পরিবার। আবাদ সুবাদ করে পরিবার গুলো বেশ সচ্ছল। পাশাপাশি আছে তাদের নানান ব্যবসা। তার মধ্যে নৌকার ব্যবসাও কম নয়। ভরা বন্যায় প্রতি বছর নৌকা ভাড়া দিয়ে ভর বছর সংসারের নগদ টাকার

যোগান হতো। আর অন্য ব্যবসা থাকলেও ঈদের আগে তারা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মহা চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে। আর কয়দিন পানির মদ্যে থাকি বাহে বাধ্য হয়া চলি আলাম নৌকা নিয়া। এখন নৌকায় সংসার নৌকায় বাড়ি। একথা জানালেন আজাদ আলী। নৌকায় বসে স্ত্রী মমেনা বেগম, ছেলে মালেক, খালেক ও মেয়ে জান্নাতি বেগম। নিজেই নৌকার মাঝি নিজেই নৌকা চালক। তাই মাইজবাড়ির চর যখন ডুবে যায় তারপর দিন তড়িঘড়ি পানির মধ্যে ঘরবাড়ি গরু বাছুর হাঁস মুরগি নিয়ে নৌকায়। বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে নৌকায় তুলে যাত্রা। তবে তারা কোথায় যাবেন তারা নিজেরাও জানে না। নৌকায় সংসার করছি আজ ৫ দিন ধরে একথা বলেন খোকা মিয়া। তার পরিবারও এই নৌকায় আছেন কয়েকদিন হলো।

খোকা মিয়া জানায়, উঁচু বাঁধে কেউ নৌকা ভিরতে দেয় না। তাই নৌকা ভাসতে ভাসতে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে আলেম ঘাঘট নদীতে। এখন মাইজবাড়ির চরের আজাদ আলী, রাজ্জাক আলী, শাহজাহান, সুরুজ্জামান, খোকাসহ ৫ পরিবার নৌকায় বাস করছেন। নৌকায় খাওয়া নৌকায় নাওয়া একথা জানান, খোকা মিয়ার স্ত্রী কাচভান বেগম। খালি কষ্ট নোয়ায় বাবা। সারা দিন রাত নৌকার মদ্যে বসি থাকা কি কষ্ট তা না থাকলে বুঝবেন না। ৩টি নৌকায় ৫ পরিবারের ভেঙে নেয়া ঘরের বেড়া, টিনের চালা, আলনা, খাট। অপর নৌকায় পুরুষ মানুষ আর হাঁস-মুরগি গরু ছাগল। আর ৫ পরিবারের মহিলা ও শিশুরা একসঙ্গে রাত যাপন করছেন । সুরুজ্জামানের মা জোলেখা বেগম নৌকায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত। সারাদিন মলমূত্র ত্যাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। রাত হলে নদীর পারে নৌকা ভিড়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে।

রাজ্জাক আলীর কথা কোটে যামো বাহে। হামার তো জাওয়ার জায়গা নাই। সে কারণে হামরা ৫ পরিবার ৩ নৌকায় আশ্রয় নিয়ে কোনমতো ৫ দিন ধরে দিনরাত পাড়ি দিচ্ছি নৌকার মদ্যে। গাইবান্ধার নৌ-ঘাটের ঘাটুরেরা বলেন, ঘাটে থাকলে ভাড়া দিতে হবে। তাই নতুন ব্রিজ এলাকায় ঘাটে ১শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে নৌকা ভিড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের রিলিফের চাল ডালের দরকার নাই। নৌকায় চাল ডাল খড়ি সবিই আছে। শুধু নেই নিরাপত্তা, পায়খানা, খাবার পানি আর গবাদি পশুর খাবাব। মাইজবাড়ি চরের বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে ওঠায় ঘরবাড়ি নৌকায় তুলে নৌকায় রাত কাটাচ্ছেন এ ৫ পরিবারের ২৮ জন মানুষ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

৫ দিন ধরে নৌকায়, এক পাশে মানুষ আর অপর পাশে গরু ছাগল হাঁস মুরগি

আপডেট টাইম : ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নৌকার এক পাশে মানুষ আর অপর পাশে গরু ছাগল হাঁস মুরগি। তার উপর ঘরের খুলে নেয়া টিনের চালা ও বেড়া। কথা বলতেই বলে উঠলেন চাল চিঁড়া সব আছে নিরাপদ পানি আর পায়খানার অভাব। বাবারে এদান পানি জীবনে দেখি নাই। এবার তাই দেখা হলো। পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী রাজীবপুর, চিলমারী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর সহ ৬ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। স্রোত আর বুক পানিতে থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে যায় নদী বেষ্টিত মানুষ। উজানের পাহাড়ি ঢলে মোল্লার চর ইউনিয়ন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম মাইজবাড়ির চর। চারপাশে পানি আর পানি। পূর্ব প্রান্তে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ।

মাইজবাড়ির চরে দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছিল ৩শ’ ৪ পরিবার। আবাদ সুবাদ করে পরিবার গুলো বেশ সচ্ছল। পাশাপাশি আছে তাদের নানান ব্যবসা। তার মধ্যে নৌকার ব্যবসাও কম নয়। ভরা বন্যায় প্রতি বছর নৌকা ভাড়া দিয়ে ভর বছর সংসারের নগদ টাকার

যোগান হতো। আর অন্য ব্যবসা থাকলেও ঈদের আগে তারা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মহা চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে। আর কয়দিন পানির মদ্যে থাকি বাহে বাধ্য হয়া চলি আলাম নৌকা নিয়া। এখন নৌকায় সংসার নৌকায় বাড়ি। একথা জানালেন আজাদ আলী। নৌকায় বসে স্ত্রী মমেনা বেগম, ছেলে মালেক, খালেক ও মেয়ে জান্নাতি বেগম। নিজেই নৌকার মাঝি নিজেই নৌকা চালক। তাই মাইজবাড়ির চর যখন ডুবে যায় তারপর দিন তড়িঘড়ি পানির মধ্যে ঘরবাড়ি গরু বাছুর হাঁস মুরগি নিয়ে নৌকায়। বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে নৌকায় তুলে যাত্রা। তবে তারা কোথায় যাবেন তারা নিজেরাও জানে না। নৌকায় সংসার করছি আজ ৫ দিন ধরে একথা বলেন খোকা মিয়া। তার পরিবারও এই নৌকায় আছেন কয়েকদিন হলো।

খোকা মিয়া জানায়, উঁচু বাঁধে কেউ নৌকা ভিরতে দেয় না। তাই নৌকা ভাসতে ভাসতে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে আলেম ঘাঘট নদীতে। এখন মাইজবাড়ির চরের আজাদ আলী, রাজ্জাক আলী, শাহজাহান, সুরুজ্জামান, খোকাসহ ৫ পরিবার নৌকায় বাস করছেন। নৌকায় খাওয়া নৌকায় নাওয়া একথা জানান, খোকা মিয়ার স্ত্রী কাচভান বেগম। খালি কষ্ট নোয়ায় বাবা। সারা দিন রাত নৌকার মদ্যে বসি থাকা কি কষ্ট তা না থাকলে বুঝবেন না। ৩টি নৌকায় ৫ পরিবারের ভেঙে নেয়া ঘরের বেড়া, টিনের চালা, আলনা, খাট। অপর নৌকায় পুরুষ মানুষ আর হাঁস-মুরগি গরু ছাগল। আর ৫ পরিবারের মহিলা ও শিশুরা একসঙ্গে রাত যাপন করছেন । সুরুজ্জামানের মা জোলেখা বেগম নৌকায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত। সারাদিন মলমূত্র ত্যাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। রাত হলে নদীর পারে নৌকা ভিড়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে।

রাজ্জাক আলীর কথা কোটে যামো বাহে। হামার তো জাওয়ার জায়গা নাই। সে কারণে হামরা ৫ পরিবার ৩ নৌকায় আশ্রয় নিয়ে কোনমতো ৫ দিন ধরে দিনরাত পাড়ি দিচ্ছি নৌকার মদ্যে। গাইবান্ধার নৌ-ঘাটের ঘাটুরেরা বলেন, ঘাটে থাকলে ভাড়া দিতে হবে। তাই নতুন ব্রিজ এলাকায় ঘাটে ১শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে নৌকা ভিড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের রিলিফের চাল ডালের দরকার নাই। নৌকায় চাল ডাল খড়ি সবিই আছে। শুধু নেই নিরাপত্তা, পায়খানা, খাবার পানি আর গবাদি পশুর খাবাব। মাইজবাড়ি চরের বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে ওঠায় ঘরবাড়ি নৌকায় তুলে নৌকায় রাত কাটাচ্ছেন এ ৫ পরিবারের ২৮ জন মানুষ।