ঢাকা , বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দার প্রায় ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি পানিতে ডুবে গেছে।

বন্যায় তিন উপজেলায় অন্তত দুই শতাধিক গ্রামে প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেড়শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। গ্রামীণ বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে থাকায় উপজেলা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার প্রধান নদী কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিতে পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।

বন্যায় কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়ন বড়খাপন, রংছাতি, লেঙ্গুরা, খারনৈ, নাজিরপুর, পোগলা, কৈলাটি ও সদর, দুর্গাপুরের গাওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, বাকলজোড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরির আংশিক এলাকা এবং বারহাট্টার রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে অন্তত ৫০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। স্কুল-মাদ্রাসায় পানি ঢুকছে।

কলমাকান্দার পাঁচগাও, লেঙ্গুরা, বড়খাপন, চারালকোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ বাজার পানির নিচে রয়েছে। এ ছাড়া বড়খাপন, চানপুর, ধিতপুর, পাঁচকাঠা, পালপাড়া, কলেজ রোডসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ পাকাসড়ক পানির নিচে থাকায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারে পানি প্রবেশ করে মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গাপুরে বিরিশিরি ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ১৯৬টি পরিবার ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কে ইন্দ্রপুর নামক স্থানে সেতু ও সড়ক ঝুঁকিতে আছে।

কলমাকান্দা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ১৫২টি বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় ১২টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে দুর্গাপুরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, ওই উপজেলার ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল খালেক তালুকদার বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কলামাকান্দায় দুই শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ওই এলাকার জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি।

দুর্গাপুর ইউএনও ফারজানা খানম বলেন, পাঁচটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। যাদের বসতঘরে পানি ঢুকছে তাদেরকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বারহাট্টার ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন জানান, রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে বেশ কিছু মানুষ পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের এমপি মানু মজুমদার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পারি ও ভাড়ি বর্ষণের কারণে দুই উপজেলায় বেশ কিছু গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সমস্ত গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য তিনি কাজ করছেন।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, সোমেশ্বরী, উব্দাখালি, কংশসহ কয়েকটি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কিছুটা ওপরে রয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে পানি কমে যাবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আপাতত ২০ মেকট্রিক টন জিআর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই দুই উপজেলায় ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে

আপডেট টাইম : ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দার প্রায় ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি পানিতে ডুবে গেছে।

বন্যায় তিন উপজেলায় অন্তত দুই শতাধিক গ্রামে প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেড়শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। গ্রামীণ বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে থাকায় উপজেলা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার প্রধান নদী কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিতে পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।

বন্যায় কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়ন বড়খাপন, রংছাতি, লেঙ্গুরা, খারনৈ, নাজিরপুর, পোগলা, কৈলাটি ও সদর, দুর্গাপুরের গাওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, বাকলজোড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরির আংশিক এলাকা এবং বারহাট্টার রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে অন্তত ৫০ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। স্কুল-মাদ্রাসায় পানি ঢুকছে।

কলমাকান্দার পাঁচগাও, লেঙ্গুরা, বড়খাপন, চারালকোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ বাজার পানির নিচে রয়েছে। এ ছাড়া বড়খাপন, চানপুর, ধিতপুর, পাঁচকাঠা, পালপাড়া, কলেজ রোডসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ পাকাসড়ক পানির নিচে থাকায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারে পানি প্রবেশ করে মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গাপুরে বিরিশিরি ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ১৯৬টি পরিবার ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কে ইন্দ্রপুর নামক স্থানে সেতু ও সড়ক ঝুঁকিতে আছে।

কলমাকান্দা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ১৫২টি বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় ১২টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে দুর্গাপুরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, ওই উপজেলার ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল খালেক তালুকদার বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কলামাকান্দায় দুই শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ওই এলাকার জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি।

দুর্গাপুর ইউএনও ফারজানা খানম বলেন, পাঁচটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। যাদের বসতঘরে পানি ঢুকছে তাদেরকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বারহাট্টার ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন জানান, রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে বেশ কিছু মানুষ পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের এমপি মানু মজুমদার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পারি ও ভাড়ি বর্ষণের কারণে দুই উপজেলায় বেশ কিছু গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সমস্ত গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য তিনি কাজ করছেন।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, সোমেশ্বরী, উব্দাখালি, কংশসহ কয়েকটি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কিছুটা ওপরে রয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে পানি কমে যাবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আপাতত ২০ মেকট্রিক টন জিআর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই দুই উপজেলায় ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।