ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে কোন্দল চরমে উঠেছে। দেশজুড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ‘নির্বাচনে পরাজিতরা এলাকা ছাড়া’ আগের জাতীয় নির্বাচনের এমন উদাহরণও যেন ইউপি নির্বাচনে ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ করেও অনেক নেতাকর্মী-সমর্থক এলাকা ছাড়া। প্রায় প্রতিদিনই দলটির নেতাকর্মীদের খুন-জখমের ঘটনা ঘটছে। হুমকি-ধমকি হয়রানিতে একপক্ষ আরেক পক্ষকে কোণঠাসা করে রেখেছে। ২২ মার্চ ও ৩১ মার্চ দুই ধাপে যেসব ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেছে সেগুলো নিয়ে সৃষ্ট বিরোধও মেটেনি। নির্বাচনের প্রায় এক মাস পরও বহু ইউনিয়নে সংঘর্ষ-প্রাণহানি ঘটছে। উপরন্তু সামনের নির্বাচনগুলোর মনোনয়ন দ্বন্দ্বে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে নেতাকর্মীরা। দলীয় গ্রুপিং এত দিন কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দেখা গেলেও এবারে তা প্রত্যন্ত গ্রামেও বিস্তৃত হয়েছে। ফলে স্বাধীনতার পর যেকোনো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হতাহতের সংখ্যা এবারে প্রথম দুই দফার নির্বাচনেই ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় সামনের নির্বাচন নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বও শঙ্কা প্রকাশ করে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন।
প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা বলেছিলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন শুরুর পর মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই যেন তৃণমূলে আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের কোন্দল বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেক নেতা। তাঁদের মতে, দলের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রের নমনীয় অবস্থানের কারণে তৃণমূলে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। কোন্দল নিরসনে শিগগিরই যদি কেন্দ্রের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া না হয় তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ৫৭ জন মারা গেছে ও পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে ৫৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায়। এরপর গত তিন দিনেও নির্বাচন নিয়ে বিরোধে খুন ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া সব হতাহতের ঘটনাই ঘটেছে ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মূলত চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের জেরেই তৃণমূলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বেশি। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়। মনোনয়ন বোর্ড এ প্রস্তাব ও একটি বিশেষ সংস্থার প্রতিবেদনকে বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করছে। কিন্তু অনেক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় এ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। অনেক স্থানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতারা নিজের অনুসারীকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে প্রভাব খাটিয়েছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত বিপুলসংখ্যক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় এক হাজার ৩০০ ইউনিয়নের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দখলের ব্যাপক অভিযোগ থাকার পরও দেড় শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। বহু ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও পরাজিত এসব প্রার্থী প্রতিপক্ষের ওপরে হামলা চালাচ্ছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়ী প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপরে হামলা চালাচ্ছেন, যা অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটে, ২০০৩ সালে ২৩ জনের এবং ২০১১ সালে ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয়ে জুলাইয়ে শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনে ১০ জন নিহত হয়। এর আগের নির্বাচনগুলোতেও সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা কমবেশি এ রকমই ছিল। এবারে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। অথচ এখনো তিন হাজারের বেশি ইউনিয়নে নির্বাচন বাকি রয়েছে। এই হারে সহিংসতা চলতে থাকলে হতাহতের সংখ্যা যে আরো অনেক বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই বলে
মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ইউপি নির্বাচনে এমন মাত্রার সহিংসতার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অন্যায় করলে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে অনেকেই উৎসাহিত হয়। আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনদের জন্য সাতখুন মাফ হয়ে যায়। অনেক সময় অন্যায়কারীরা পুরস্কৃতও হন। ফলে এ ধরনের নির্বাচনে সহিংসতা ঘটাতে কেউ দ্বিধা করছে না।’ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে সংঘাত এমন মাত্রা ছাড়া। আর দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছে ইউপিতে নির্বাচিত হওয়া মানে সরকারে থাকার ফায়দা লোটা। তাই সবাই এমন মরিয়া। এ অবস্থায় সহিংসতা অবশ্যম্ভাবী।
বিগত পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের সামাল দিতে নৈতিক অবস্থান অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহীদের পরবর্তী সময়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তাদের অস্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানিয়ে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না—এ মর্মে কারণ দর্শানো হয়। কিন্তু স্থায়ী বহিষ্কার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এমন নমনীয় অবস্থান ইউপি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছে দলটির নেতাকর্মীরা। ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, মাদারীপুর, গাজীপুর, ভোলা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আরো অনেক জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন খন্দকার খুন হন। সোমবার রাতে নড়াইলের বাওইসোনার চরকেকানিয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফোরকান মোল্লা ও বিদ্রোহী প্রার্থী চুন্নু শেখের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে তিন পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়।
রবিবার মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কোলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আসিফ হাসান মারা যান। তিনি ১২ এপ্রিল কোলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাসির উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। একই দিন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের দ্বীনবন্ধু হালদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ২২ মার্চ প্রথম দফার ভোটের রাতে ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শামসুল হক ফকিরের সমর্থকদের হামলায় আহত হন। ১২ এপ্রিল কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হুমায়ন কবির ও ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
জানা যায়, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৮ এপ্রিল নড়াইলের নড়াগাতি থানার জয়নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাউদ্দিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী আইয়ুবের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে আলাউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থক জয়নগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদ আলী নিহত হন এবং শহীদ আলীর সহোদর মনিরুলের পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করলেও তা নিরসনে কেন্দ্র ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
একই দিনে ঝিনাইদহের পদ্মাকর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজামুল গনি লিটু এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বিকাশ কুমারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বিকাশের সমর্থক আকামীর হোসেন নিহত হন। বর্তমানে এলাকায় দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
৩০ মার্চ খুলনার পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক শ মানুষ। তাদের অভিযোগ, প্রথম ধাপের নির্বাচনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নে নৌকা সমর্থক প্রার্থী আবদুল মান্নান গাজী পরাজিত হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচ শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর করে। জানা গেছে, ২২ মার্চ নির্বাচনের পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও সোলাদানায় মান্নান সমর্থক ও তাঁর বিরোধীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
জানা যায়, মাসখানেক আগে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চুন্নুর সমর্থক সমীর চারুকে কুপিয়ে হত্যা করে বিদ্রোহী প্রার্থী মজিবুর রহমানের কর্মীরা। এ ঘটনায় এখনো এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে ৯ মার্চ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আশ্রাফ ফকির, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সামসুল হক ফকির ও বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর উল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ঘটনার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও দুই পক্ষের দূরত্ব কমানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী যেকোনো মূল্যে জয়ী হওয়ার চেষ্টার কারণে সংঘর্ষ বাড়ছে। সরকারে থাকার সুবিধার অন্যায় ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে নৌকার প্রার্থীদের জয়ী করতে মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ১৭ এপ্রিল রবিবার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সানজিদা খাতুন নাসিমার নৌকা প্রতীকের পক্ষে কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক বলেন, ‘যদি বিজয়ী করতে না পারেন, আপনাদের কাউকে ছাড়ব না। কার পা ভাঙবেন কার হাত ভাঙবেন আমরা জানি না। নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে আনতে হবে। শেখ হাসিনার নৌকা মার্কা নিয়ে শুধু চুপ করে বসে থাকলে চলবে না, চা-এর দোকানে আড্ডা দিলে চলবে না। যদি নৌকাকে ভোট দিতে না পারেন, আগামী দিন এই ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য একটি টাকাও দেওয়া হবে না। কিভাবে আনবেন সেটা আপনারা জানেন। তবে যেভাবেই নৌকাকে বিজয়ী করেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি সেন্টারে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করুন। কোনো সেন্টার থেকে যদি নৌকা ফেল করে ওই ৫১ জনকে জিজ্ঞাসা করব। জানি না কী করবেন, সিল মারবেন, না কী করবেন, জানি না, এটা আপনাদের বিষয়। শুধু আমরা যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছি তাঁকে উঠাইয়া আনতে হবে। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে যেকোনো সহযোগিতা লাগলে দেব। সোজা কথা পাস চাই, আমার মনে হয় সকাল ১১টার আগে সেরে ফেললেই ভালো হয়। নির্বাচন বন্ধ হোক আপত্তি নাই, সকাল ১১টায় নির্বাচন শেষ করতে হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘প্রথম দুই ধাপে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা সংঘাত এড়িয়ে চলতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত মেম্বার প্রার্থীদের কারণেই সংঘাত বেশি হয়। এ জন্য দলের নেতাদের এ বিষয়টিতে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি নির্বাচন পরিচালনায় আরো কঠোর হতে। এতে সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে যে কোন্দল শুরু হয়েছে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না জানতে চাইলে স্বপন বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কিন্তু পরে তা ঠিক হয়ে গেছে। এবারের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোন্দল দেখা দিয়েছে তাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।’
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যা বলেন, ইউপিতে ভালো নির্বাচন হচ্ছে। তবে যতটুকু সহিংসতা হচ্ছে তা দলীয় নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হচ্ছে না বলেই হচ্ছে। তার অর্থ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে না। বিদ্রোহীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে এত বিদোহী যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।
মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তদন্ত কমিটি হবে জানিয়ে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মনোনয়ন যাঁরা পান না তাঁরা বলেন, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি রাজাকার বা টাকা দিয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন। ঢালাও এমন কথা বলা ঠিক নয়। তবে বিষয়গুলো আমরা দেখছি।’
ক্ষমতাসীন দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। আমরা তাদের বলব সহিংসতা দমনে ইসি যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আরো বেশি করে কাজে লাগায়।