বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শনিবার ২৩ জুন। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আমবাগানে অস্তমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। ১৯২ বছর পর ১৯৪৯ সালের এই দিনেই বাংলার মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত হয় উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। যদিও এর গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আরও আগে। ’৪৭-এর দেশ বিভাগ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন আর ৬৬’র ছয় দফা প্রণয়ন থেকে শুরু করে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর যুগান্তকারী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা সংগ্রাম সৃষ্টি করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বের ফসল। এই ভূ-খন্ডের কোটি কোটি মানুষের জন্য আওয়ামী লীগের যে কালজয়ী কৃতিত্ব তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। আমাদের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে থাকবেন জাতির পিতা।
গৌরব ও ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে আজ ৭০ বছরে পা দিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের হাতে গড়া আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এই বছরের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথম কাউন্সিলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হককে দলের যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তখন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কারাগারে বন্দি। বন্দি অবস্থায় তাকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে দেশের শত্রুরা সপরিবারে হত্যা করলে আওয়ামী লীগ আবার অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। দলটিকে সম্পূর্ণভাবে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে কারাগারে বন্দি জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে ঘটনাচক্রে বেঁচে যান। জেল হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়া। যেহেতু আওয়ামী লীগের গঠন, তার বেড়ে ওঠা একটি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল সেহেতু এই দল বারবার সংকটে পড়লেও রূপকথার সেই ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্বার জেগে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দলের ক্রান্তিকালে দলের হাল ধরেছিলেন বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, আবদুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতা। তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলেন। তবে তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন এই দলকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে বঙ্গবন্ধুর একজন উত্তরাধিকারের নেতৃত্ব অপরিহার্য। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের এক বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রবাসে নির্বাসন জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই বছর ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশের এক ক্রান্তিকালে দেশে ফেরেন, যখন দেশে জেনারেল জিয়া সব প্রতিপক্ষকে দমন করে একজন একনায়কের মতো দেশ শাসন করছেন। কাকতালীয়ভাবে ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে জিয়া বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হন।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৯১ সালে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্রের জাঁতাকলে পড়ে সংসদে বিরোধী দলে বসতে বাধ্য হয়। এটি ছিল শেখ হাসিনার প্রথমবারের মতো পিতার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সংসদে প্রবেশ। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পায়। খুব কম দেশেই একটি দল ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে ক্ষমতায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্রুততার কারণে। বর্তমানে তিনি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, বিশ্বেও একজন স্বীকৃত রাষ্ট্রনায়ক, যাঁর কাছ থেকে বিশ্বের অন্যান্য নেতা শিখতে চান অনেক কিছু।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভা:
এবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন কিছু মাত্রা যোগ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নবনির্মিত দলের ১০তলা ভবন উদ্বোধন করা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ভবনের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া এদিন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভা থেকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের বিশেষ দিকনির্দেশনা দেবেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের করণীয় কি হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ফলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যেও নড়াচড়া শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। নির্বাচন সামনে রেখেই আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার আহ্বান করা হয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কোনো দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে সাধারণত বিশেষ জরুরি সভার আয়োজন করা হয়।
এছাড়া এ সভায় সরকারের উন্নয়ন প্রচার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং বিগত সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনামূলক উন্নয়ন চিত্র তুলে নৌকার পক্ষে ব্যাপক জনমত গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, এই সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় কমিটির সদস্য, জেলা/মহানগর, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্যরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ+মহিলা), সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র, সব মহানগরের অন্তর্গত প্রতিটি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সব সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন। সভায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসমূহ জনসম্মুখে তুলে ধরা, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং বিগত সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনামূলক উন্নয়ন চিত্র তুলে নৌকার পক্ষে ব্যাপক জনমত গঠনের নির্দেশনাও দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পরে এটিই হলো দ্বিতীয় বিশেষ বর্ধিত সভা। এর আগে গত বছর ২০ মে গণভবনে আরেকটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।