সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী বছর হজে যেতে ইচ্ছুকদের চলছে নিবন্ধন কার্যক্রম। কিন্তু এবার সাড়া খুবই কম। ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এই নিবন্ধন কার্যক্রম।
হজ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ দিনে ৬০৭ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন, যা মোট আসনের শতকরা হিসাবে মাত্র দশমিক ৪৭ শতাংশ আসন পূরণ হয়েছে। ৬০৭ জনের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২২৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৮৪ জন নিবন্ধন করেন।
গত বছর নিবন্ধন শুরুর প্রথম ২১ দিনেই ৩৩ হাজার ৭৮ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছিলেন। ওই বছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলে। দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ৫ হাজার আসন শূন্য ছিল।
জানা যায়, হজ প্যাকেজের খরচ বেশি হওয়ায় গত বছরও হজ যাত্রীদের সাড়া মেলেনি। এবারও প্রায় একই দশা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়সীমা পরে বাড়ানো হতে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
হজে যেতে ইচ্ছুক একাধিক হজযাত্রী যুগান্তরকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা অনেক বেশি। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবকে (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এই প্যাকেজের অর্থ কমাতে হবে। নচেৎ গত বছরের মতো এ বছরও হজ ফ্লাইট খালি যাবে।
হজে যেতে ইচ্ছুক মো. আহসানুল আলম যুগান্তরকে বলেন, আমরা গত বছরই সপরিবারে হজে যেতে নিবন্ধন করেছিলাম। কিন্তু হজ প্যাকেজ বেশি হওয়ায় যেতে পারিনি। এ বছরও ইচ্ছে আছে যাওয়ার। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও যেভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে এ বছরও যেতে পারব কি না আল্লাহ জানেন। তিনি হজ প্যাকেজের মূল্য আরও অন্তত ১ লাখ টাকা কমানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে আগামী বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি কোটায় ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। গতবারের তুলনায় এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার আসন বেশি নিবন্ধন করার সুযোগ থাকছে।
এবার সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ হবে। বিশেষ হজ প্যাকেজের ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা খরচ হবে। অপরদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। প্রথম প্যাকেজের (সাধারণ) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। নিবন্ধনের জন্য হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে।
২০২৩ সালে যারা হজ করেছেন তাদের নিবন্ধন শুরু হয়েছিল ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২১ দিনে মোট নিবন্ধন করেছিলেন ৩৩ হাজার ৭৮ জন। এতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছিলেন ৭ হাজার ৪২০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৫ হাজার ৬৫৮ জন। নিবন্ধন শুরুর প্রথম ২১ দিনে ২৬ শতাংশ কোটা পূরণ হয়েছিল। গত হজের চুক্তির কোটা অনুযায়ী আসন ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।
হজ অধিশাখা যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক যুগান্তরকে বলেন, আমরা অন্যান্যবারের তুলনায় এবার হজের নিবন্ধন অনেক আগ থেকে শুরু করেছি। নিবন্ধনের সংখ্যা নিয়ে এখনো চিন্তিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আশা করি যথাসময়ে আসন পূরণ হয়ে যাবে। হজযাত্রীদের দাবি অনুযায়ী হজের খরচ কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা মুশকিল।