ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামে বিজয় উদযাপন

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।বাঙালীর জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্যমণ্ডিত একটি দিন।কারণ এ দিনেই দেশের আকাশে বিজয়ের রক্তিম সূর্য উদিত হয়েছে। জাতি তাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ফিরে পেয়েছে।পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে।

আল্লাহ প্রদত্ত এ বিজয় দিবসে আমাদের করণীয় কী? কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ বিজয় দিবস আমরা কীভাবে পালন করব; এ বিষয়ে কিছু করণীয় নিচে উল্লেখ করা হল।

১. এই দিনে বিজয়ের জন্য আল্লাহর মহত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা।

২. বিজয়ের আনন্দে বেশি বেশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।

৩. যুদ্ধের সময় যেসব ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদের ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রশংসার সঙ্গে তাসবিহ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন।’ (সুরা নাসর, ১-৩)

৪. বিনয় প্রদর্শন করা: বিজয়ে অহংকার নয় বরং বিনয় প্রদর্শনই নবিজির শিক্ষা। দীর্ঘ ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি গর্ব-অহংকার করেননি। বরং একটি উষ্ট্রীর ওপর আরোহণ করে নিম্নগামী চেহারায় খুব বিনয়ের সঙ্গে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন।

৫.নামাজ আদায় করা: আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা (বিজয়) দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দান করবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে।’(সুরা হজ, আয়াত :২২)

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, দীর্ঘ একটি হাদিসে এসেছে, মক্কায় পৌঁছার পর নবি কারিম (সা.) কাবাগৃহে প্রবেশ করে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন, নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৮)

৬.ক্ষমা করে দেওয়া: মক্কা বিজয়ের পর নবি কারিম (সা.) কুরাইশ সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের সঙ্গে আজ আমি কেমন আচরণ করব বলে মনে করো? সকলেই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতে লাগল- আমরা আপনার কাছ থেকে খুব ভাল আচরণ কামনা করছি।

তিনি বললেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের ঘরে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ থাকবে।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ৪০৫, ৪০১)

৭. যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের জন্য দোয়া- ইস্তেগফার ও ইসালে সওয়াব করা। ইরশাদ হয়েছে, যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয় না’। (তিরমিজি:১৯৫৫)

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখেন।

দেশের তরে যারা জীবন দিয়েছেন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্ত করার জন্য যারা প্রাণপণ লড়াই করেছেন আল্লাহ যেন সবাইকে শহীদি মর্যাদা দান করেন।

আর আমরা যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং শান্তিময় ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত ও আদর্শ দেশ গঠনে শপথ নিতে পারি। আল্লাহপাক আমাদের তাওফিক দিন, আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামে বিজয় উদযাপন

আপডেট টাইম : ০৬:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।বাঙালীর জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্যমণ্ডিত একটি দিন।কারণ এ দিনেই দেশের আকাশে বিজয়ের রক্তিম সূর্য উদিত হয়েছে। জাতি তাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ফিরে পেয়েছে।পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে।

আল্লাহ প্রদত্ত এ বিজয় দিবসে আমাদের করণীয় কী? কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ বিজয় দিবস আমরা কীভাবে পালন করব; এ বিষয়ে কিছু করণীয় নিচে উল্লেখ করা হল।

১. এই দিনে বিজয়ের জন্য আল্লাহর মহত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা।

২. বিজয়ের আনন্দে বেশি বেশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।

৩. যুদ্ধের সময় যেসব ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদের ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রশংসার সঙ্গে তাসবিহ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন।’ (সুরা নাসর, ১-৩)

৪. বিনয় প্রদর্শন করা: বিজয়ে অহংকার নয় বরং বিনয় প্রদর্শনই নবিজির শিক্ষা। দীর্ঘ ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি গর্ব-অহংকার করেননি। বরং একটি উষ্ট্রীর ওপর আরোহণ করে নিম্নগামী চেহারায় খুব বিনয়ের সঙ্গে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন।

৫.নামাজ আদায় করা: আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা (বিজয়) দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দান করবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে।’(সুরা হজ, আয়াত :২২)

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, দীর্ঘ একটি হাদিসে এসেছে, মক্কায় পৌঁছার পর নবি কারিম (সা.) কাবাগৃহে প্রবেশ করে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন, নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৮)

৬.ক্ষমা করে দেওয়া: মক্কা বিজয়ের পর নবি কারিম (সা.) কুরাইশ সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমাদের সঙ্গে আজ আমি কেমন আচরণ করব বলে মনে করো? সকলেই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতে লাগল- আমরা আপনার কাছ থেকে খুব ভাল আচরণ কামনা করছি।

তিনি বললেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের ঘরে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ থাকবে।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ৪০৫, ৪০১)

৭. যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের জন্য দোয়া- ইস্তেগফার ও ইসালে সওয়াব করা। ইরশাদ হয়েছে, যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয় না’। (তিরমিজি:১৯৫৫)

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখেন।

দেশের তরে যারা জীবন দিয়েছেন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্ত করার জন্য যারা প্রাণপণ লড়াই করেছেন আল্লাহ যেন সবাইকে শহীদি মর্যাদা দান করেন।

আর আমরা যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং শান্তিময় ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত ও আদর্শ দেশ গঠনে শপথ নিতে পারি। আল্লাহপাক আমাদের তাওফিক দিন, আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।