ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপচয়কারী শয়তানের ভাই

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  অপচয়। আরবিতে বলে ‘ইসরাফ’। বৈধ কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাকে অপচয় বলে। এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালা যা কিছু হালাল করে দিয়েছেন, তা প্রয়োজনের তাগিদে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ভক্ষণ করতে হবে। তার বেশি গ্রহণ করা সমীচীন নয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানাহার করা আবশ্যক। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ পানাহার বর্জন করে, ফলে মৃত্যুমুখের যাত্রী হলে বা দুর্বল হয়ে পড়লে, যাতে ফরজ কাজ সম্পাদন করতে অক্ষম হয়, তাহলে সে পাপী হবে। আবার ক্ষুধা ও প্রয়োজনের চাহিদার বেশি পানাহার ইসরাফের মধ্যে গণ্য।
অপচয় করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বরং আল্লাহ তায়ালা অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। অপচয় ছাড়া পানাহার বা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে কোনো অপরাধ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আল আ’রাফ : ৩১)। অপচয় ছাড়া সব কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছে। অপচয় দারিদ্র্য আনে, আর দারিদ্র্য মানুষকে কুফরির দিকে ধাবিত করে। তাই অপচয় নয়, নয় কৃপণতা। যারা অপচয় এবং কৃপণতা করে না, তাদের আল্লাহ তায়ালা রহমানের বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। এদের গুণাবলির একটি হলো আল্লাহ পাকের বাণী, ‘এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না। আর কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সূরা আল ফুরকান : ৬৭)। কাজেই আমাদের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে চলতে হবে। সর্বদা অপচয় বর্জন করতে হবে। আর অপচয় বর্জন করাই প্রকৃত মুসলমানের কাজ। অপচয় কখনো মুসলমানের কাম্য নয়। অপচয় রোধ করে সমাজ জাতির কল্যাণে এগিয়ে এলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজতর হবে।
মহান রাব্বুল আলামিন অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই উল্লেখ করে অপচয় না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা আল ইসরা : ২৬, ২৭)। অপচয়কারী কারও প্রিয় হতে পারে না। কেননা শয়তান মানবজাতির বন্ধু নয়, শত্রু। আর শত্রু কখনো প্রিয় হয় না। আর অপচয়কারী তো শয়তানেরই ভাই।
খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘বেশি পানাহার থেকে বেঁচে থাক। কারণ অধিক পানাহার দেহ ও শরীরকে নষ্ট করে দেয়, রোগের জন্ম দেয় এবং কাজে অলসতা সৃষ্টি করে। পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। এটা দৈহিক সুস্থতার পক্ষে উপকারী এবং অপব্যয় থেকে দূরবর্তী।’ (রুহুল মা’য়ানি)।
আমাদের জীবনে খানাপিনা, সাজসজ্জা, বিয়ে-শাদি, সর্বত্রই অপচয় হচ্ছে। বিয়ে করতে আমরা হেলিকপ্টারে চড়ে যেতে দ্বিধাবোধ করি না। কেনাকাটায় আমরা কোনো অংশে কম করি না। অথচ আমাদের প্রতিবেশীরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন-রাত অতিবাহিত করছে। কাপড়বিহীন বা ছেঁড়া কাপড়ে তারা জীবনের ঘানি টানে। এতে আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই। অপচয়ের মাধ্যমে আমরা যেভাবে সম্পদ নষ্ট করছি, সেভাবে পাপকে গ্রহণ করছি সাদরে। তা কি আমরা উপলব্ধি করছি? আমরা যদি আমাদের চাহিদা মিটিয়ে মিতব্যয়ী হতে চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের সমাজে শয়তানের ভাইদের সংখ্যা কমে যাবে। আমরা কি অপচয় রোধ করে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারি না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

অপচয়কারী শয়তানের ভাই

আপডেট টাইম : ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  অপচয়। আরবিতে বলে ‘ইসরাফ’। বৈধ কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাকে অপচয় বলে। এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালা যা কিছু হালাল করে দিয়েছেন, তা প্রয়োজনের তাগিদে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ভক্ষণ করতে হবে। তার বেশি গ্রহণ করা সমীচীন নয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানাহার করা আবশ্যক। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ পানাহার বর্জন করে, ফলে মৃত্যুমুখের যাত্রী হলে বা দুর্বল হয়ে পড়লে, যাতে ফরজ কাজ সম্পাদন করতে অক্ষম হয়, তাহলে সে পাপী হবে। আবার ক্ষুধা ও প্রয়োজনের চাহিদার বেশি পানাহার ইসরাফের মধ্যে গণ্য।
অপচয় করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বরং আল্লাহ তায়ালা অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। অপচয় ছাড়া পানাহার বা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে কোনো অপরাধ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আল আ’রাফ : ৩১)। অপচয় ছাড়া সব কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছে। অপচয় দারিদ্র্য আনে, আর দারিদ্র্য মানুষকে কুফরির দিকে ধাবিত করে। তাই অপচয় নয়, নয় কৃপণতা। যারা অপচয় এবং কৃপণতা করে না, তাদের আল্লাহ তায়ালা রহমানের বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। এদের গুণাবলির একটি হলো আল্লাহ পাকের বাণী, ‘এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না। আর কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সূরা আল ফুরকান : ৬৭)। কাজেই আমাদের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে চলতে হবে। সর্বদা অপচয় বর্জন করতে হবে। আর অপচয় বর্জন করাই প্রকৃত মুসলমানের কাজ। অপচয় কখনো মুসলমানের কাম্য নয়। অপচয় রোধ করে সমাজ জাতির কল্যাণে এগিয়ে এলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজতর হবে।
মহান রাব্বুল আলামিন অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই উল্লেখ করে অপচয় না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা আল ইসরা : ২৬, ২৭)। অপচয়কারী কারও প্রিয় হতে পারে না। কেননা শয়তান মানবজাতির বন্ধু নয়, শত্রু। আর শত্রু কখনো প্রিয় হয় না। আর অপচয়কারী তো শয়তানেরই ভাই।
খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘বেশি পানাহার থেকে বেঁচে থাক। কারণ অধিক পানাহার দেহ ও শরীরকে নষ্ট করে দেয়, রোগের জন্ম দেয় এবং কাজে অলসতা সৃষ্টি করে। পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। এটা দৈহিক সুস্থতার পক্ষে উপকারী এবং অপব্যয় থেকে দূরবর্তী।’ (রুহুল মা’য়ানি)।
আমাদের জীবনে খানাপিনা, সাজসজ্জা, বিয়ে-শাদি, সর্বত্রই অপচয় হচ্ছে। বিয়ে করতে আমরা হেলিকপ্টারে চড়ে যেতে দ্বিধাবোধ করি না। কেনাকাটায় আমরা কোনো অংশে কম করি না। অথচ আমাদের প্রতিবেশীরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন-রাত অতিবাহিত করছে। কাপড়বিহীন বা ছেঁড়া কাপড়ে তারা জীবনের ঘানি টানে। এতে আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই। অপচয়ের মাধ্যমে আমরা যেভাবে সম্পদ নষ্ট করছি, সেভাবে পাপকে গ্রহণ করছি সাদরে। তা কি আমরা উপলব্ধি করছি? আমরা যদি আমাদের চাহিদা মিটিয়ে মিতব্যয়ী হতে চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের সমাজে শয়তানের ভাইদের সংখ্যা কমে যাবে। আমরা কি অপচয় রোধ করে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারি না।