একজন মুমিনের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারে আলাদা আলাদা গুরুত্ব কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে ফজরের নামাজের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ ফজর গাফিলতির সময়।
মানুষ কষ্ট করে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে। এ জন্য ফজরের ফজিলতও অন্য নামাজের তুলনায় অনেক বেশি।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে কিছু জিনিসের কসম করেছেন। তিনি যেসব জিনিসের কসম করেছেন, নিশ্চয়ই সেগুলো তাঁর কাছে দামি।
তিনি কোরআন মাজিদে ফজরের নামাজের কসম করেছেন—‘কসম ফজরের সময়ের। ’ (সুরা : ফাজর, আয়া : ১)
ফজরের তিলাওয়াত নিয়েও কোরআনে আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘ফজরের সময় কোরআন তিলাওয়াতে যত্নবান থাকুন। স্মরণ রাখুন, ফজরের তিলাওয়াতে সমাবেশ ঘটে থাকে। ’ (সুরা : ইসরা/বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)
হাদিস শরিফে ফজরের নামাজের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করল, সে যেন সারা রাত নামাজ আদায় করল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
একজন মুমিনের জন্য কত ফজিলতপূর্ণ এটা! সারা রাত ঘুমিয়ে থেকেও শুধু ফজরের সময় উঠে জামাতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যাচ্ছে! এই ফজিলত জানার পরে কেউ তো ফজরের জামাত ইচ্ছাকৃত ছাড়তে পারে না। আরেক হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, কেউ যদি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর জিম্মায় চলে যাওয়ার অর্থ হলো আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তা ও আশ্রয়ে থাকা। ’
ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়ার সবচেয়ে দামি জিনিস। মহানবী (সা.) বলেন, ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, সব কিছু থেকে উত্তম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৫)
দুনিয়ার বিবেচনায় আমরা দেখি, যার পুরস্কার যত বড়, তার জন্য কষ্টও তত বেশি। আর পুরস্কারের আশায় বেশি কষ্ট করতেও আমরা প্রস্তুত হয়ে যাই। ফজরের নামাজে ফজিলত যেমন বেশি, তার জন্য কষ্টও একটু বেশি। ঘুম থেকে উঠে নামাজে যাওয়া একটু কষ্টকর, কিন্তু দুনিয়া ও আখিরাতে যে বিশাল ফজিলত এই নামাজের, তার তুলনায় কষ্টটা একেবারে নস্যি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। আর (আল্লাহর জন্য) বিনীতরা ছাড়া অন্যদের কাছে তা নিশ্চিতভাবে কঠিন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)