ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাধিক বি‌য়ে করা কি সুন্নাহ

এ প্রশ্নের জবাবের পূ‌র্বে ঠিক করতে হ‌বে, প্রথম বি‌য়ে করা কি সুন্নাহ? জিনা হারাম। ‌এর বিপরী‌তে বি‌য়ে হালাল। কিন্তু ব‌্যক্তির অবস্থা‌ভে‌দে শরীয়‌তে এই হালাল বি‌য়েই নানা বিধা‌নে বিভক্ত হ‌য়ে যায়।

১. যে ব‌্যক্তি শারী‌রিকভা‌বে অক্ষম, অথবা অসচ্ছল স্ত্রীর ব‌্যয়ভারবহ‌নে অক্ষম, অথবা স্ত্রীর প্রতি জুলম করা যার নি‌শ্চিত, এ ব‌্যক্তির বি‌য়ে করা হারাম।
২. যে ব‌্যক্তি স্ত্রীর হক নষ্ট করার প্রবল ধারণা র‌য়ে‌ছে, তার প‌ক্ষে বি‌য়ে করা মাকরূহে তাহরী‌মী।
৩. যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে জিনায় লিপ্ত হ‌য়ে যাওয়া নিশ্চিত, জিনার উপকরণ সুলভ হওয়ার কার‌ণে, সে ব‌্যক্তির বি‌য়ে করা ফরজ। অনুরূপভা‌বে যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে সমকা‌মিতা, হস্তমৈথুন বা গোপন গুনায় লিপ্ত হওয়া নি‌শ্চিত, তার জন‌্য বি‌য়ে করা ফরজ।

৪. যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে উপরোক্ত গুনাহগু‌লোতে প‌ড়ে যাওয়া নি‌শ্চিত না-হ‌লেও প্রবল আশঙ্কা র‌য়ে‌ছে, তার জন‌্য বি‌য়ে করা ওয়া‌জিব।

৫. যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে উপ‌রোক্ত ৪দি‌কের কো‌নো ‌দি‌কেই ঝুঁকি নেই, বরং তার অবস্থা ভারসাম‌্যপূর্ণ হয়, বি‌য়ে কর‌লে না জুল‌মের ভয় আছে, না শা‌রিরীক অক্ষমতা আছে, বি‌য়ে না-কর‌লে না ‌জিনার ভয় আছে, না গুনাহর আশঙ্কা আছে; এমন ব‌্যক্তির জন‌্য বি‌য়ে করা সুন্নাহ।

কারণ, নবী‌জি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বি‌য়ে ক‌রে‌ছেন এবং বি‌য়ে কর‌তে উৎসা‌হিত ক‌রে‌ছেন। নবী‌জির (সা.) বি‌য়ে কো‌নো ঝুঁকির কার‌ণে ছিল না। বরং তি‌নি সব গুনাহ ও তার ঝুঁকি থে‌কে পাক ছি‌লেন।
.
মাসনা সুলাসার বিধানও ত‌থৈবচ।

এক বি‌য়ে করার প‌রে য‌দি তার যৌনচা‌হিদা প্রবল থে‌কে যায়, যদ্দরুণ তার জিনা, লা‌ওয়া‌ত (সমকামীতা) বা কো‌নো গুনাহয় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা র‌য়ে‌ছে এবং সে সচ্ছল হয়, তার জন‌্য দ্বিতীয় বি‌য়ে ফরজ বা ওয়া‌জিব হ‌বে।  এক্ষে‌ত্রে ২য় ৩য় বি‌য়ে‌তে ১ম স্ত্রী বা তার সন্তা‌নেরা বাধা দেওয়ার অধিকার রা‌খে না।

য‌দি ২য় বি‌য়ে কর‌লে সেই স্ত্রী বা ১ম স্ত্রীর হক আদা‌য়ে অক্ষম হয়, বা তা‌দের ভরণ‌পোষ‌ণে অক্ষম হয় এবং স্ত্রী-সন্তা‌নের প্রতি জোর-জুলু‌মের আশঙ্কা ক‌রে, তার জন‌্য ২য়, ৩য় বি‌য়ে করা হারাম বা মাকরূহ বি‌বে‌চিত হ‌বে।

৬. য‌দি উভয়ধারার কো‌নো ঝুঁকি না থা‌কে, তার জন‌্য ২য় বি‌য়ে করা মুবাহ বা জা‌য়িজ। যে‌হেতু এক‌বি‌য়ে করার দ্বারা নবী‌জি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‌কে অনুসর‌ণের সুন্নাহ আদায় হ‌য়ে গে‌ছে, এবং তার প্রয়োজন পূরণ হ‌য়ে গে‌ছে, সে‌হেতু ২য় বি‌য়ে করা তার জন‌্য সুন্নাহ থাকেনি; বরং মুবাহ বা জা‌য়িয পর্যা‌য়েই থাক‌বে। বি‌য়ে করা, না-করা উভয়টা সমান।

৭. সাম‌গ্রিকভা‌বে প্রত্যেক মানব‌গো‌ষ্ঠির কিছু‌লোক বি‌য়ে করা এবং বংশ‌বিস্তার করা ফর‌যে কেফায়াহ, যখন কো‌নো দি‌কের কো‌নো ঝুঁকি না থা‌কে।

‘একা‌ধিক বিয়ে করা সুন্নাহ’- এমন কথায় ফিক‌হের দৃ‌ষ্টি‌তে আপ‌ত্তি আছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা র‌য়ে‌ছে। ঝুঁকিমুক্ত সামর্থবান‌দের জন‌্য দ্বিতীয়-তৃতীয় বিয়ে করা স‌র্বোচ্চ জা‌য়েজ, সুন্নাহ নয়।

ত‌বে এমন ব‌্যক্তির একা‌ধিক বি‌য়ে‌তে আপ‌ত্তি করা, কিংবা তা‌কে তিরস্কার করা, তা‌কে নি‌য়ে হাসাহা‌সি করা নাজা‌য়েয ও হারাম।

আল্লাহ তায়ালা ব‌লেন,  (সফলকাম ওইসব মু‌মিন) যারা নি‌জে‌দের লজ্জাস্থান সংযত রা‌খে। ত‌বে নি‌জে‌দের স্ত্রী ও দাসী‌দের ক্ষে‌ত্রে নয়। এক্ষে‌ত্রে তারা তিরস্কৃত হ‌বে না। (সূরা মু‌মিনুন : ৫-৬)

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

একাধিক বি‌য়ে করা কি সুন্নাহ

আপডেট টাইম : ১২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

এ প্রশ্নের জবাবের পূ‌র্বে ঠিক করতে হ‌বে, প্রথম বি‌য়ে করা কি সুন্নাহ? জিনা হারাম। ‌এর বিপরী‌তে বি‌য়ে হালাল। কিন্তু ব‌্যক্তির অবস্থা‌ভে‌দে শরীয়‌তে এই হালাল বি‌য়েই নানা বিধা‌নে বিভক্ত হ‌য়ে যায়।

১. যে ব‌্যক্তি শারী‌রিকভা‌বে অক্ষম, অথবা অসচ্ছল স্ত্রীর ব‌্যয়ভারবহ‌নে অক্ষম, অথবা স্ত্রীর প্রতি জুলম করা যার নি‌শ্চিত, এ ব‌্যক্তির বি‌য়ে করা হারাম।
২. যে ব‌্যক্তি স্ত্রীর হক নষ্ট করার প্রবল ধারণা র‌য়ে‌ছে, তার প‌ক্ষে বি‌য়ে করা মাকরূহে তাহরী‌মী।
৩. যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে জিনায় লিপ্ত হ‌য়ে যাওয়া নিশ্চিত, জিনার উপকরণ সুলভ হওয়ার কার‌ণে, সে ব‌্যক্তির বি‌য়ে করা ফরজ। অনুরূপভা‌বে যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে সমকা‌মিতা, হস্তমৈথুন বা গোপন গুনায় লিপ্ত হওয়া নি‌শ্চিত, তার জন‌্য বি‌য়ে করা ফরজ।

৪. যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে উপরোক্ত গুনাহগু‌লোতে প‌ড়ে যাওয়া নি‌শ্চিত না-হ‌লেও প্রবল আশঙ্কা র‌য়ে‌ছে, তার জন‌্য বি‌য়ে করা ওয়া‌জিব।

৫. যে ব‌্যক্তি বি‌য়ে না কর‌লে উপ‌রোক্ত ৪দি‌কের কো‌নো ‌দি‌কেই ঝুঁকি নেই, বরং তার অবস্থা ভারসাম‌্যপূর্ণ হয়, বি‌য়ে কর‌লে না জুল‌মের ভয় আছে, না শা‌রিরীক অক্ষমতা আছে, বি‌য়ে না-কর‌লে না ‌জিনার ভয় আছে, না গুনাহর আশঙ্কা আছে; এমন ব‌্যক্তির জন‌্য বি‌য়ে করা সুন্নাহ।

কারণ, নবী‌জি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বি‌য়ে ক‌রে‌ছেন এবং বি‌য়ে কর‌তে উৎসা‌হিত ক‌রে‌ছেন। নবী‌জির (সা.) বি‌য়ে কো‌নো ঝুঁকির কার‌ণে ছিল না। বরং তি‌নি সব গুনাহ ও তার ঝুঁকি থে‌কে পাক ছি‌লেন।
.
মাসনা সুলাসার বিধানও ত‌থৈবচ।

এক বি‌য়ে করার প‌রে য‌দি তার যৌনচা‌হিদা প্রবল থে‌কে যায়, যদ্দরুণ তার জিনা, লা‌ওয়া‌ত (সমকামীতা) বা কো‌নো গুনাহয় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা র‌য়ে‌ছে এবং সে সচ্ছল হয়, তার জন‌্য দ্বিতীয় বি‌য়ে ফরজ বা ওয়া‌জিব হ‌বে।  এক্ষে‌ত্রে ২য় ৩য় বি‌য়ে‌তে ১ম স্ত্রী বা তার সন্তা‌নেরা বাধা দেওয়ার অধিকার রা‌খে না।

য‌দি ২য় বি‌য়ে কর‌লে সেই স্ত্রী বা ১ম স্ত্রীর হক আদা‌য়ে অক্ষম হয়, বা তা‌দের ভরণ‌পোষ‌ণে অক্ষম হয় এবং স্ত্রী-সন্তা‌নের প্রতি জোর-জুলু‌মের আশঙ্কা ক‌রে, তার জন‌্য ২য়, ৩য় বি‌য়ে করা হারাম বা মাকরূহ বি‌বে‌চিত হ‌বে।

৬. য‌দি উভয়ধারার কো‌নো ঝুঁকি না থা‌কে, তার জন‌্য ২য় বি‌য়ে করা মুবাহ বা জা‌য়িজ। যে‌হেতু এক‌বি‌য়ে করার দ্বারা নবী‌জি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‌কে অনুসর‌ণের সুন্নাহ আদায় হ‌য়ে গে‌ছে, এবং তার প্রয়োজন পূরণ হ‌য়ে গে‌ছে, সে‌হেতু ২য় বি‌য়ে করা তার জন‌্য সুন্নাহ থাকেনি; বরং মুবাহ বা জা‌য়িয পর্যা‌য়েই থাক‌বে। বি‌য়ে করা, না-করা উভয়টা সমান।

৭. সাম‌গ্রিকভা‌বে প্রত্যেক মানব‌গো‌ষ্ঠির কিছু‌লোক বি‌য়ে করা এবং বংশ‌বিস্তার করা ফর‌যে কেফায়াহ, যখন কো‌নো দি‌কের কো‌নো ঝুঁকি না থা‌কে।

‘একা‌ধিক বিয়ে করা সুন্নাহ’- এমন কথায় ফিক‌হের দৃ‌ষ্টি‌তে আপ‌ত্তি আছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা র‌য়ে‌ছে। ঝুঁকিমুক্ত সামর্থবান‌দের জন‌্য দ্বিতীয়-তৃতীয় বিয়ে করা স‌র্বোচ্চ জা‌য়েজ, সুন্নাহ নয়।

ত‌বে এমন ব‌্যক্তির একা‌ধিক বি‌য়ে‌তে আপ‌ত্তি করা, কিংবা তা‌কে তিরস্কার করা, তা‌কে নি‌য়ে হাসাহা‌সি করা নাজা‌য়েয ও হারাম।

আল্লাহ তায়ালা ব‌লেন,  (সফলকাম ওইসব মু‌মিন) যারা নি‌জে‌দের লজ্জাস্থান সংযত রা‌খে। ত‌বে নি‌জে‌দের স্ত্রী ও দাসী‌দের ক্ষে‌ত্রে নয়। এক্ষে‌ত্রে তারা তিরস্কৃত হ‌বে না। (সূরা মু‌মিনুন : ৫-৬)