দ্বিতীয়ত, অসুস্থ অন্তরের অধিকারী কোরআন থেকে উপকৃত হতে পারে না।
তৃতীয়ত, উদাসীনতা ও অহেতুক জিনিসে মত্ত থাকা।
নিয়মিত কোরআন পাঠ
কোরআনকে নিজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিতে হবে। এমন যেন হয় যে কোরআন শরিফ না পড়লে মনের ভেতর এক ধরনের হাহাকার কাজ করে, অশান্তি বিরাজ করে। নতুন করে ওয়াদাবদ্ধ হতে হবে যে আমি এখন থেকে শুদ্ধভাবে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করব।
কোরআনের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্কটা হতে হবে ভালোবাসা ও মহব্বতের। এ জন্য কোরআন পড়ার সময় তাড়াহুড়া না করে ধীরে পড়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং ধীরস্থিরভাবে স্পষ্টরূপে কোরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)
উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত করা
একেবারে মনে মনে তিলাওয়াত না করে একটু উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত করা। এটি মৃত হৃদয়কে জাগ্রত করতে সহযোগিতা করে। কুরাইব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা.)-এর নিকট রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের কিরাত পাঠের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কোঠার মধ্যে এমনভাবে কোরআন পাঠ করতেন যে কোনো মুখস্থকারী তা শুনে মুখস্থ করতে চাইলে তা করতে পারত। [আখলাকুন্নবী (সা.), হাদিস : ৫৬১]
কোরআনের মর্ম ও অর্থ বোঝার চেষ্টা করা
কোরআনের অর্থ বোঝা এবং তাতে চিন্তা ফিকির করা। এর দ্বারা অন্তরে আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব ও ভালোবাসা এবং পরকালের ফিকির তৈরি হবে। এ জন্য সাধারণ মানুষের উচিত কোনো আলেমের তত্ত্বাবধানে কোরআন বোঝার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল!) এটি এক বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতের মধ্যে চিন্তা করে এবং যাতে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ২৯)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি ১০ আয়াত শিখতেন তাহলে তিনি আর সামনে অগ্রসর হতেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ১০ আয়াতের অর্থ না শিখতেন এবং সে অনুযায়ী আমল না করতেন। (তাবারি)
কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করা
কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সুরায় আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী উম্মতের ঘটনা, উপমা ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন। এসব ঘটনা আল্লাহ তাআলা এ জন্যই বর্ণনা করেছেন, যাতে মানুষ এখান থেকে শিক্ষা লাভ করে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ (এজাতীয়) দৃষ্টান্ত দেন, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৫)
নিজেকে সম্বোধন করে তিলাওয়াত করা
কোরআন তিলাওয়াতের সময় মনের মধ্যে এই ভাব জাগ্রত করা যে আল্লাহ তাআলা আমাকে সম্বোধন করে এই আয়াত নাজিল করেছেন। আমি যেন এই আয়াত থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। আমি যেন এই আয়াতের মাধ্যমে হিদায়াত লাভ করতে পারি। হাদিসে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হলো, অর্থ : ‘হে মুমিনরা, তোমরা নবীর কণ্ঠের ওপর নিজেদের কণ্ঠ উঁচু করবে না! এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো তাঁর সঙ্গে সেরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলবে না। এতে তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; অথচ তোমরা টেরও পাবে না।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ২)
(উপরোক্ত আয়াত নাজিল হলে) সাবিত (রা.) নিজের ঘরে বসে গেলেন এবং বলতে নাগলেন, আমি একজন জাহান্নামি। এরপর থেকে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবি সাদ ইবনে মুআজকে সাবিত (রা.) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, হে আবু আমর, সাবিতের কী হলো? সাদ (রা.) বললেন, সে তো আমার প্রতিবেশী, তার কোনো অসুখ হয়েছে বলে তো জানি না। আনাস (রা.) বলেন, পরে সাদ (রা.) সাবিতের কাছে গেলেন এবং তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বক্তব্য উল্লেখ করলেন। সাবিত (রা.) বললেন, এ আয়াত নাজিল হয়েছে। আর তোমরা জানো, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আমার কণ্ঠস্বর সবচেয়ে উঁচু হয়ে যায়। সুতরাং আমি তো জাহান্নামি। সাদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে সাবিতের কথা বলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেন, না, বরং সে তো জান্নাতি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৯)
রাতে তিলাওয়াত
যারা রাতে কোরআন তিলাওয়াত করে, এর আলাদা প্রভাব রয়েছে, এ তিলাওয়াত মনের মধ্যে শক্তি জোগায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই রাত্রিকালের জাগরণ এমন, যা কঠিনভাবে প্রবৃত্তি দলন করে এবং যা কথা বলার পক্ষে উত্তম।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)
অর্থাৎ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে অভ্যস্ত হলে নিজ প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়। আর রাতের বেলা যেহেতু পরিবেশ শান্ত থাকে, চারদিকে নীরবতা বিরাজ করে, তাই তখন তিলাওয়াত ও দোয়া সুন্দর ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং তাতে মনোযোগও দেওয়া যায় পূর্ণমাত্রায়। দিনের বেলা এ সুবিধা কম থাকে।
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।