ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম মাদরাসা ‘দারুল আরকাম’

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দারুল আরকামই  ইসলামের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এখানে শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.), হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.), হজরত আলী ইবনে আবি তালিবসহ (রা.) প্রথম শ্রেণির সাহাবায়ে কেরাম এখানকার
উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন জ্ঞান অর্জনের জন্য ইসলামের প্রাথমিক যুগে তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ইসলামের আদি শিক্ষাগার ছিল মসজিদ। আদম (আ.) দুনিয়ায় এসে বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেন। এটিই মানব জাতির প্রথম শিক্ষাগার। ইসলাম প্রচারের সূচনা থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানব জাতির মহান শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ইসলামী শিক্ষার নিয়মনীতি প্রবর্তন করেন। তিনি নবুয়ত লাভের পর কাবাকে প্রথম শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। পরে তিনি মক্কা নগরীর সাফা পাহাড়ের পাদদেশে আরকাম বিন আবুল আরকামের বাড়িতে ‘দারুল আরকাম’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

দারুল আরকামের শিক্ষা ব্যবস্থা
দারুল আরকামই ইসলামের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এখানে শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.), হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.), হজরত আলী ইবনে আবি তালিবসহ (রা.) প্রথম শ্রেণির সাহাবায়ে কেরাম এখানকার উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন। মদিনায় হিজরতের আগে আকাবার শপথের মাধ্যমে যারা ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তাদের প্রশিক্ষিত করতে তিনি হজরত মুসআব ইবনে উমাইরকে মদিনায় পাঠান। মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সময় দারুল আরকামে শিক্ষাদানের জন্য হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম ও মুসআব ইবনে উমাইরের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। হিজরতের পর মক্কায় অবশিষ্ট মুসলমানদের মধ্যে দারুল আরকামের মাধ্যমেই দাওয়াতে ইসলামের কর্মকা- জারি রাখা হয়।
নবুয়তের প্রথম দিকে, বিশেষ করে মক্কি জীবনে ইসলামের বুনিয়াদি জ্ঞান ও ইবাদতের নিয়মকানুন শিক্ষা গ্রহণই পাঠ্যভুক্ত ছিল। এ সময়কার পাঠ্যসূচিতে পবিত্র কোরআনকেই প্রধান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাছাড়া কিছুসংখ্যক সাহাবিকে তিনি পবিত্র কোরআনের লিপিকার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তাদের হস্তলিপিবিশারদ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণকালে তার বোন ফাতেমার কাছে সূরা ত্বহার লিখিত হস্তলিপি পাওয়া গিয়েছিল।

দারুল আরকামে ইসলাম গ্রহণ
সুহাইব ইবনে সিনান রুমি গোপনে চললেন দারুল আরকামের দিকে। আরকামের বাড়ির দরজায় পৌঁছে দেখতে পেলেন সেখানে আম্মার ইবনে ইয়াসির দাঁড়িয়ে। আগেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল। একটু ইতস্তত করে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আম্মার তুমি এখানে?
আম্মার পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, বরং তুমিই বল, কী জন্য এসেছ?
সুহাইব বললেন, আমি এই লোকটির (মুহাম্মদ (সা.)) কাছে যেতে চাই, তাঁর কিছু কথা শুনতে চাই।
আম্মার বললেন, আমারও উদ্দেশ্য তা-ই।
সুহাইব বললেন, তাহলে আমরা আল্লাহর নাম নিয়ে ঢুকে পড়ি।
দুইজন একসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে পৌঁছে তাঁর কথা শুনলেন। তাঁদের অন্তর ঈমানের নূরে আলোকিত হয়ে উঠল। দুইজনই একসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কালেমা শাহাদাত পাঠ করলেন। সেদিনটি তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাহচর্যে থেকে তাঁর উপদেশপূর্ণ বাণী শুনলেন। গভীর রাতে মানুষের শোরগোল থেমে গেলে তাঁরা চুপে চুপে অন্ধকারে দারুল আরকাম থেকে নিজ নিজ আস্তানার দিকে বেরিয়ে পড়লেন। হজরত সুহাইবের আগে তিরিশেরও বেশি সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
তলোয়ার কাঁধে ঝুলিয়ে চলছেন উমর ইবনে খাত্তাব। পথে বনি জোহরার নাঈম ইবনে আবদুল্লাহর [মতান্তরে] সঙ্গে দেখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ ওমর?
ওমর বললেন, মুহাম্মদের একটা দফারফা করতে। লোকটি বললেন, মুহাম্মদের (সা.) দফারফা করে বনি হাশিম ও বনি জোহরার হাত থেকে বাঁচবে কীভাবে?
এ কথা শুনে ওমর বলে উঠলেন, মনে হচ্ছে তুমিও পৈতৃক ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়েছ?
লোকটি বললেন, ওমর একটা বিস্ময়কর খবর শোন, তোমার বোন ও ভগ্নিপতি বিধর্মী হয়ে গেছে। তাঁরা তোমার ধর্ম ত্যাগ করেছে। এ কথা শুনে ওমর রাগে উন্মত্ত হয়ে ছুটলেন তাঁর বোন-ভগ্নিপতির বাড়ির উদ্দেশ্যে। বোন ও ভগ্নিপতি কোরআন পড়ছিলেন। সেখানে গিয়ে ঘটনা জানতে পেরে ওমর তাঁর ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং দু’পায়ে তাঁকে ভীষণভাবে মাড়াতে লাগলেন। বোন তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওমর তাকে ধরে এনে এমন মার দিলেন, তাঁর মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেল। বোন রাগে উত্তজিত হয়ে বলে উঠলেন, সত্য যদি তোমার দীনের বাইরে অন্য কোথাও থেকে থাকে, তাহলে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।
মুহূর্তে ওমরের হৃদয় সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তিনি পাক-সাফ হয়ে বোনের হাত থেকে সূরা ত্বহার অংশটুকু নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। পড়া শেষ করে বললেন, আমাকে তোমরা মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে নিয়ে চল। ওমরের এ কথা শুনে এতক্ষণে খাব্বাব ঘরের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেন, সুসংবাদ ওমর! বৃহস্পতিবার রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমর জন্য দোয়া করেছিলেন। আমি আশা করি তা কবুল হয়েছে। তিনি বলেছিলেনÑ আল্লাহ, ওমর ইবনে খাত্তাব বা আমর ইবনে হিশামের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী কর। খাব্বার আরও বললেন, রাসুল (সা.) এখন সাফার পাদদেশে ‘দারুল আরকামে’ আছেন।
ওমর চললেন দারুল আরকামের দিকে। হামজা এবং তালহা (রা.) এর সঙ্গে আরও কিছু সাহাবি তখন আরকামের বাড়ির দরজায় পাহারারত। ওমরকে দেখে তাঁরা ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। তবে হামজা সান্ত¡না দিয়ে বললেন, আল্লাহ ওমরের কল্যাণ চাইলে সে ইসলাম গ্রহণ করে রাসুল (সা.) এর অনুসারী হবে। অন্যথায় তাকে হত্যা করা আমাদের জন্য খুবই সহজ হবে। রাসুল (সা.) তখন বাড়ির ভেতরে। তাঁর ওপর তখন ওহি নাজিল হচ্ছিল। একটু পরে তিনি বেরিয়ে ওমরের কাছে এলেন। তিনি ওমরের কাপড় ও তলোয়ারের হাতল ধরে বললেনÑ ওমর, তুমি কি বিরত হবে না? তারপর তিনি দোয়া করলেনÑ হে আল্লাহ, ওমর আমার সামনে। হে আল্লাহ, ওমরের দ্বারা দীনকে শক্তিশালী করো। ওমর বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছিÑ ‘আপনি আল্লাহর রাসুল’। ইসলাম গ্রহণ করেই তিনি আহ্বান জানালেন, হে অল্লাহর রাসুল, ঘর থেকে বেরিয়ে পড়–ন। এখন থেকে ইসলামের সবকিছু প্রকাশ্যে হবে…।
[তথ্যসূত্র : ইমাম যুহরী (রহ.)/ইতিহাসের আলোকে আমাদের
শিক্ষার ঐতিহ্য ও প্রকৃতি, পৃষ্ঠা ১১]

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রথম মাদরাসা ‘দারুল আরকাম’

আপডেট টাইম : ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দারুল আরকামই  ইসলামের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এখানে শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.), হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.), হজরত আলী ইবনে আবি তালিবসহ (রা.) প্রথম শ্রেণির সাহাবায়ে কেরাম এখানকার
উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন জ্ঞান অর্জনের জন্য ইসলামের প্রাথমিক যুগে তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ইসলামের আদি শিক্ষাগার ছিল মসজিদ। আদম (আ.) দুনিয়ায় এসে বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেন। এটিই মানব জাতির প্রথম শিক্ষাগার। ইসলাম প্রচারের সূচনা থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানব জাতির মহান শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ইসলামী শিক্ষার নিয়মনীতি প্রবর্তন করেন। তিনি নবুয়ত লাভের পর কাবাকে প্রথম শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। পরে তিনি মক্কা নগরীর সাফা পাহাড়ের পাদদেশে আরকাম বিন আবুল আরকামের বাড়িতে ‘দারুল আরকাম’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

দারুল আরকামের শিক্ষা ব্যবস্থা
দারুল আরকামই ইসলামের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এখানে শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত ছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.), হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.), হজরত আলী ইবনে আবি তালিবসহ (রা.) প্রথম শ্রেণির সাহাবায়ে কেরাম এখানকার উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন। মদিনায় হিজরতের আগে আকাবার শপথের মাধ্যমে যারা ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তাদের প্রশিক্ষিত করতে তিনি হজরত মুসআব ইবনে উমাইরকে মদিনায় পাঠান। মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সময় দারুল আরকামে শিক্ষাদানের জন্য হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম ও মুসআব ইবনে উমাইরের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। হিজরতের পর মক্কায় অবশিষ্ট মুসলমানদের মধ্যে দারুল আরকামের মাধ্যমেই দাওয়াতে ইসলামের কর্মকা- জারি রাখা হয়।
নবুয়তের প্রথম দিকে, বিশেষ করে মক্কি জীবনে ইসলামের বুনিয়াদি জ্ঞান ও ইবাদতের নিয়মকানুন শিক্ষা গ্রহণই পাঠ্যভুক্ত ছিল। এ সময়কার পাঠ্যসূচিতে পবিত্র কোরআনকেই প্রধান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাছাড়া কিছুসংখ্যক সাহাবিকে তিনি পবিত্র কোরআনের লিপিকার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তাদের হস্তলিপিবিশারদ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণকালে তার বোন ফাতেমার কাছে সূরা ত্বহার লিখিত হস্তলিপি পাওয়া গিয়েছিল।

দারুল আরকামে ইসলাম গ্রহণ
সুহাইব ইবনে সিনান রুমি গোপনে চললেন দারুল আরকামের দিকে। আরকামের বাড়ির দরজায় পৌঁছে দেখতে পেলেন সেখানে আম্মার ইবনে ইয়াসির দাঁড়িয়ে। আগেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল। একটু ইতস্তত করে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আম্মার তুমি এখানে?
আম্মার পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, বরং তুমিই বল, কী জন্য এসেছ?
সুহাইব বললেন, আমি এই লোকটির (মুহাম্মদ (সা.)) কাছে যেতে চাই, তাঁর কিছু কথা শুনতে চাই।
আম্মার বললেন, আমারও উদ্দেশ্য তা-ই।
সুহাইব বললেন, তাহলে আমরা আল্লাহর নাম নিয়ে ঢুকে পড়ি।
দুইজন একসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে পৌঁছে তাঁর কথা শুনলেন। তাঁদের অন্তর ঈমানের নূরে আলোকিত হয়ে উঠল। দুইজনই একসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কালেমা শাহাদাত পাঠ করলেন। সেদিনটি তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাহচর্যে থেকে তাঁর উপদেশপূর্ণ বাণী শুনলেন। গভীর রাতে মানুষের শোরগোল থেমে গেলে তাঁরা চুপে চুপে অন্ধকারে দারুল আরকাম থেকে নিজ নিজ আস্তানার দিকে বেরিয়ে পড়লেন। হজরত সুহাইবের আগে তিরিশেরও বেশি সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
তলোয়ার কাঁধে ঝুলিয়ে চলছেন উমর ইবনে খাত্তাব। পথে বনি জোহরার নাঈম ইবনে আবদুল্লাহর [মতান্তরে] সঙ্গে দেখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ ওমর?
ওমর বললেন, মুহাম্মদের একটা দফারফা করতে। লোকটি বললেন, মুহাম্মদের (সা.) দফারফা করে বনি হাশিম ও বনি জোহরার হাত থেকে বাঁচবে কীভাবে?
এ কথা শুনে ওমর বলে উঠলেন, মনে হচ্ছে তুমিও পৈতৃক ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়েছ?
লোকটি বললেন, ওমর একটা বিস্ময়কর খবর শোন, তোমার বোন ও ভগ্নিপতি বিধর্মী হয়ে গেছে। তাঁরা তোমার ধর্ম ত্যাগ করেছে। এ কথা শুনে ওমর রাগে উন্মত্ত হয়ে ছুটলেন তাঁর বোন-ভগ্নিপতির বাড়ির উদ্দেশ্যে। বোন ও ভগ্নিপতি কোরআন পড়ছিলেন। সেখানে গিয়ে ঘটনা জানতে পেরে ওমর তাঁর ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং দু’পায়ে তাঁকে ভীষণভাবে মাড়াতে লাগলেন। বোন তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওমর তাকে ধরে এনে এমন মার দিলেন, তাঁর মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেল। বোন রাগে উত্তজিত হয়ে বলে উঠলেন, সত্য যদি তোমার দীনের বাইরে অন্য কোথাও থেকে থাকে, তাহলে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।
মুহূর্তে ওমরের হৃদয় সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তিনি পাক-সাফ হয়ে বোনের হাত থেকে সূরা ত্বহার অংশটুকু নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। পড়া শেষ করে বললেন, আমাকে তোমরা মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে নিয়ে চল। ওমরের এ কথা শুনে এতক্ষণে খাব্বাব ঘরের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেন, সুসংবাদ ওমর! বৃহস্পতিবার রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমর জন্য দোয়া করেছিলেন। আমি আশা করি তা কবুল হয়েছে। তিনি বলেছিলেনÑ আল্লাহ, ওমর ইবনে খাত্তাব বা আমর ইবনে হিশামের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী কর। খাব্বার আরও বললেন, রাসুল (সা.) এখন সাফার পাদদেশে ‘দারুল আরকামে’ আছেন।
ওমর চললেন দারুল আরকামের দিকে। হামজা এবং তালহা (রা.) এর সঙ্গে আরও কিছু সাহাবি তখন আরকামের বাড়ির দরজায় পাহারারত। ওমরকে দেখে তাঁরা ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। তবে হামজা সান্ত¡না দিয়ে বললেন, আল্লাহ ওমরের কল্যাণ চাইলে সে ইসলাম গ্রহণ করে রাসুল (সা.) এর অনুসারী হবে। অন্যথায় তাকে হত্যা করা আমাদের জন্য খুবই সহজ হবে। রাসুল (সা.) তখন বাড়ির ভেতরে। তাঁর ওপর তখন ওহি নাজিল হচ্ছিল। একটু পরে তিনি বেরিয়ে ওমরের কাছে এলেন। তিনি ওমরের কাপড় ও তলোয়ারের হাতল ধরে বললেনÑ ওমর, তুমি কি বিরত হবে না? তারপর তিনি দোয়া করলেনÑ হে আল্লাহ, ওমর আমার সামনে। হে আল্লাহ, ওমরের দ্বারা দীনকে শক্তিশালী করো। ওমর বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছিÑ ‘আপনি আল্লাহর রাসুল’। ইসলাম গ্রহণ করেই তিনি আহ্বান জানালেন, হে অল্লাহর রাসুল, ঘর থেকে বেরিয়ে পড়–ন। এখন থেকে ইসলামের সবকিছু প্রকাশ্যে হবে…।
[তথ্যসূত্র : ইমাম যুহরী (রহ.)/ইতিহাসের আলোকে আমাদের
শিক্ষার ঐতিহ্য ও প্রকৃতি, পৃষ্ঠা ১১]