ঢাকা , বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একসঙ্গে কোরআনে হাফেজ হল ৪ যমজ বোন

ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে একসঙ্গে কোরআনের হাফেজ হল যমজ চার বোন। মেধা, স্মৃতিশক্তি ও পড়াশোনায় তারা অনন্য।

জেরুসালেমের নিকটস্থ উম্মে তুবা গ্রামে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা।ওই যমজ চার বোনের নাম হচ্ছে—দিনা, দিমা, সুসান ও রাজান। তাদের বয়স এখন আঠারো।

একসঙ্গে তাদের পাঠশালায় যাওয়া ও পাশাপাশি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছে।

ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই চার বোন কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের স্কুলের নাম জেরুসালেম সুরবাহার আবু বকর সিদ্দিক গার্লস স্কুল। সেখান থেকে তারা এই বছর মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যথাক্রমে ৯৩.৯, ৯২.১, ৯১.৪ এবং ৯১.১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

তাদের মা নাজাহ আল-শুনাইতি। তিনি জানান,আমার এই চার সন্তান যমজ হওয়ায় তাদের প্রায় সবকিছুতে মিল রয়েছে।তাদের পড়াশোনা ও জ্ঞানভিত্তিক তাড়নায় নিজেই অবাক হন নাজাহ।

চার হাফেজ সন্তানের জননী আরও বলেন, আমার এই চার সন্তানের মধ্যে অদ্ভুদ কিছু মিল রয়েছে। শৈশব থেকেই তারা একসঙ্গে থাকত, সব কাজ করত, অসুস্থ হতো, সুস্থ হতো, খেলাধুলা করত, একইরকম পোশাক পরতে চাইত।

চারজনেরই কালো রং পছন্দ এবং ‘কিব্বা’ ও ‘লাসগিনা’ তাদের প্রিয় খাবার। ফুটবল, বাস্কেটবল এবং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘দাবাকা’ও পছন্দ করে চারজন। বিশ্ব ভ্রমণে বের হওয়া চারজনের স্বপ্ন।

তাই তাদের গ্রামের মসজিদে পাঠানো হয় কোরআন হিফজ করতে। নামাজ পড়ার জন্য একই রকমের পোশাকও কিনে দেয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমকে নাজাহ জানান, তারা যখন ছোট ছিল তখন তাদের চারজনকে ভিন্ন ভিন্নভাবে চিনতে কষ্ট হতো। তাই চিনতে সহজ হওয়ার জন্য তিনি তাদের হাতে আলাদা রঙের উলের সুতা পরিয়ে দিতাম।তবে এখন আর তাদের চিনতে কষ্ট হয় না। কণ্ঠস্বর শুনেই আলাদা আলাদাভাবে তাদের চেনা যায়।

তবে এই চার হাফেজের জন্মের সময় চিকিৎসকরা নাজাহকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, এই চার যমজের দুইজনকে গর্ভপাত করে ফেলতে। কিন্তু গর্ভের সপ্তম মাসে চার বোনই সুস্থ অবস্থায় জন্ম নেয়।

নাজাহ বলেন, ছয় সন্তানের পর এই চার মেয়ে তার জীবন ‘আলোকিত’ করেছে।

যেভাবে কোরআনের হিফজ শুরু

হাফেজ দিনা সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তাদের পড়াশোনা সম্পর্কে জানান।তিনি বলেন, তেরো বছর বয়সে একসঙ্গে চার বোন কোরআন হিফজ শুরু করি। এলাকার ‘মারকাজ আবদুল্লাহ বিন মাসউদে’ কোরআন হিফজ শুরু করি। সতেরো বছর বয়সে তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই কোরআনের পূর্ণ হিফজ সম্পন্ন করি।

দিমা আরও জানায়, কোরআন হিফজ তাদেরও তেজস্বী ধী-শক্তি দিয়েছে। ইসলামী শিষ্টাচার ও আরবিভাষায় তাদের সাহায্য করেছে। অধ্যয়ন-অধ্যাবসায় ও সময়ের ব্যবস্থাপনায় বরকত তৈরি করেছে।

ফিলিস্তিনের প্রসিদ্ধ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বা প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া স্বপ্ন দেখেন তারা।

তাদের বাবা মারয়ি-আল-শুনাইতির স্বপ্ন, এই চার সন্তানের অধ্যয়নের জন্য বড় কোনো স্কলারশিপ যোগাড় করতে পারবেন। যা তিনি তাদের পড়াশোনা বাবদ এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে খরচ করতে পারবেন

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

একসঙ্গে কোরআনে হাফেজ হল ৪ যমজ বোন

আপডেট টাইম : ০৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে একসঙ্গে কোরআনের হাফেজ হল যমজ চার বোন। মেধা, স্মৃতিশক্তি ও পড়াশোনায় তারা অনন্য।

জেরুসালেমের নিকটস্থ উম্মে তুবা গ্রামে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা।ওই যমজ চার বোনের নাম হচ্ছে—দিনা, দিমা, সুসান ও রাজান। তাদের বয়স এখন আঠারো।

একসঙ্গে তাদের পাঠশালায় যাওয়া ও পাশাপাশি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছে।

ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই চার বোন কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের স্কুলের নাম জেরুসালেম সুরবাহার আবু বকর সিদ্দিক গার্লস স্কুল। সেখান থেকে তারা এই বছর মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যথাক্রমে ৯৩.৯, ৯২.১, ৯১.৪ এবং ৯১.১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

তাদের মা নাজাহ আল-শুনাইতি। তিনি জানান,আমার এই চার সন্তান যমজ হওয়ায় তাদের প্রায় সবকিছুতে মিল রয়েছে।তাদের পড়াশোনা ও জ্ঞানভিত্তিক তাড়নায় নিজেই অবাক হন নাজাহ।

চার হাফেজ সন্তানের জননী আরও বলেন, আমার এই চার সন্তানের মধ্যে অদ্ভুদ কিছু মিল রয়েছে। শৈশব থেকেই তারা একসঙ্গে থাকত, সব কাজ করত, অসুস্থ হতো, সুস্থ হতো, খেলাধুলা করত, একইরকম পোশাক পরতে চাইত।

চারজনেরই কালো রং পছন্দ এবং ‘কিব্বা’ ও ‘লাসগিনা’ তাদের প্রিয় খাবার। ফুটবল, বাস্কেটবল এবং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘দাবাকা’ও পছন্দ করে চারজন। বিশ্ব ভ্রমণে বের হওয়া চারজনের স্বপ্ন।

তাই তাদের গ্রামের মসজিদে পাঠানো হয় কোরআন হিফজ করতে। নামাজ পড়ার জন্য একই রকমের পোশাকও কিনে দেয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমকে নাজাহ জানান, তারা যখন ছোট ছিল তখন তাদের চারজনকে ভিন্ন ভিন্নভাবে চিনতে কষ্ট হতো। তাই চিনতে সহজ হওয়ার জন্য তিনি তাদের হাতে আলাদা রঙের উলের সুতা পরিয়ে দিতাম।তবে এখন আর তাদের চিনতে কষ্ট হয় না। কণ্ঠস্বর শুনেই আলাদা আলাদাভাবে তাদের চেনা যায়।

তবে এই চার হাফেজের জন্মের সময় চিকিৎসকরা নাজাহকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, এই চার যমজের দুইজনকে গর্ভপাত করে ফেলতে। কিন্তু গর্ভের সপ্তম মাসে চার বোনই সুস্থ অবস্থায় জন্ম নেয়।

নাজাহ বলেন, ছয় সন্তানের পর এই চার মেয়ে তার জীবন ‘আলোকিত’ করেছে।

যেভাবে কোরআনের হিফজ শুরু

হাফেজ দিনা সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তাদের পড়াশোনা সম্পর্কে জানান।তিনি বলেন, তেরো বছর বয়সে একসঙ্গে চার বোন কোরআন হিফজ শুরু করি। এলাকার ‘মারকাজ আবদুল্লাহ বিন মাসউদে’ কোরআন হিফজ শুরু করি। সতেরো বছর বয়সে তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই কোরআনের পূর্ণ হিফজ সম্পন্ন করি।

দিমা আরও জানায়, কোরআন হিফজ তাদেরও তেজস্বী ধী-শক্তি দিয়েছে। ইসলামী শিষ্টাচার ও আরবিভাষায় তাদের সাহায্য করেছে। অধ্যয়ন-অধ্যাবসায় ও সময়ের ব্যবস্থাপনায় বরকত তৈরি করেছে।

ফিলিস্তিনের প্রসিদ্ধ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বা প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া স্বপ্ন দেখেন তারা।

তাদের বাবা মারয়ি-আল-শুনাইতির স্বপ্ন, এই চার সন্তানের অধ্যয়নের জন্য বড় কোনো স্কলারশিপ যোগাড় করতে পারবেন। যা তিনি তাদের পড়াশোনা বাবদ এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে খরচ করতে পারবেন