বাংলাদেশের পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক শনিবার বলেছেন, শোলাকিয়ার ঈদের সকালে হামলা, এবং ঢাকার গুলশানে রেস্তোরাঁয় আক্রমণ চালিয়ে বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যা – এই দুটোই নিষিদ্ধ জঙ্গী গোষ্ঠী জামা’তুল মুজাহিদীনের কাজ।
তার কথা, শোলাকিয়ার ঘটনায় যে গ্রেফতার হয়েছে – তার প্রাথমিক জবানবন্দীতে সে স্বীকার করেছে যে দুটো ঘটনাই জেএমবি সদস্যদের কাজ।
তবে ইন্টারনেটে দেখা যাচ্ছে, গুলশানের আক্রমণ সহ বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বেশির ভাগ জঙ্গী হামলারই দায়িত্ব স্বীকার করছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। যদিও শোলাকিয়ার হামলার ক্ষেত্রে আইএসের দায়িত্ব স্বীকারের কোন খবর এখনো পাওয়া যায় নি।
এ ব্যাপারে মি. হকের বক্তব্য হলো, “যেখানেই ঘটনা ঘটে – আইএস সেখানেই তা দাবি করে। তবে আইএস এ দাবি কেন করে – এই লিংকটা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।
বাংলাদেশের জঙ্গী হামলাগুলোর সাথে ইসলামিক স্টেটের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারটি অস্বীকার করে থাকেন সরকারের একাধিক মন্ত্রীও । তারা বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই এবং এগুলো স্থানীয় জঙ্গী সংগঠনেরই কাজ।
কিন্তু ইসলামিক স্টেটের সাথে জেএমবির এক ধরণের সম্পর্কের একটা ধারণা পাওয়া যায় আইএসএর মুখপত্র ‘দাবিক’-এর নিকট অতীতে প্রকাশিত কিছু নিবন্ধ থেকে। এতে স্পষ্টই বলা হয়, জেএমবিকে বাংলাদেশে তাদের ঘনিষ্ঠতম সংগঠন বলেই মনে করে আইএস।
দাবিকের দ্বাদশ সংখ্যায় এক নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে একমাত্র জামা’তুল মুজাহিদীনই যথার্থ ‘জিহাদি’ সংগঠন।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিদেশী নাগরিক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক থেকে শুরু করে সমকামী অধিকারকর্মীদের ওপর সাম্প্রতিক অনেকগুলো হামলারই দায়িত্ব স্বীকার করে আইএস – এমন খবর দেয় জিহাদি তৎপরতা নজরদারির ওয়েবসাইট এসআইটিই (SITE)।
এ সম্পর্কে দাবিক-এর ‘বেঙ্গলে জিহাদের পুনরুত্থান’ নামের নিবন্ধে বলা হয়, খিলাফাহ’র সৈন্যরা ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্বের আদেশ পেয়েই ‘ক্রুসেডার ও তার সহযোগীদের ওপর’ হামলা চালিয়েছে।
এ থেকে অনেকেই বলতে পারেন, বাংলাদেশে আইএস সরাসরি না থাকলেও তাদের ‘অনুমোদিত সংগঠনের’ তৎপরতা আছে।
বাংলাদেশে জেএমবি একটি নিষিদ্ধ সংগঠন
কয়েকদিন আগেই সাইটে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, সিরিয়ার রাক্কা শহর থেকে ‘তিন জন বাংলাদেশী আইএস যোদ্ধা’ গুলশানের আক্রমণের প্রশংসা করে বাংলায় বক্তৃতা করছেন, আরো হামলার হুমকি দিচ্ছেন।
দাবিকের ওই নিবন্ধে বলা হয়, বেঙ্গলের সরকার যতই বলুক ‘বাংলাদেশে আইএস নেই’, কিন্তু ‘তিউনিসিয়া থেকে বেঙ্গল পর্যন্ত আইএস আছে এবং থাকবে’।
বাংলাদেশের আইজিপি শহিদুল হক বলছেন, আইএস-এর এই জঙ্গী হামলার কৃতিত্ব দাবিটা কাদের মাধ্যমে করা হয়, কারা এই তথ্য দেয়, কি জন্য করে – ‘এই লিংকটা’ তারা এখন বের করার চেষ্টা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে ধারণা হয় যে গুলশানে হামলাকারীদের সাথে আইএসের সংবাদসংস্থার ইন্টারনেটে এমনই যোগাযোগ ছিল যে পুলিশে ঘেরা হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ভেতর থেকেই তারা হত্যাকান্ডে নিহতদের ছবি পাঠিয়েছে।
কিন্তু এটা ঠিক যে বাংলাদেশে এ ধরণের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সমন্বয় কোথা থেকে এবং কিভাবে হয় তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর কোন একক সমন্বয়কারী আছেন কিনা তাও এখনো অজানা। -বিবিসি