রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম জঙ্গিদের মদদের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বাধ্য হয়ে তিনি এ কাজ করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন থেকেই হাসনাত করিমকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বাড়ি থেকে একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। ১০ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি জঙ্গিদের মদদ দিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানান।
হাসনাতের বরাত দিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) এক কর্মকর্তা জানান, রেস্টুরেন্টের আশপাশের সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ দেখে হাসনাত করিমের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়।
জঙ্গিদের সঙ্গে তার স্বাভাবিক কথাবার্তা
ও একপর্যায়ে তার হাতে একটি অস্ত্র দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত জানান, অস্ত্র হাতে না নিলে জঙ্গিরা তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। মৃত্যুর ভয়ে তিনি অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয় বলে জানান।
গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গি হামলার প্রাথমিক প্রতিরোধেই প্রাণ হারান পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা।
পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হয়। তার আগেই তারা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানায় দুটি মামলা করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় পুলিশের সিটি ইউনিটের কাছে। তবে মামলার এজাহারে হাসনাত করিমের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, হাসনাত করিম ডিবি কার্যালয়ে নেই।
তবে রোববার সন্ধ্যায় হাসনাত করিমের বাবা ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম ডিবি অফিসে গেলে এক ডিবি কর্মকর্তা তার কাছে স্বীকার করেন, হাসনাত করিম তাদের হেফাজতে আছে। তিনি হাসনাত করিমের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার দিন হাসনাত করিম তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন।
এরপর ওই রেস্টুরেন্টে জিম্মিদশা শুরু হলে রাতেই গুলশানে আসেন হাসনাতের চাচা আনোয়ার করিম। সেখানেই তিনি জানান, রাত ১০টা ৪১ মিনিটে হাসনাত ফোন দিয়েছিল।
সে বলেছে, বাইরে থেকে যেন কোনো পুলিশ গুলি না করে, তাহলে জঙ্গিরা আমাদের মেরে ফেলবে।
হাসনাত করিম ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ।