ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তুরাগতীরে এগিয়ে চলছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতের কাজ, প্রথম পর্ব ২ ফেব্রুয়ারি শুরু

আর মাত্র ৪ দিন পর টঙ্গীর তুরাগতীরে তাবলীগ জামাতের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। পবিত্র হজ্বের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমাস্থল। আর এই জমায়েত সফল করতে স্বেচ্ছাশ্রমে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতের কাজ। গাজীপুর, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে তাবলীগ জামাতের অনুসারী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাসহ কলকারখানার শ্রমিকরা এসব কাজ করছেন।

এবারও বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। মাওলানা যোবায়ের অনুসারিদের প্রথম পর্ব ২ ফেব্রুয়ারি শরু হয়ে ৪ ফেবুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ৪ দিন বিরতি দিয়ে সাদ অনুসারিদের ২য় পর্ব ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ২০২৪ সালের বিশ্ব ইজতেমা। মহামারী করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।

ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও মাওলানা জোবায়ের পন্থী এবং মাওলানা সাদ পন্থী মুরুব্বিরা ইজতেমার সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা করেছেন। গত ২২ জানুয়ারি নিরাপত্তা বিষয়ক ফলোআপ সভা অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা মাঠের বাটা রোডে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি, পুলিশের আইজিপিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়রের প্রতিনিধি, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার ও বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশ্ব ইজতোর দুই গ্রুপের মুরব্বিগণ।

শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে এগিয়ে চলছে ময়দানের প্রস্তুতি কাজ। ইজতেমা ময়দানে নামাজের দাগ কাটা শেষ, বাশেঁর খুটি পোতাও শেষ। ময়দানের বেশিরভাগ এলাকাই চট টাঙ্গানো হয়ে গেছে, এখন চলছে মাঠের মধ্যখানে বিদেশি মেহমানতের কামড়ার পাশে মঞ্চ তৈরির কাজ। বেশিরভাগ এলাকায় মাইক ও লাইট স্থাপন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর জন্য ওয়াজ টাওয়ারের কাজ করা হচ্ছে। আবার অনেককেই ময়দান পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। বিদেশি মেহমানদের থাকার জায়গায় এবারই চারপাশে ইটের গাধুনি দিয়ে বাউন্ডারী করা দ্রুত গতিতে চলছে।

শুক্র ও শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অফিস বন্ধ থাকার কারণে স্বেচ্ছাশ্রমে অনেকেই আসেন ইজতেমা মাঠে কাজ করে দ্বীনের কাজে সহযোগিতা করতে। এসব কাজে বৃদ্ধ ও যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন। ইজতেমা ময়দানে ইতোমধ্যেই খুঁটি বসানো শেষ হয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাঠের উত্তর পশ্চিম পাশে বিদেশি কামরা। তুরাগ তীরের ১৬০ একর সুবিশাল ময়দান প্রস্তুত করতে শত শত স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনী তুরাগনদী পারাপারের জন্য অস্থায়ী সেতুর কাজ করছেন। যাতে মুসল্লিরা অল্প সময়ে নদীর পশ্চিম পার থেকে ইজতেমা ময়দানে সহজেই প্রবেশ করতে পারেন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরাও এসেছেন স্বেচ্ছায় ইজতেমার কাজে অংশ নিতে। সাভারের নবীনগর থেকে এসেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. শাহিন। তিনি বলেন, আমরা তো ইচ্ছে করলেই আসতে পারি না। এটি ইসলামের জন্য কাজ, এজন্য ছুটে এসে কাজ করছি। আখেরি মোনাজাতের দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি দেবে তখন আবার আসবো মোনাজাতে অংশ নিতে। রাজধানীর ম্যামপুর থেকে এসেছেন ডিম ব্যবসায়ী মো. নাসির। তিনি বলেন, আমি গত শুক্রবারও এসেছিলাম আবার আজও এসেছি। দ্বীনের কাজ করার জন্য, আল্লাহকে রাজি খুশি এবং সন্তুষ্টির জন্য।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে নিয়োজিতরা জানান, আগামী শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলেম মাশায়েখদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার থেকেই ইজতেমায় বয়ানসহ বিভিন্ন কাজ শুরু হয়ে যাবে। ফলে এরআগেই আমরা মাঠের সকল কাজ শেষ করব ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া বিশেষ ট্রেন ও বাস যাতায়াত করবে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিদার্থে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে বিশেষ ট্রেনসহ সকল ট্রেনের যাত্রা বিরতি দেয়া হবে। পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইজতেমা মাঠের উত্তর পাশে নিজ নিজ কন্ট্রোল রুম চালু করবেন। এছাড়া ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসসহ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সেবা চালু রাখবেন বলে জানা গেছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

তুরাগতীরে এগিয়ে চলছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতের কাজ, প্রথম পর্ব ২ ফেব্রুয়ারি শুরু

আপডেট টাইম : ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪

আর মাত্র ৪ দিন পর টঙ্গীর তুরাগতীরে তাবলীগ জামাতের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। পবিত্র হজ্বের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমাস্থল। আর এই জমায়েত সফল করতে স্বেচ্ছাশ্রমে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতের কাজ। গাজীপুর, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে তাবলীগ জামাতের অনুসারী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাসহ কলকারখানার শ্রমিকরা এসব কাজ করছেন।

এবারও বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। মাওলানা যোবায়ের অনুসারিদের প্রথম পর্ব ২ ফেব্রুয়ারি শরু হয়ে ৪ ফেবুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ৪ দিন বিরতি দিয়ে সাদ অনুসারিদের ২য় পর্ব ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ২০২৪ সালের বিশ্ব ইজতেমা। মহামারী করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।

ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও মাওলানা জোবায়ের পন্থী এবং মাওলানা সাদ পন্থী মুরুব্বিরা ইজতেমার সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা করেছেন। গত ২২ জানুয়ারি নিরাপত্তা বিষয়ক ফলোআপ সভা অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা মাঠের বাটা রোডে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি, পুলিশের আইজিপিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়রের প্রতিনিধি, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার ও বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশ্ব ইজতোর দুই গ্রুপের মুরব্বিগণ।

শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে এগিয়ে চলছে ময়দানের প্রস্তুতি কাজ। ইজতেমা ময়দানে নামাজের দাগ কাটা শেষ, বাশেঁর খুটি পোতাও শেষ। ময়দানের বেশিরভাগ এলাকাই চট টাঙ্গানো হয়ে গেছে, এখন চলছে মাঠের মধ্যখানে বিদেশি মেহমানতের কামড়ার পাশে মঞ্চ তৈরির কাজ। বেশিরভাগ এলাকায় মাইক ও লাইট স্থাপন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর জন্য ওয়াজ টাওয়ারের কাজ করা হচ্ছে। আবার অনেককেই ময়দান পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। বিদেশি মেহমানদের থাকার জায়গায় এবারই চারপাশে ইটের গাধুনি দিয়ে বাউন্ডারী করা দ্রুত গতিতে চলছে।

শুক্র ও শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অফিস বন্ধ থাকার কারণে স্বেচ্ছাশ্রমে অনেকেই আসেন ইজতেমা মাঠে কাজ করে দ্বীনের কাজে সহযোগিতা করতে। এসব কাজে বৃদ্ধ ও যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছেন। ইজতেমা ময়দানে ইতোমধ্যেই খুঁটি বসানো শেষ হয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাঠের উত্তর পশ্চিম পাশে বিদেশি কামরা। তুরাগ তীরের ১৬০ একর সুবিশাল ময়দান প্রস্তুত করতে শত শত স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনী তুরাগনদী পারাপারের জন্য অস্থায়ী সেতুর কাজ করছেন। যাতে মুসল্লিরা অল্প সময়ে নদীর পশ্চিম পার থেকে ইজতেমা ময়দানে সহজেই প্রবেশ করতে পারেন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরাও এসেছেন স্বেচ্ছায় ইজতেমার কাজে অংশ নিতে। সাভারের নবীনগর থেকে এসেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. শাহিন। তিনি বলেন, আমরা তো ইচ্ছে করলেই আসতে পারি না। এটি ইসলামের জন্য কাজ, এজন্য ছুটে এসে কাজ করছি। আখেরি মোনাজাতের দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি দেবে তখন আবার আসবো মোনাজাতে অংশ নিতে। রাজধানীর ম্যামপুর থেকে এসেছেন ডিম ব্যবসায়ী মো. নাসির। তিনি বলেন, আমি গত শুক্রবারও এসেছিলাম আবার আজও এসেছি। দ্বীনের কাজ করার জন্য, আল্লাহকে রাজি খুশি এবং সন্তুষ্টির জন্য।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে নিয়োজিতরা জানান, আগামী শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলেম মাশায়েখদের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার থেকেই ইজতেমায় বয়ানসহ বিভিন্ন কাজ শুরু হয়ে যাবে। ফলে এরআগেই আমরা মাঠের সকল কাজ শেষ করব ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া বিশেষ ট্রেন ও বাস যাতায়াত করবে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিদার্থে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে বিশেষ ট্রেনসহ সকল ট্রেনের যাত্রা বিরতি দেয়া হবে। পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইজতেমা মাঠের উত্তর পাশে নিজ নিজ কন্ট্রোল রুম চালু করবেন। এছাড়া ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসসহ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সেবা চালু রাখবেন বলে জানা গেছে।