বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সংসার এক বিচিত্র জায়গা। এখানে চলে ভাঙ্গা গড়া, সুখ দুঃখের নানান খেলা।কেউ হেরে যায় নখ কামড়িয়ে। কেই-বা ডুগ ডুগি বাজায় সুখের গান গেয়ে। মনের কষ্টে চোখের পানি ফেলে কেউ বানায় সাগর মহাসাগর। তারপরও সংসার নামক দোযকখানায় বসে হাসে বেহেশতের হাসি। সংসারের সবার আছে ভিন্ন সত্ত্বা,আত্মা,ধ্যান–ধারনা, বিবেক বোধ ইত্যাদির সমন্নয় বা বিন্যাস। আমার খালা খালুর কি দোষ? হাড়ি পাতিলের আওয়াজে গিটারের টুং টাং শব্দের ঝড় তো ওঠতেই পারে। এটাই তো মহাশক্তির বাস্তবতার খেলা।
পান থেকে চুন খসলে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন খালা।খালুও উত্তপ্ত মরু ভুমির হট কেইক।ফুস ফুস করে সাপের মত সারাক্ষণ। খালা খালু উভয়ে, কাকে কে কি বলে হুস থাকে না।উভয়ের চোখ দুটো লালে ধুয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পোষা বেড়ালটিও লাফিয়ে পালায় খালার বা খালুর রাগের উত্তাপ অনুভব করতে পেরে।সেই মহূর্তে কালে ভদ্রেও কেউ সামনে আসে না। পুষি বিড়াল নিজের হাত পা চাটতে থাকে। বোবা চোখে রাখতে থাকে ভালোবাসার অাবেদন। না, ঝড় যত উত্তাল হউক, সময় গড়িয়ে সমতলে আসে নেমে।
সবাই জানে খালা ও খালুর মননে, বুদ্ধি,মেজাজে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।তেলে জলে না মেশার মত অবস্থা। এক জন পুবে মুখ ঘুরালে,অন্যজন পশ্চিমে নব্বই ডিগ্রি কৌনিক রেখায় লুকিয়ে রাখে চোখ।এই করেছ, সেই করেছ কেন ইত্যাদি জারির পর জারি অনর্গল খালার মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে। বালির মত উত্তপ্ত হলেও, খালু বেচারা, মান সন্মান ও সামাজিকতার ভয়ে খালার চোখের সামনে কোমড় সোজা করে দাঁড়াতেই পারে না। তিক্ততা তৈরী করতে ইচ্ছে করে না খালুর। জলন্ত আগুনে মুখ গুজে পড়ে থাকে ও শান্তির সুখ বার্তা ছড়ায়।বন্ধু মহলে মুখ ভরে বলে- ভালো আছি, সুখে আছি ইনশাল্লাহ্।
বাসায় যতক্ষণ থাকে চোখ কান বন্ধ করে বোবার মতো অভিনয় করে। বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলে সুখের আকাশটা যেন পায় হাতের নাগালে।ফুর ফুরে মেজাজে কিছুক্ষণ নিজেকে মুক্ত বাতাসে উড়তে দেয়।সমস্যা হয় শুক্রবার দিন।সে দিন মাছ মাংস সহ কাঁচা বাজার করার দাযিত্বটা পড়ে খালুর ঘাড়ে।মাছ কিনতে গিয়ে কেমন মাছ,কত কম বা চওড়া দামে কিনবে তা বুঝে ওঠতে পারে না। মাছটা খালার পছন্দ হবে কি না,চূলায় ছড়াবে না ডাস্টবিনে ফেলে দিবে,এই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।খালি হাতে বাসায় ফিরলেও রক্ষা নেই। মাছের সাথে তরকারিটা কি হবে।কাঁচা লংকাটা তাজা কি না, এ সব বাড়তি চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করতে থাকে।পাছে ভয় বাজারের তালিকা থেকে কোন পর্দটা বাদ পড়ে যায় কি না।
হাজার টেনশানের পর বাজারের বেগটা ভরে আনে গলা পর্যন্ত।ঘড়ির কাঁটা দেখে যথা সময়ে বাজার নিয়ে হাজির হয় খালু বাসায়।বুয়ার হাতে বেগটা ধরিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে খালার গিটারের টং টং ঝংকার শুনার জন্য। সবাই জানি কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না, কুকুরের লেজে সাত মন ঘি দিলেও লেজ সোজা হয় না, কারো মেজাজও কোন দিন পাল্টায় না। এ ভাবেই সেদ্ধ হতে থাকে সুখের ঘরে দুঃখের যন্ত্রণা।
মাছ, মাংস, সঙ্গে সবজির বহর মনের মত হলে তো কথাই নেই।,রান্নার সুস্বাদু গন্ধে সে দিন সমগ্র বাসায় মৌ মৌ করতে থাকে।সবার ভূরি ভোজের আয়োজনটা হয় লোভনীয়।নিজের পেটে পড়ুক আর নাই পড়ুক, সবার প্লেইটে খাবার তুলে দেয় খালা নিজের হাতে।মাছের মাথাটা বা বড় পেটিটা তুলে দেয় খালুর থালায়। এখানেই শেষ নয় খুশীর ঝলকানি উপছে পড়ে ঘরের দরজা জানালায়।
আহা কি শান্তি। ই- য়া বড় দীর্ঘ মেয়াদী নিঃশ্বাস ফেলে খালু বেচারা বিকেলের বিশ্রামে যায় নিশ্চিন্তে। মনে হয় জগৎ খ্যাত মহাসুখের সংসার খালা খালুর। ঘরের সামনের বিড়ালটিও করে মহাসুখের ঘোষণা।
আরামের গা বালিশে হেলিয়ে দিয়ে খালু মনে মনে ভাবতে থাকে -আহারে আমার গিন্নির মাথাটা একটু ঠান্ডা থাকলে, শান্তির আকাশটাকে টেনে ঘরে নিয়ে আসা যেতো।
লেখকঃ – কবি, কলামিস্ট