টঙ্গীতে চাঁদা দাবির মামলায় হাজতে ছিলেন আসামি। বাদী কৌশলে হাজতখানার সামনে থেকে ১৯ লাখ টাকা গুনে নেন আসামির কাছ থেকে। এই ভিডিও ছড়িয়ে যায় বিভিন্ন মাধ্যমে। ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে এলে হাজতখানার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওসি ও এক এসআইসহ তিন পুলিশ কমকর্তাকে শোকজ করেছে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানায় এই ঘটনা ঘটে।জানা যায়, ২৬ অক্টোবর রাতে যৌথবাহিনী মোশতাক মোশাররফ টুটুল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে টঙ্গী পূর্ব থানায় সোপর্দ করে। থানায় আইনি সহায়তা দিতে গিয়ে আটক হন মো. ইব্রাহিম হোসেন নামে একজন আইনজীবী। আরিফ হোসেন নামে একজন টুটুলসহ দুই জনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা করেন।
ওই মামলায় আপোষের মাধ্যমে দুই আসামি ওইদিনই জামিনে মুক্ত হন। এর কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট হয়। টাকা লেনদেনের ৫২ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজটি এ প্রতিনিধির হাতে এসেছে।ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার ভেতরে হলুদ গেঞ্জি ও সাদা প্যান্ট পরে বসে রয়েছেন টুটুল।
লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে হাজতখানার ভেতর থেকে গুনে গুনে এক হাজার, ৫০০ ও ১০০ টাকার বান্ডিল দুই ব্যক্তির সঙ্গে হাতবদল করছেন তিনি। হাজতের বাইরে থেকে সেই টাকার বান্ডিল গুনে কালো ও সাদা রঙের দুটি শপিং ব্যাগে রাখছেন আরো দুজন। পাশে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পোশাক পরিহিত এক পুলিশ সদস্য।ভিডিওর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাজতখানার ভেতর থেকে টাকা গুনে দিচ্ছেন মোশতাক মোশাররফ টুটুল। আর পুলিশের উপস্থিতিতে হাজতির কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও চাঁদাবাজি মামলার বাদী আরিফুর রহমান খান।
ভুক্তভোগী আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওইদিন ভুল তথ্যে টুটুলকে আটক করে যৌথবাহিনী। টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করার পর আইনজীবী হিসেবে সহায়তা দিতে গেলে আমাকেও আটক হতে হয়েছে। আটকের পর চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে। এর আগে টুটুল বা আমার নামে কোনো মামলা ছিল না।’
টুটুল বলেন, ‘আমি হাজারখানায় আটক থাকা অবস্থায় আমার প্রতিপক্ষ আরিফুর রহমান খান ও মহিউদ্দিন আমার কাছ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা আদায় করেছে।’
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এলাকার লোককে দেখতে থানায় গিয়েছিলাম। কোনো টাকা লেনদেনের সাথে আমি জড়িত নই।’
চাঁদাবাজি মামলার বাদী ও হাজতখানার সামনে টুটুলের নিকট থেকে ১৯ লাখ টাকা গুণে নেওয়া আরিফ হোসেনকে ফোন দিলে প্রথমবার তিনি ফোন রিসিভ করেননি। দ্বিতীয়বার তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি কায়সার আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি থানায় ছিলাম না। বিষয়টি আমি জানি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও পেয়ে হাজতখানার দায়িত্বরত কনস্টেবল মুক্তাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামানকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগে বদলি এবং ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। আমাকেও শোকজ করা হয়েছে।’