ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেগুনের যত্নে ভাগ্যবদলের নিরন্তর চেষ্টা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নিজের জমি নেই, ভাড়া করে অন্যের জমি নিয়েছেন। তার মধ্যে দুইটি প্লটকে আলাদা করে দুই জায়গায় লাগিয়েছিলেন প্রথমে টমেটো।

উদ্দেশ্য ছিল শীতের শুরুতে আগাম ফসল তুলে বেশি লাভে বাজার ধরতে পারবেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া তার সেই স্বপ্নের শুকনো দানাগুলোতে পানি ঢেলে দিল। কার্তিকের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে টমেটোর বিশাল ক্ষতি হয়ে গেলো। এখন দৃষ্টি দৈনিক যত্নআত্তি তার দ্বিতীয় ফসল বেগুনের দিকে।

কৃষিতে তার বিনিয়োগকৃত অর্থ লভ্যাংশসহ তুলে আনতে দিনের পর দিন গভীর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন বেগুন গাছগুলোকে। যদি এই ফসল দ্বারা সাময়িক ভাগ্যবদল হয় তার। প্রথম ফসলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এই কৃষকের নাম সাইফুল। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই কৃষক বেগুন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লম্বা করে বাঁশ বেঁধে গাছগুলোকে শক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরায় তার উৎপাদিত পণ্যের ছবি ধারণ চাইলে তিনি আপত্তি তুলেন।

পরে কথা বলে জানা যায়, এই আপত্তির কারণ আত্মক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি তিনি এখন পর্যন্ত।

সাইফুল তার ক্ষেতের প্রথম ফসল সম্পর্কে বলেন, আমার জমির মোট ২৪ শতক (শতাংশ) জায়গার ১৬ শতকে ১ হাজার চারা রোপণ করি। প্রতি পিস চারা দাম পড়ে খরচ বাবদ ১৫ টাকা করে। লাগানোর কিছুদিন পরেই গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে প্রচুর প্রচুর ফুল এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টি সব শেষ করে দিয়েছে। এতে প্রায় আমার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। যদি সবগুলো টমেটো ধরতো তবে বাজারে পাইকারি মূল্য ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি প্রতি পেতাম।

বেগুন চাষ সম্পর্কে বলেন, টমেটোর কিছুদিন পরেই আষাঢ় মাসে পার্পোল কিং বেগুন রোপণ করি। এটা বারোমাসি বেগুন। প্রায় দুই বছর পর্যন্ত এই গাছের কার্যকারিতা থাকবে। এই গাছগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। কিছু দিন আগে থেকে বেগুন ধরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রথম রাউন্ডে প্রায় ১২২ কেজি বেগুন পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছি। দাম ভালোই পেয়েছি। আবারও ১০ দিন পরে দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্ষেত থেকে বেগুনগুলো তুলবো। খরচের বিষয়ে ওই কৃষক বলেন, টমেটোতে খরচ বেশি। আমার পরিশ্রম বাদে শ্রমিকমজুরি ও ওষুধ-সার বাবদ এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

সারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে বেশির ভাগই গোবর সার দিয়েছি। এছাড়াও ইউরিয়া, সালফার, জিংক, রোটন, বোরন প্রভৃতি সার দেওয়া হয়েছে।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় কৃষি বিভাগ আমার কোনো খোঁজ-খবর নেইনি। কোনো ধরনের সার-বীজ কিংবা সরকারি কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা কিছুই পাইনি। তাহলে আপনাকে ছবি তুলতে দিয়ে আমার কি লাভ হবে?

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজ বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। আমি এই শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমি শিগগিরই এই কৃষকের উৎপন্নকৃত টমেটো এবং বেগুন প্লটটি পরিদর্শনে যাবো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বেগুনের যত্নে ভাগ্যবদলের নিরন্তর চেষ্টা

আপডেট টাইম : ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নিজের জমি নেই, ভাড়া করে অন্যের জমি নিয়েছেন। তার মধ্যে দুইটি প্লটকে আলাদা করে দুই জায়গায় লাগিয়েছিলেন প্রথমে টমেটো।

উদ্দেশ্য ছিল শীতের শুরুতে আগাম ফসল তুলে বেশি লাভে বাজার ধরতে পারবেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া তার সেই স্বপ্নের শুকনো দানাগুলোতে পানি ঢেলে দিল। কার্তিকের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে টমেটোর বিশাল ক্ষতি হয়ে গেলো। এখন দৃষ্টি দৈনিক যত্নআত্তি তার দ্বিতীয় ফসল বেগুনের দিকে।

কৃষিতে তার বিনিয়োগকৃত অর্থ লভ্যাংশসহ তুলে আনতে দিনের পর দিন গভীর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন বেগুন গাছগুলোকে। যদি এই ফসল দ্বারা সাময়িক ভাগ্যবদল হয় তার। প্রথম ফসলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এই কৃষকের নাম সাইফুল। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই কৃষক বেগুন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লম্বা করে বাঁশ বেঁধে গাছগুলোকে শক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরায় তার উৎপাদিত পণ্যের ছবি ধারণ চাইলে তিনি আপত্তি তুলেন।

পরে কথা বলে জানা যায়, এই আপত্তির কারণ আত্মক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি তিনি এখন পর্যন্ত।

সাইফুল তার ক্ষেতের প্রথম ফসল সম্পর্কে বলেন, আমার জমির মোট ২৪ শতক (শতাংশ) জায়গার ১৬ শতকে ১ হাজার চারা রোপণ করি। প্রতি পিস চারা দাম পড়ে খরচ বাবদ ১৫ টাকা করে। লাগানোর কিছুদিন পরেই গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে প্রচুর প্রচুর ফুল এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টি সব শেষ করে দিয়েছে। এতে প্রায় আমার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। যদি সবগুলো টমেটো ধরতো তবে বাজারে পাইকারি মূল্য ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি প্রতি পেতাম।

বেগুন চাষ সম্পর্কে বলেন, টমেটোর কিছুদিন পরেই আষাঢ় মাসে পার্পোল কিং বেগুন রোপণ করি। এটা বারোমাসি বেগুন। প্রায় দুই বছর পর্যন্ত এই গাছের কার্যকারিতা থাকবে। এই গাছগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। কিছু দিন আগে থেকে বেগুন ধরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রথম রাউন্ডে প্রায় ১২২ কেজি বেগুন পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছি। দাম ভালোই পেয়েছি। আবারও ১০ দিন পরে দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্ষেত থেকে বেগুনগুলো তুলবো। খরচের বিষয়ে ওই কৃষক বলেন, টমেটোতে খরচ বেশি। আমার পরিশ্রম বাদে শ্রমিকমজুরি ও ওষুধ-সার বাবদ এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

সারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে বেশির ভাগই গোবর সার দিয়েছি। এছাড়াও ইউরিয়া, সালফার, জিংক, রোটন, বোরন প্রভৃতি সার দেওয়া হয়েছে।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় কৃষি বিভাগ আমার কোনো খোঁজ-খবর নেইনি। কোনো ধরনের সার-বীজ কিংবা সরকারি কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা কিছুই পাইনি। তাহলে আপনাকে ছবি তুলতে দিয়ে আমার কি লাভ হবে?

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজ বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। আমি এই শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমি শিগগিরই এই কৃষকের উৎপন্নকৃত টমেটো এবং বেগুন প্লটটি পরিদর্শনে যাবো।