ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেই গ্রামের পথে প্রান্তরে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আমার সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীরা কে কোথায় আছো জানি না। আশা করি ভালো আছো। মাঝে মধ্যে তোমরা অনেকেই কথা বলে থাকো, ভালো মন্দ শেয়ার করো,তখন আবেগে আপ্লুত হই। বেঁচে থাকার সাহস পাই। কখনও ছুটে যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্তরে। আমাদের কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে ছুটিয়ে আড্ডা দেই আর ঝালমুড়ি খাই।
ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে একুশে বই মেলায় এক চক্কর ঘুরে আসি। প্রেস ক্লাবে, জাতীয় গ্রন্থাগার অডিটরিয়ামে আলোচনা প্রোগ্রামে অংশ গ্রহন করি। ঘুরে আসি লালবাগকেল্লা, বঙ্গুবন্ধু যাদুঘরে, খেয়ে নেই রুচিশীল খাবার ঘরে। বিশ্ববিদ্যালয় বা বিসিএস পরীক্ষায় কে কেমন ফলাফল করছে তার খোঁজ খবর নেই। এই তো ছোট্ট জীবনের ক্ষুদ্র সময় করি ব্যয়।
চোখের সামনে ভেসে উঠে তোমাদেরকে সেই কলম-বই-খাতায় সংযুক্ত করার লড়াই সংগ্রাম।পড়ার বিকল্প নাই। পড় পড় পড় – এই বলে কানের কাছে সব সময় ঘ্যান ঘ্যান করতাম। স্বপ্নের জীবন গড়তে হলে পড়তে হবে।অনেকেই আমার উপদেশ বাণী কানে তুলে নিজেকে সাজিয়েছ মহামূল্যবান ফুলদানিতে। গর্ব করি তোমাদের নিয়ে। আবার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জীবন সংগ্রাম দেখে কষ্ট পাই। তারাও বলে — মেডাম সময় থাকতে পড়াশোনা করার গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। তখন নিজেকে অপরাধী দায়ী করি– আমরা, শিক্ষকরা সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। তাদেরকে পৌঁছে দিতে পারিনি কাঙ্খিত লক্ষে্।
১৯৯৮ সালে আর এস আইডিয়েল কলেজটি কিশোরগঞ্জ সদর থানার বিন্নাটি ইউনিয়নে কালটিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রদ্ধা জানাই তাদের প্রতি যারা শ্রম ঘাম,দোয়া, আর্শিবাদ,পদধূলি দিয়ে আধঁাকরে দুর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম দিয়েছিলেন। বিশেষ করে প্রতিষ্টাতা সদস্য এডভোকেট মো. আবুল হাশেস ও প্রতিষ্টাতা সদস্য প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন উভয়কে অবনত চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই। আমি অবলা নারী অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়ে জড়িয়েছিলাম অত্র প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে। এক গুচ্ছ তরুন মেধাবী শিক্ষ্ক, গর্ভনিংবডির  সদস্য,কর্মচারি ছিলো আমার সহযোদ্ধা হিসেবে কলেজটির সেবায়।
মহামারী করোনার দূর্যোগ ২০২০ এ ১ মার্চ আমি অবসরে গিয়েছি। সেই ১৯৮৪ এ শুরু করেছিলাম প্রায় ৩৫ বছর পেরিয়ে ২০২০ এ ফুরিয়েছে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকতা। তখন সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় আমাদের প্রতিষ্ঠানও ছিলো বন্ধ। কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ বা  প্রাণের আবেগ বিনিময় ছাড়াই চলে যাই নির্বাসনে। সেই থেকে আট মাস যাবৎ ঘরবন্দি জীবন যাপন করছি। কাজ নাই তো খই ভাজ। আমিও তাই করছি। ছাই ভষ্ম লিখে যাচ্ছি, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, কারো উপকারে আসুক বা না আসুক।
মনে পড়ে তোমাদের -?- প্রায় সময়ই পিন পত্তন শব্দটি না করে শ্রেণি শিক্ষা চলা কালিন সময়ে সর্ব শেষ বেঞ্চে বসে যেতাম। শিক্ষক কি পড়াচ্ছে, বিষয় বস্তু উপস্থান করতে পারছে কি না, সর্বশেষ বেঞ্চের শিক্ষার্থী লেকচার শুনতে পারছে কি না। আবার শিক্ষার্থীরা ক্লাশে মনযোগ দিচ্ছে কি না, দুষ্টামি করে শ্রেণি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে কি না ইত্যাদি নানা বিষয় তদারকি করে বেশ আনন্দ বোধ করতাম। মনে করতাম আল্লাহ প্রদত্ত এই সমস্ত অর্পিত দাযিত্ব পালন করা উচিৎ।
ভর্তির পর প্রথম  যে ওরিয়েন্টেশাণ ক্লাশ বা পরিচিতি মিটিং হতো, সে দিন লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিতাম আমরা শিক্ষকরা। আমি মেয়েদের উদ্দেশে বলতাম –তোমরা মাটির দিকে চোখ রেখে চলা ফেরা করবে। ছেলেরা তোমাদের ভাই। তাদের সাথে মিলে মিশে পড়াশোনা করবে, তবে অবশ্যই শালিনতা রজায় রেখে। ছেলেদেরকে ওয়ারর্নিং  দিয়ে বলেছি — সাবধান মেয়েদেরকে কোন ধরনের বিরক্ত করবে না। বরং ছোট বোন ভেবে স্নেহ যত্ন করবে। আমার মোবাইল নম্বারটি দিয়ে বলেছি– যে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাকে জানাবে,আমাকে পাশে পাবে।
কলেজে প্রথম দিনের স্মৃতিগুলি — এই শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে জমা দিও। প্রথম তিন জনকে ছায়াবীথি ক্লাবের পক্ষ থেকে পুরস্কার দেয়া হবে। যে ক্লাবটি আমার অর্থায়নে পরিচালিত হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারলে এই ক্লাবের পক্ষ থেকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হবে। যার ব্যয়ভার আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহন করবো। আশা করি কলেজের শুনাম রক্ষা করে,দেশের ও দশের মুখ উজ্জল করবে।
তোমাদেরকে পড়া লেখায় সম্পৃক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। তারুণ্যের উচ্ছলতায় তোমরা বড়ই অবুঝ। ফেইজ বুক, মোবাইলে ডুবে থাকতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করো। সোনালি সময় যে হেলায় খেলায় হারিয়ে যাচ্ছে, তা মানতে চাও না। আমি কত অনয় বিনয় করে ক্লাশ করতে বলেছি, তা আমার দেহের প্রতিটি কোষ জানে। কম উপস্তিতির তালিকা ধরে ফোন করে অভিভাবকে অবহিত করেছি। তারপরও ৭০% উপস্তিতি নিশ্চিত করতে পারি নাই। এমন কি এক প্রোগ্রামে আবেগ আপ্লুত হয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছি, ক্লাশে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য।
তোমাদের অভিভাবকরাও অসচেতন। তাদের সন্তান কোন ক্লাশে পড়ে তাও বলতে পারেন না। কোথায় যায়, কি করে তারখোঁজ রাখেন না। শুধু হাত খরচ, মোবাইলের ব্যয়,ঠোঁটের আদর,  স্নেহ যত্ন বিলিয়ে দেন পানির মত। আমি চোখ রাখি তোমাদের পেছনে পেছনে। গেইটে দাঁড়িয়ে  থাকি দারোয়ানের পাশে। কলেজে আসলেও ক্লাশ করতে চাও না।আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। সে দিকেও রাখি চোখ। হায়রে পেরেশানি হয়েছি। তা কি এতো সহজেই যাবো ভুলে?
ওয়াল টপকে ছেলেরা, মেয়েরা পালিয়ে যেতো ভাঙ্গা ওয়ালের নীচ দিয়ে। বাবা মা কি করবে, আড্ডা শেষে সন্তান তো সময় মতিই বই হাতে বাড়ি ফিরে। টেষ্টে ফেইল করলে, মা বাবা যখন সুপারিশ নিয়ে আসতো, কষ্টে আমার বুক ফেটে যেতো। হায়রে অবুঝ এক দিন সব বুঝবে। কিন্তু তখন আর সময় থাকবে না। করবে শুধু হায় হায়। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ভিটে মাটি বিক্রি করে দেবে বিদেশ পাড়ি।তার পরের কাহিনী নাই-বা বললাম।
অঁজ পাড়াগাঁয়ের এই কলেজ থেকে প্রতিবছরই এপ্লাস পাইতো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো সোনার টুকরো শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা মধুর সুসম্পর্ক বজায় ছিলো,যা স্মৃতির ডায়রীতে আজীবন স্বপ্ন গাঁথা হয়ে থাকবে। আমি তো সুযোগ পেলে তোমাদের সাথে ক্যামেরা বন্দি হতাম।ফেইজ বুকে ঘুরছে সেই ছবিগুলি।জানি না কত দিন ঘুরবে।
পরিশেষে বলতে চাই—–তোমারা আসলেই কি পেরেছিলে আমায় বুঝতে?চাইবে কি কোন দিন হেলায় অবহেলায় খুঁজতে? এভাবেই আসুন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেই গ্রামের পথে প্রান্তরে।
লেখকঃ উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেই গ্রামের পথে প্রান্তরে

আপডেট টাইম : ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আমার সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীরা কে কোথায় আছো জানি না। আশা করি ভালো আছো। মাঝে মধ্যে তোমরা অনেকেই কথা বলে থাকো, ভালো মন্দ শেয়ার করো,তখন আবেগে আপ্লুত হই। বেঁচে থাকার সাহস পাই। কখনও ছুটে যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্তরে। আমাদের কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে ছুটিয়ে আড্ডা দেই আর ঝালমুড়ি খাই।
ওদেরকে সঙ্গে নিয়ে একুশে বই মেলায় এক চক্কর ঘুরে আসি। প্রেস ক্লাবে, জাতীয় গ্রন্থাগার অডিটরিয়ামে আলোচনা প্রোগ্রামে অংশ গ্রহন করি। ঘুরে আসি লালবাগকেল্লা, বঙ্গুবন্ধু যাদুঘরে, খেয়ে নেই রুচিশীল খাবার ঘরে। বিশ্ববিদ্যালয় বা বিসিএস পরীক্ষায় কে কেমন ফলাফল করছে তার খোঁজ খবর নেই। এই তো ছোট্ট জীবনের ক্ষুদ্র সময় করি ব্যয়।
চোখের সামনে ভেসে উঠে তোমাদেরকে সেই কলম-বই-খাতায় সংযুক্ত করার লড়াই সংগ্রাম।পড়ার বিকল্প নাই। পড় পড় পড় – এই বলে কানের কাছে সব সময় ঘ্যান ঘ্যান করতাম। স্বপ্নের জীবন গড়তে হলে পড়তে হবে।অনেকেই আমার উপদেশ বাণী কানে তুলে নিজেকে সাজিয়েছ মহামূল্যবান ফুলদানিতে। গর্ব করি তোমাদের নিয়ে। আবার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জীবন সংগ্রাম দেখে কষ্ট পাই। তারাও বলে — মেডাম সময় থাকতে পড়াশোনা করার গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। তখন নিজেকে অপরাধী দায়ী করি– আমরা, শিক্ষকরা সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। তাদেরকে পৌঁছে দিতে পারিনি কাঙ্খিত লক্ষে্।
১৯৯৮ সালে আর এস আইডিয়েল কলেজটি কিশোরগঞ্জ সদর থানার বিন্নাটি ইউনিয়নে কালটিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রদ্ধা জানাই তাদের প্রতি যারা শ্রম ঘাম,দোয়া, আর্শিবাদ,পদধূলি দিয়ে আধঁাকরে দুর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম দিয়েছিলেন। বিশেষ করে প্রতিষ্টাতা সদস্য এডভোকেট মো. আবুল হাশেস ও প্রতিষ্টাতা সদস্য প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন উভয়কে অবনত চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই। আমি অবলা নারী অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়ে জড়িয়েছিলাম অত্র প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে। এক গুচ্ছ তরুন মেধাবী শিক্ষ্ক, গর্ভনিংবডির  সদস্য,কর্মচারি ছিলো আমার সহযোদ্ধা হিসেবে কলেজটির সেবায়।
মহামারী করোনার দূর্যোগ ২০২০ এ ১ মার্চ আমি অবসরে গিয়েছি। সেই ১৯৮৪ এ শুরু করেছিলাম প্রায় ৩৫ বছর পেরিয়ে ২০২০ এ ফুরিয়েছে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকতা। তখন সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় আমাদের প্রতিষ্ঠানও ছিলো বন্ধ। কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ বা  প্রাণের আবেগ বিনিময় ছাড়াই চলে যাই নির্বাসনে। সেই থেকে আট মাস যাবৎ ঘরবন্দি জীবন যাপন করছি। কাজ নাই তো খই ভাজ। আমিও তাই করছি। ছাই ভষ্ম লিখে যাচ্ছি, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, কারো উপকারে আসুক বা না আসুক।
মনে পড়ে তোমাদের -?- প্রায় সময়ই পিন পত্তন শব্দটি না করে শ্রেণি শিক্ষা চলা কালিন সময়ে সর্ব শেষ বেঞ্চে বসে যেতাম। শিক্ষক কি পড়াচ্ছে, বিষয় বস্তু উপস্থান করতে পারছে কি না, সর্বশেষ বেঞ্চের শিক্ষার্থী লেকচার শুনতে পারছে কি না। আবার শিক্ষার্থীরা ক্লাশে মনযোগ দিচ্ছে কি না, দুষ্টামি করে শ্রেণি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে কি না ইত্যাদি নানা বিষয় তদারকি করে বেশ আনন্দ বোধ করতাম। মনে করতাম আল্লাহ প্রদত্ত এই সমস্ত অর্পিত দাযিত্ব পালন করা উচিৎ।
ভর্তির পর প্রথম  যে ওরিয়েন্টেশাণ ক্লাশ বা পরিচিতি মিটিং হতো, সে দিন লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিতাম আমরা শিক্ষকরা। আমি মেয়েদের উদ্দেশে বলতাম –তোমরা মাটির দিকে চোখ রেখে চলা ফেরা করবে। ছেলেরা তোমাদের ভাই। তাদের সাথে মিলে মিশে পড়াশোনা করবে, তবে অবশ্যই শালিনতা রজায় রেখে। ছেলেদেরকে ওয়ারর্নিং  দিয়ে বলেছি — সাবধান মেয়েদেরকে কোন ধরনের বিরক্ত করবে না। বরং ছোট বোন ভেবে স্নেহ যত্ন করবে। আমার মোবাইল নম্বারটি দিয়ে বলেছি– যে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাকে জানাবে,আমাকে পাশে পাবে।
কলেজে প্রথম দিনের স্মৃতিগুলি — এই শিরোনামে প্রবন্ধ লিখে জমা দিও। প্রথম তিন জনকে ছায়াবীথি ক্লাবের পক্ষ থেকে পুরস্কার দেয়া হবে। যে ক্লাবটি আমার অর্থায়নে পরিচালিত হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারলে এই ক্লাবের পক্ষ থেকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হবে। যার ব্যয়ভার আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহন করবো। আশা করি কলেজের শুনাম রক্ষা করে,দেশের ও দশের মুখ উজ্জল করবে।
তোমাদেরকে পড়া লেখায় সম্পৃক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। তারুণ্যের উচ্ছলতায় তোমরা বড়ই অবুঝ। ফেইজ বুক, মোবাইলে ডুবে থাকতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করো। সোনালি সময় যে হেলায় খেলায় হারিয়ে যাচ্ছে, তা মানতে চাও না। আমি কত অনয় বিনয় করে ক্লাশ করতে বলেছি, তা আমার দেহের প্রতিটি কোষ জানে। কম উপস্তিতির তালিকা ধরে ফোন করে অভিভাবকে অবহিত করেছি। তারপরও ৭০% উপস্তিতি নিশ্চিত করতে পারি নাই। এমন কি এক প্রোগ্রামে আবেগ আপ্লুত হয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছি, ক্লাশে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য।
তোমাদের অভিভাবকরাও অসচেতন। তাদের সন্তান কোন ক্লাশে পড়ে তাও বলতে পারেন না। কোথায় যায়, কি করে তারখোঁজ রাখেন না। শুধু হাত খরচ, মোবাইলের ব্যয়,ঠোঁটের আদর,  স্নেহ যত্ন বিলিয়ে দেন পানির মত। আমি চোখ রাখি তোমাদের পেছনে পেছনে। গেইটে দাঁড়িয়ে  থাকি দারোয়ানের পাশে। কলেজে আসলেও ক্লাশ করতে চাও না।আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। সে দিকেও রাখি চোখ। হায়রে পেরেশানি হয়েছি। তা কি এতো সহজেই যাবো ভুলে?
ওয়াল টপকে ছেলেরা, মেয়েরা পালিয়ে যেতো ভাঙ্গা ওয়ালের নীচ দিয়ে। বাবা মা কি করবে, আড্ডা শেষে সন্তান তো সময় মতিই বই হাতে বাড়ি ফিরে। টেষ্টে ফেইল করলে, মা বাবা যখন সুপারিশ নিয়ে আসতো, কষ্টে আমার বুক ফেটে যেতো। হায়রে অবুঝ এক দিন সব বুঝবে। কিন্তু তখন আর সময় থাকবে না। করবে শুধু হায় হায়। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ভিটে মাটি বিক্রি করে দেবে বিদেশ পাড়ি।তার পরের কাহিনী নাই-বা বললাম।
অঁজ পাড়াগাঁয়ের এই কলেজ থেকে প্রতিবছরই এপ্লাস পাইতো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো সোনার টুকরো শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা মধুর সুসম্পর্ক বজায় ছিলো,যা স্মৃতির ডায়রীতে আজীবন স্বপ্ন গাঁথা হয়ে থাকবে। আমি তো সুযোগ পেলে তোমাদের সাথে ক্যামেরা বন্দি হতাম।ফেইজ বুকে ঘুরছে সেই ছবিগুলি।জানি না কত দিন ঘুরবে।
পরিশেষে বলতে চাই—–তোমারা আসলেই কি পেরেছিলে আমায় বুঝতে?চাইবে কি কোন দিন হেলায় অবহেলায় খুঁজতে? এভাবেই আসুন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেই গ্রামের পথে প্রান্তরে।
লেখকঃ উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ।