ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে সাপগুলো মুহূর্তেই প্রাণ কেড়ে নিতে পারে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাপ, এমন একটি শব্দ যা কম বেশি সব ধরনের মানুষকেই ভয় পাইয়ে দেয়ার সামর্থ রাখে। পা বিহীন চিকন লম্বা দেহ, জ্বলজ্বলে চোখ এবং জীবন নাশকারী বিষের উপস্থিতি মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে যথেষ্ট। এই প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া কয়েকটি বিষধর সাপের উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।

১. কিং কোবরা

কিং কোবরা মূলত পুরো এশিয়াজুড়ে এবং বিশেষ করে ভারতের জঙ্গলে পাওয়া যায়। দেহ এবং বিষের ভয়াবহতার কারণে পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপগুলোর তালিকায় উপরের দিকে স্থান পেয়েছে এটি। কিং কোবরা মানুষের জন্যে জীবন নাশকারী হলেও এটি মূলত অন্য সাপ, টিকটিকি, ইঁদুর ইত্যাদি শিকার করতে পছন্দ করে।

একটি কিং কোবরার বিষে যে পরিমাণ নিউরোটক্সিন রয়েছে তা পূর্ণবয়স্ক একটি হাতিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্যারালাইজ করে মেরে ফেলার জন্যে যথেষ্ট। এছাড়া একটি কিং কোবরার কামড়ের পর চিকিৎসা করা না হলে মানুষের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৪০ শতাংশ।

২. ডেথ অ্যাডার

নাম শুনে অবাক হলেও এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এর নামে এবং কাজে হুবুহু মিল রয়েছে। এই সাপ মূলত অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি এবং এর কাছাকাছি কয়েকটি দ্বীপে পাওয়া যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। দ্রুততম সময়ে আঘাত করার ক্ষমতা রয়েছে এই সাপের।

ডেথ অ্যাডার মূলত শিকার করে খাওয়ার পক্ষে নয়। বরং এরা শান্তভাবে অপেক্ষা করে এবং শিকার কাছে এলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শিকারকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। আপনি যদি এর দ্বারা দংশনের শিকার হন তবে প্রাথমিকভাবে শুধু সামান্য অস্বস্তিবোধ করবেন। তবে মাত্র ৬ ঘন্টার মধ্যে আপনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) ও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় পড়বেন। এর কামড়ের পর অ্যান্টিবডি দিয়ে সুচিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যু অনিবার্য।

৩. ব্ল্যাক মাম্বা

কয়েক দশকে ব্ল্যাক মাম্বার কামড়ে আফ্রিকাজুড়ে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছে। এই সাপের পরপর ১২ বার দংশন করার ক্ষমতা রয়েছে যার প্রতিটি কামড়ে প্রচুর পরিমাণ নিউরোটক্সিন নির্গত হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক ব্ল্যাক মাম্বার একটি কামড়ে যে পরিমাণ বিষ নির্গত হয় তা ২৫ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম। বিনা চিকিৎসায় এই সাপের কামড়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১০০ ভাগ এবং সাধারণত দংশনের ১৫ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয়।

৪. ব্ল্যাক ব্যান্ডেড সি ক্রেট

সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ পানিতে এই ব্লাক ব্যান্ডেড সি ক্রেট প্রজাতির সাপ খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির সাপের বিষ কোবরার চেয়ে দশগুন বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই ব্যপারটিকে বিঙ্গো বলা হয়। এই প্রজাতির সাপকে সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপের কাতারে বেশ উপরের দিকে রাখা হয়। এই সাপ সাধারণত লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং মানুষের থেকে দূরে থাকে। তবে এদেরকে উষ্কে দিলে এরা আপনাকে কোনো ছাড় দেবে না।

৫. ইন্ডিয়ান কোবরা

ইন্ডিয়ান কোবরা ভারতের ‘বিগ ফোর’ এর মধ্যে একটি এবং একই সঙ্গে অন্যতম বিপজ্জনক। ভারতবর্ষে সর্পদোষের মধ্যে এরা শীর্ষে রয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও উপকথা অনুযায়ী এই সাপের বিশেষ কদর রয়েছে। সাপুড়েদের কাছেও এই ইন্ডিয়ান কোবরার বিশেষ কদর রয়েছে। যদি আপনি এই সাপের কামড়ের শিকার হন তবে স্নায়ুতন্ত্রে পক্ষাঘাতগ্রস্ততা অনুভব করবেন, যা ধীরে ধীরে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত করে হার্ট অ্যাটাকের দিকে ধাবিত করবে।

৬. স স্কেলড ভাইপার

এই স স্কেলড ভাইপার প্রজাতির সাপ সাধারণত এশিয়াতে, বিশেষ করে ভারত, চীনে পাওয়া যায়। এরা নিশাচর প্রজাতি এবং অকল্পনীয় ধরনের দ্রুতগতিসম্পন্ন। এরা দংশন করলে আপনার মুখ ফুলে যাবে এবং মুখ থেকে রক্তপাত ঘটবে। সেই সঙ্গে রক্তচাপের অবনতি ঘটবে, হৃদযন্ত্রের কাজ করার ক্ষমতা ও গতি হ্রাস পাবে এবং পরবর্তী চার-পাঁচ ঘণ্টার জন্য প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করবেন। আর যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এক দিনের মধ্যেই মৃত্যু সংঘটিত হতে পারে বা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দু’সপ্তাহ ধরে ভোগাতে পারে।

৭. কমন ক্রেট

কমন ক্রেট প্রজাতির এই সাপ ভারতের ‘বিগ ফোর’ এর সদস্য। সমতল মাথা বিশিষ্ট এই সাপ ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং যেকোনো জায়গায়ই জন্মাতে পারে। দিনের বেলায় আপনি এর মুখোমুখি হলে এরা সাধারণত লুকানোর চেষ্টা করবে এবং শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তবে রাতের বেলায় এর সামনে পড়লে এরা প্রথমে বিরক্ত হয় এবং পরে বেশি উত্তেজিত হলে দংশন করে। এর কামড়ের চিকিৎসা করা না হলে সাধারণত নার্ভের ক্ষতি, পেশীর পক্ষাঘাত, মস্তিষ্কের সমস্যা ইত্যাদি দেখা যায়। এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে।

৮. ইনল্যান্ড তাইপান

ইনল্যান্ড তাইপান মূলত বিষের কার্যকরীতার দিক দিয়ে ভয়ংকর বিপজ্জনক এক প্রজাতি৷ এর মূল কারণ হলো এই সাপের তাইপক্সিন এবং নিউরোটক্সিন এর মিশ্রণ, যা মানবদেহে প্রবেশের ফলে পক্ষাঘাত, ব্লাড হ্যামারেজ, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশির পচন ইত্যাদি মারাত্মক সব সমস্যা দেখা দেয়। এই প্রজাতির সাপ সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাস করে। এরা বেশ শান্ত, লাজুক ও দ্রত প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই সাপ আক্রমণ করলে যদি দ্রুত চিকিৎসা করা না হয় তবে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু ঘটতে পারে।

৯. রাসেল ভাইপার

রাসেল ভাইপার প্রজাতির সাপ মূলত সমগ্র এশিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ভারতের ‘বিগ ফোর’ এর অন্যতম ভয়ানক সাপ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং ‘ডাবোয়া’ নামে পরিচিত। এই প্রজাতির সাপের বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে বিস্তৃত বিচরণ, আক্রমনাত্মক স্বভাব, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস। এছাড়াও বিষাক্ত সাপের মধ্যে এই প্রজাতির সাপ সর্পদংশন ও মৃত্যু ঘটানোর দিক দিয়ে তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে।

১০. অ্যাথেরিস হিসপিডা

অ্যাথেরিস হিসপিডা দেখতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনন্য প্রজাতির এক সাপ। এদেরকে সাধারণত আফ্রিকার সকল ঘনবর্ষণপূর্ণ বনাঞ্চলে (রেইনফরেস্ট) পাওয়া যায়। এই সাপের চোখ অবিশ্বাস্য ধরনের বড় হয়ে থাকে এবং এদের বিষ ও বেশ ভয়ানক। সেই সঙ্গে এরা বেশ হিংস্র ও রাগী প্রকৃতির এবং কোনো ধরনের ছাপ ছাড়াই চলাফেরা করতে পারে। বর্তমানে এই সাপ নিয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো এর বিষের কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনিন নেই।

১১. মালায়ান স্নেক

এই প্রজাতির সাপ নীল ক্রেট নামেও পরিচিত। এদের সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া জুড়ে দেখা যায়। আপনি যদি সঠিক প্রতিষেধকও পান তবুও এর অর্ধেক কামড়ই যথেষ্ট খারাপ কিছু ঘটানোর জন্যে। এই মালায়ান স্নেকের এমন বিষ রয়েছে যা কোবরার বিষের তুলনায় ১৬ গুন বেশি বিষাক্ত ও শক্তিশালী। এর বিষ কত ভয়ংকর তা এর থেকেই অনুমান করা যায়।

১২. র‍্যা টল স্নেক

র‍্যা টল স্নেক প্রজাতির সাপ মূলত উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যায়। মারাত্মক বিপজ্জনক হওয়ায় এদেরকে ‘কিলিং মেশিন’ নামেও অভিহিত করা হয়। আবাসস্থল ধ্বংস, শিকার ও উচ্ছেদ অভিযানের কারণে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন এই প্রজাতির সাপ। এরা বিপজ্জনক বিষ এবং অনন্য দক্ষতার সঙ্গে অন্যান্য সাপ, পাখি ইত্যাদি শিকার করে থাকে। উত্তর আমেরিকাতে সাপের কামড়ের দিক দিয়ে এরা সর্বোচ্চ। তবে এদেরকে বিরক্ত বা উত্যক্ত করা না হলে সাধারণত কামড়ায় না। কিন্তু এদের কামড়ের চিকিৎসা দ্রুত করা না হলে তা খুব ভয়াবহ কিছু হতে পারে।

১৩. ফিলিপাইন কোবরা

ফিলিপাইন কোবরা- কোবরা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক সাপ। এর ভয়াবহতার অন্যতম কারণ হলো এটি ১০ ফুট দূর থেকে বিষ ছিটাতে পারে। এই সাপের বিষ তাৎক্ষনিকভাবে স্নায়ুতন্ত্রকে অচল করে দেবে যা কয়েক মিনিটের মধ্যে কার্ডিয়াক ও শ্বসনতন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে সক্ষম।

১৪. এলিফ্যান্ট ট্রাংক স্নেক

এই প্রজাতির সাপ মূলত দেখতে ভয়ংকর, বেশ মোটা এবং চর্বিযুক্ত। ইন্দোনেশিয়ার সকল জঙ্গলে এই জাতের সাপকে খুঁজে পাওয়া যায়। এই সাপের চামড়া হাতির চামড়ার মতো কুঁচকানো অবস্থায় থাকে যা ১০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। একই সঙ্গে এই চামড়া একজন মানুষকে পেচিয়ে ধরে ডুবো তলে নিয়ে যেতে যথেষ্ট বড়। এরা সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না।

১৫. অ্যানাকোন্ডা

অ্যানাকোন্ডার ব্যাপারে ভয়ংকর সত্য হলো এরা একটি মানুষকে সম্পূর্ণ আস্তভাবে গ্রাস করতে সক্ষম হলেও এদের মধ্যে মানুষকে মেরে ফেলার জন্যে পর্যাপ্ত বিষের অভাব রয়েছে। এই সাপ মূলত এদের বিশাল আকারের জন্য বিখ্যাত। অ্যানাকোন্ডা এর শিকারকে দেহের মধ্য বরাবর পেচিয়ে ধরে রেখে শিকারের অভ্যন্তরীণ সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দম বন্ধ করে মেরে ফেলে। এরপর একবারেই সম্পূর্ণ গ্রাস করে ফেলে।

১৬. বুমস্ল্যাং

সাধারণত দক্ষিণ আফ্রিকাতে এই প্রজাতির সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এরা মূলত গাছে আরোহনকারী, দ্রুতবেগী প্রজাতি। এদের দূর থেকে বিষ ছিটিয়ে দেয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে। এই সাপ প্রতি কামড়ে যথেষ্ট পরিমাণ বিষ নির্গত করতে সক্ষম যা খুব সহজেই মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই প্রজাতির সাপের দৃষ্টিশক্তি যথেষ্ট প্রখর। এরা ভালো দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়ার জন্য বারবার মাথা চারদিকে ঘুরাতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

যে সাপগুলো মুহূর্তেই প্রাণ কেড়ে নিতে পারে

আপডেট টাইম : ০৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মার্চ ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাপ, এমন একটি শব্দ যা কম বেশি সব ধরনের মানুষকেই ভয় পাইয়ে দেয়ার সামর্থ রাখে। পা বিহীন চিকন লম্বা দেহ, জ্বলজ্বলে চোখ এবং জীবন নাশকারী বিষের উপস্থিতি মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে যথেষ্ট। এই প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া কয়েকটি বিষধর সাপের উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।

১. কিং কোবরা

কিং কোবরা মূলত পুরো এশিয়াজুড়ে এবং বিশেষ করে ভারতের জঙ্গলে পাওয়া যায়। দেহ এবং বিষের ভয়াবহতার কারণে পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপগুলোর তালিকায় উপরের দিকে স্থান পেয়েছে এটি। কিং কোবরা মানুষের জন্যে জীবন নাশকারী হলেও এটি মূলত অন্য সাপ, টিকটিকি, ইঁদুর ইত্যাদি শিকার করতে পছন্দ করে।

একটি কিং কোবরার বিষে যে পরিমাণ নিউরোটক্সিন রয়েছে তা পূর্ণবয়স্ক একটি হাতিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্যারালাইজ করে মেরে ফেলার জন্যে যথেষ্ট। এছাড়া একটি কিং কোবরার কামড়ের পর চিকিৎসা করা না হলে মানুষের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৪০ শতাংশ।

২. ডেথ অ্যাডার

নাম শুনে অবাক হলেও এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এর নামে এবং কাজে হুবুহু মিল রয়েছে। এই সাপ মূলত অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি এবং এর কাছাকাছি কয়েকটি দ্বীপে পাওয়া যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। দ্রুততম সময়ে আঘাত করার ক্ষমতা রয়েছে এই সাপের।

ডেথ অ্যাডার মূলত শিকার করে খাওয়ার পক্ষে নয়। বরং এরা শান্তভাবে অপেক্ষা করে এবং শিকার কাছে এলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শিকারকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। আপনি যদি এর দ্বারা দংশনের শিকার হন তবে প্রাথমিকভাবে শুধু সামান্য অস্বস্তিবোধ করবেন। তবে মাত্র ৬ ঘন্টার মধ্যে আপনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) ও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় পড়বেন। এর কামড়ের পর অ্যান্টিবডি দিয়ে সুচিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যু অনিবার্য।

৩. ব্ল্যাক মাম্বা

কয়েক দশকে ব্ল্যাক মাম্বার কামড়ে আফ্রিকাজুড়ে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছে। এই সাপের পরপর ১২ বার দংশন করার ক্ষমতা রয়েছে যার প্রতিটি কামড়ে প্রচুর পরিমাণ নিউরোটক্সিন নির্গত হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক ব্ল্যাক মাম্বার একটি কামড়ে যে পরিমাণ বিষ নির্গত হয় তা ২৫ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম। বিনা চিকিৎসায় এই সাপের কামড়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১০০ ভাগ এবং সাধারণত দংশনের ১৫ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয়।

৪. ব্ল্যাক ব্যান্ডেড সি ক্রেট

সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ পানিতে এই ব্লাক ব্যান্ডেড সি ক্রেট প্রজাতির সাপ খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির সাপের বিষ কোবরার চেয়ে দশগুন বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। এই ব্যপারটিকে বিঙ্গো বলা হয়। এই প্রজাতির সাপকে সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপের কাতারে বেশ উপরের দিকে রাখা হয়। এই সাপ সাধারণত লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং মানুষের থেকে দূরে থাকে। তবে এদেরকে উষ্কে দিলে এরা আপনাকে কোনো ছাড় দেবে না।

৫. ইন্ডিয়ান কোবরা

ইন্ডিয়ান কোবরা ভারতের ‘বিগ ফোর’ এর মধ্যে একটি এবং একই সঙ্গে অন্যতম বিপজ্জনক। ভারতবর্ষে সর্পদোষের মধ্যে এরা শীর্ষে রয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও উপকথা অনুযায়ী এই সাপের বিশেষ কদর রয়েছে। সাপুড়েদের কাছেও এই ইন্ডিয়ান কোবরার বিশেষ কদর রয়েছে। যদি আপনি এই সাপের কামড়ের শিকার হন তবে স্নায়ুতন্ত্রে পক্ষাঘাতগ্রস্ততা অনুভব করবেন, যা ধীরে ধীরে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত করে হার্ট অ্যাটাকের দিকে ধাবিত করবে।

৬. স স্কেলড ভাইপার

এই স স্কেলড ভাইপার প্রজাতির সাপ সাধারণত এশিয়াতে, বিশেষ করে ভারত, চীনে পাওয়া যায়। এরা নিশাচর প্রজাতি এবং অকল্পনীয় ধরনের দ্রুতগতিসম্পন্ন। এরা দংশন করলে আপনার মুখ ফুলে যাবে এবং মুখ থেকে রক্তপাত ঘটবে। সেই সঙ্গে রক্তচাপের অবনতি ঘটবে, হৃদযন্ত্রের কাজ করার ক্ষমতা ও গতি হ্রাস পাবে এবং পরবর্তী চার-পাঁচ ঘণ্টার জন্য প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করবেন। আর যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এক দিনের মধ্যেই মৃত্যু সংঘটিত হতে পারে বা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দু’সপ্তাহ ধরে ভোগাতে পারে।

৭. কমন ক্রেট

কমন ক্রেট প্রজাতির এই সাপ ভারতের ‘বিগ ফোর’ এর সদস্য। সমতল মাথা বিশিষ্ট এই সাপ ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং যেকোনো জায়গায়ই জন্মাতে পারে। দিনের বেলায় আপনি এর মুখোমুখি হলে এরা সাধারণত লুকানোর চেষ্টা করবে এবং শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তবে রাতের বেলায় এর সামনে পড়লে এরা প্রথমে বিরক্ত হয় এবং পরে বেশি উত্তেজিত হলে দংশন করে। এর কামড়ের চিকিৎসা করা না হলে সাধারণত নার্ভের ক্ষতি, পেশীর পক্ষাঘাত, মস্তিষ্কের সমস্যা ইত্যাদি দেখা যায়। এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে।

৮. ইনল্যান্ড তাইপান

ইনল্যান্ড তাইপান মূলত বিষের কার্যকরীতার দিক দিয়ে ভয়ংকর বিপজ্জনক এক প্রজাতি৷ এর মূল কারণ হলো এই সাপের তাইপক্সিন এবং নিউরোটক্সিন এর মিশ্রণ, যা মানবদেহে প্রবেশের ফলে পক্ষাঘাত, ব্লাড হ্যামারেজ, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশির পচন ইত্যাদি মারাত্মক সব সমস্যা দেখা দেয়। এই প্রজাতির সাপ সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাস করে। এরা বেশ শান্ত, লাজুক ও দ্রত প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই সাপ আক্রমণ করলে যদি দ্রুত চিকিৎসা করা না হয় তবে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু ঘটতে পারে।

৯. রাসেল ভাইপার

রাসেল ভাইপার প্রজাতির সাপ মূলত সমগ্র এশিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ভারতের ‘বিগ ফোর’ এর অন্যতম ভয়ানক সাপ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং ‘ডাবোয়া’ নামে পরিচিত। এই প্রজাতির সাপের বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে বিস্তৃত বিচরণ, আক্রমনাত্মক স্বভাব, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস। এছাড়াও বিষাক্ত সাপের মধ্যে এই প্রজাতির সাপ সর্পদংশন ও মৃত্যু ঘটানোর দিক দিয়ে তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে।

১০. অ্যাথেরিস হিসপিডা

অ্যাথেরিস হিসপিডা দেখতে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনন্য প্রজাতির এক সাপ। এদেরকে সাধারণত আফ্রিকার সকল ঘনবর্ষণপূর্ণ বনাঞ্চলে (রেইনফরেস্ট) পাওয়া যায়। এই সাপের চোখ অবিশ্বাস্য ধরনের বড় হয়ে থাকে এবং এদের বিষ ও বেশ ভয়ানক। সেই সঙ্গে এরা বেশ হিংস্র ও রাগী প্রকৃতির এবং কোনো ধরনের ছাপ ছাড়াই চলাফেরা করতে পারে। বর্তমানে এই সাপ নিয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো এর বিষের কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনিন নেই।

১১. মালায়ান স্নেক

এই প্রজাতির সাপ নীল ক্রেট নামেও পরিচিত। এদের সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া জুড়ে দেখা যায়। আপনি যদি সঠিক প্রতিষেধকও পান তবুও এর অর্ধেক কামড়ই যথেষ্ট খারাপ কিছু ঘটানোর জন্যে। এই মালায়ান স্নেকের এমন বিষ রয়েছে যা কোবরার বিষের তুলনায় ১৬ গুন বেশি বিষাক্ত ও শক্তিশালী। এর বিষ কত ভয়ংকর তা এর থেকেই অনুমান করা যায়।

১২. র‍্যা টল স্নেক

র‍্যা টল স্নেক প্রজাতির সাপ মূলত উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যায়। মারাত্মক বিপজ্জনক হওয়ায় এদেরকে ‘কিলিং মেশিন’ নামেও অভিহিত করা হয়। আবাসস্থল ধ্বংস, শিকার ও উচ্ছেদ অভিযানের কারণে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন এই প্রজাতির সাপ। এরা বিপজ্জনক বিষ এবং অনন্য দক্ষতার সঙ্গে অন্যান্য সাপ, পাখি ইত্যাদি শিকার করে থাকে। উত্তর আমেরিকাতে সাপের কামড়ের দিক দিয়ে এরা সর্বোচ্চ। তবে এদেরকে বিরক্ত বা উত্যক্ত করা না হলে সাধারণত কামড়ায় না। কিন্তু এদের কামড়ের চিকিৎসা দ্রুত করা না হলে তা খুব ভয়াবহ কিছু হতে পারে।

১৩. ফিলিপাইন কোবরা

ফিলিপাইন কোবরা- কোবরা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক সাপ। এর ভয়াবহতার অন্যতম কারণ হলো এটি ১০ ফুট দূর থেকে বিষ ছিটাতে পারে। এই সাপের বিষ তাৎক্ষনিকভাবে স্নায়ুতন্ত্রকে অচল করে দেবে যা কয়েক মিনিটের মধ্যে কার্ডিয়াক ও শ্বসনতন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে সক্ষম।

১৪. এলিফ্যান্ট ট্রাংক স্নেক

এই প্রজাতির সাপ মূলত দেখতে ভয়ংকর, বেশ মোটা এবং চর্বিযুক্ত। ইন্দোনেশিয়ার সকল জঙ্গলে এই জাতের সাপকে খুঁজে পাওয়া যায়। এই সাপের চামড়া হাতির চামড়ার মতো কুঁচকানো অবস্থায় থাকে যা ১০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। একই সঙ্গে এই চামড়া একজন মানুষকে পেচিয়ে ধরে ডুবো তলে নিয়ে যেতে যথেষ্ট বড়। এরা সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না।

১৫. অ্যানাকোন্ডা

অ্যানাকোন্ডার ব্যাপারে ভয়ংকর সত্য হলো এরা একটি মানুষকে সম্পূর্ণ আস্তভাবে গ্রাস করতে সক্ষম হলেও এদের মধ্যে মানুষকে মেরে ফেলার জন্যে পর্যাপ্ত বিষের অভাব রয়েছে। এই সাপ মূলত এদের বিশাল আকারের জন্য বিখ্যাত। অ্যানাকোন্ডা এর শিকারকে দেহের মধ্য বরাবর পেচিয়ে ধরে রেখে শিকারের অভ্যন্তরীণ সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দম বন্ধ করে মেরে ফেলে। এরপর একবারেই সম্পূর্ণ গ্রাস করে ফেলে।

১৬. বুমস্ল্যাং

সাধারণত দক্ষিণ আফ্রিকাতে এই প্রজাতির সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এরা মূলত গাছে আরোহনকারী, দ্রুতবেগী প্রজাতি। এদের দূর থেকে বিষ ছিটিয়ে দেয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে। এই সাপ প্রতি কামড়ে যথেষ্ট পরিমাণ বিষ নির্গত করতে সক্ষম যা খুব সহজেই মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই প্রজাতির সাপের দৃষ্টিশক্তি যথেষ্ট প্রখর। এরা ভালো দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়ার জন্য বারবার মাথা চারদিকে ঘুরাতে পারে।