বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পান্তা ভাত বাঙালিদের জনপ্রিয় একটি খাবার। নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতকে পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখলে তৈরি হয়ে যায় পান্তা ভাত। বাঙালির উৎসব পহেলা বৈশাখের খাবারের তালিকায় পান্তার অনেক কদর আছে। তবে পান্তা ভাতের যেদিকটা সবচেয়ে উপকারী তা হলো পুষ্টিগুণ। চাল ভেদে পান্তা ভাতের ক্যালোরি কম বেশি হয়ে থাকে। শরীরের অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি দেয় পান্তা ভাত।
পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ: পান্তা ভাতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের পরিমাণ রান্না করা ভাতের তুলনায় বেশি থাকে। অন্যদিকে সোডিয়ামের পরিমান কম থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া ভিটামিন -বি ২ , ভিটামিন -বি ১২ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। পান্তা ভাত শরীরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে শরীরকে পানিশূন্যতা দূর করে। পান্তা গ্যাস্টিক রোগীর জন্যও উপকারী। তীব্র গরমে হিট-স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে পান্তা ভাত।
আমেরিকা নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশন-এর গবেষণা বলছে, ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পাকস্থলী প্যানক্রিয়াটিক অ্যামাইলেজসহ আরও কিছু এনজাইমের কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। ফলে পান্তা ভাতের জটিল শর্করাগুলো খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়া পান্তার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।
১. পেটের সমস্যার সমাধান।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়।
৩. শরীর সতেজ থাকে।
৪. শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৫. রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকে।
৬. হার্ট সুস্থ থাকে।
ভাত ও পান্তার গুনাগুণে পার্থক্য: ভাতের চেয়ে পান্তায় পুষ্টি বেশি, কারণ ভাতের তুলনায় পান্তা সহজে হজম হয়। ভাতের চেয়ে পান্তায় সোডিয়াম কম থাকায় রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, তবে এর সাথে লবন বেশি নেওয়া যাবে না। তবে ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া বা ইস্ট শর্করা ভেঙে ইথানল ও ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া যে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে এর ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায়। তখন পচনকারী ও অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।
আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষকের পরীক্ষায় উঠে এসেছে,১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন তৈরি হয়। সেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে আয়রন থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়া ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে পটাশিয়াম বেড়ে হয় ৮৩৯ মিলিগ্রাম এবং ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম। যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে ক্যালশিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম। এছাড়া পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে হয় ৩০৩ মিলিগ্রাম। সেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ ৪৭৫ মিলিগ্রাম। এছাড়া শরীরের বহু উপকারী ব্যকটেরিয়া পান্তা ভাতে তৈরি হয়।