ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা

বাঙালি কন্ঠ নিউজঃ সকাল সাতটা। রোকেয়া হলের সামনে থেকে কেয়াকে নিয়ে রিকশায় উঠল রানা। উদ্দেশ্য কেয়াকে মানিকগঞ্জের বাসে উঠিয়ে দেবে। কারণ কেয়া হল ছেড়ে বাসায় চলে যাচ্ছে।

—তুই তাহলে চলেই যাবি? কেয়াকে প্রশ্ন করে রানা।
—এখানে থেকে আর কি করব?
—চাকরির জন্য পড়ালেখা করবি, চাকরির চেষ্টা করবি।
—তুই কর। আমার চাকরি লাগবে না। আমি এখন বিয়ে করব।
—অত বিয়ে বিয়ে করছিস কেন?
—আরে বলদ এটাতো ফরজ কাজ, আদায় করতে হবে না?
—ওতো হাদিস বলিস না। তার চেয়ে বল তোর বাবুর্চি হওয়ার শখ হয়েছে।
—মানে কি?
—মানে তুই এখন তোর জামাইয়ের সংসারে বাবুর্চির পোস্টে জয়েন করার জন্য অস্থির হয়ে আছিস।
—হ্যাঁ, অস্থির হয়ে আছি। তোর কোনো সমস্যা আছে?
—আমার সমস্যা থাকবে কেন? তোর জীবন তোর সিদ্ধান্ত। বন্ধু হিসেবে খারাপ লাগছে, তাই বললাম। যদি শুধু বাবুর্চিই হবি, তাহলে এত পড়ালেখা করার কি দরকার ছিল?
—দরকার ছিল। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমার খুব শখ এমএ পাস বাবুর্চি হওয়ার। উত্তর শুনে খুশি হয়েছিস?
—তোর বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে?
—প্রায়। বাসায় কয়েকজনকে দেখে লিস্ট করে রেখেছে। এখন আমি দেখে রায় দিলেই কবুল।
—শোন, যে ছেলের ছোট বোন আছে, তাকে বিয়ে করবি।
—কেন?
—আমি তোর ননদকে বিয়ে করব। যাতে তোর সঙ্গে সব সময় দেখা করতে পারি।
—মাফ চাই। গত কয়েক বছর অনেক জ্বালাইছোস, আর না। প্রতিদিন তোর সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে আমি টায়ার্ড হয়ে গেছি। আর তা ছাড়া তোর মতো বিশৃঙ্খল মানুষের সঙ্গে আমার ননদের বিয়ে দিয়ে ওর জীবন নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার নাই।
—বিশৃঙ্খল মানুষ বলছিস কেন?
—বলব না? নিয়মিত শেভ করিস না। শার্ট পরিস কিন্তু ইন করিস না। চুল রাখছিস লম্বা, সেটাও আঁচড়াছ না। আরও শুনতে চাস? আয়নায় নিজেরে দেখ, উত্তর পেয়ে যাবি।
—বলিস কী? আমার অবস্থা কি এতই খারাপ? আমিতো জানতাম না! আমার মনে হয় তুই মিথ্যে বলছিস। দেখ রাস্তা দিয়ে যে মেয়েই যাচ্ছে, আমার দিকে তাকাচ্ছে।
—ওরা তোরে দেখছে না। ওরা আমাকে দেখছে। আর ভাবছে এত সুন্দর কিউট একটা মেয়ে এই বান্দরের সঙ্গে কেন? তুই তো আস্ত একটা পাগল।
—বুঝছি তুই জেলাস। আমার মতো ছেলেকে পাচ্ছিস না, তাই জ্বলেপুড়ে মরছিস। আর কি বললি, আমি পাগল? শোন পাগলরা কিন্তু ভালো স্বামী হয়। এরা বউকে খুব ভালোবাসে।
—পাগলের ভালোবাসা আমার দরকার নাই। এই রকম পাগলরে আমি নিজেও বিয়ে করব না। আমার ননদের সঙ্গেও দেব না। তুই অন্য জায়গায় চেষ্টা কর।
—তোর মতো বন্ধু যাদের আছে, তাদের আর শত্রুর দরকার নাই।
—দেখ তুই কত খারাপ। আমি চলে যাচ্ছি, অথচ তুই এখনো ঝগড়া করছিস।

ইচ্ছে করলে কেয়া আরও কিছুদিন হলে থাকতে পারত। কিন্তু থাকবে না। যেহেতু মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। রেজাল্টও বের হয়ে গেছে। তাই হল ছেড়ে বাসায় যেতে নির্দেশ দিয়েছে ওর বাবা। রানা কেয়ার খুবই কাছের বন্ধু। রানা কেয়াকে এত তাড়াতাড়ি হল ছাড়তে মানা করেছিল। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেয়াকে হল ছাড়তে হচ্ছে। কারণ কেয়া তাঁর বাবা মানে সালাম সাহেবের নির্দেশ কখনই অমান্য করে না।
কেয়া চলে যাওয়ার পর থেকেই রানা এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তি পাচ্ছে না। ওর প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। টিএসসিতে এসেছিল মনটা ভালো করার জন্য। কিন্তু এখানে এসে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। কারণ প্রতিদিন বিকেলে ক্লাস শেষে এখানেই সময় কাটাত ওরা। হাসাহাসি, ঝগড়া, মারামারি, গল্প আর সঙ্গে চলত ঝালমুড়ি, চা–সিগারেট। সিগারেটটা টানত রানাই, কিন্তু ধরাতো কেয়া। দু–এক টান দিয়ে তারপর রানাকে দিত। প্রথম দিকে কেয়া রানাকে সিগারেট খেতে অনেক মানা করছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। যখন দেখল রানাকে সিগারেট থেকে ফেরাতে পারবে না তখন কেয়াও সিগারেট টানা শুরু করল। বলত—নাটকে দেখেছি সিগারেটে নাকি ভিটামিন আছে। তুই একাকী ভিটামিন খাবি তা তো হয় না। আয় দুই বন্ধু একসঙ্গেই ভিটামিন খাই।
রানা বুঝতে পারছে না, কেয়া চলে যাওয়ার পর কেন ওর এত খারাপ লাগছে। কেয়া তো স্রেফ ওর বন্ধু। বন্ধুর জন্য খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু ওর এত অস্থির লাগছে কেন? বুকের ভেতর এত শূন্যতা তো লাগার কথা না। কেয়াকে ছাড়া তো দেখি একটা দিনই কাটছে না। সারাজীবন কীভাবে কাটবে। রানা আর কিছু ভাবতে পারছে না। এখনই কথা বলা দরকার কেয়ার সঙ্গে। নীলক্ষেতে গিয়ে ফোনের দোকান থেকে ফোন দেয় কেয়াকে।

—শোন তোর জন্য একটা চাকরি পেয়েছি। করবি?
—তোরে না বলছি আমি এখন চাকরি করব না। আমি এখন বিয়ে করব। আর শোন এই মুহূর্তে আমি ভীষণ ব্যস্ত। কথা বলতে পারব না। ঢাকা থেকে ছেলেপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছে। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে আমার জন্য। আমি রেডি হচ্ছি। শাড়ি পরা যে কী ঝামেলা তুই বুঝবি না।
—তুই পরেছিস শাড়ি! কেমনে? তোর সঙ্গে শাড়ি যায়?
—মানে কি? আমি কি জিনস পড়ে বিয়ে করব? শোন একটু আগে বাবা আমাকে দেখে বলল, শাড়িতে আমাকে নাকি পরির মতো লাগছে।
—পরিকে তো পরির মতোই লাগবে। আর দোস্ত তুই তো বিয়ে নিয়ে অনেক ব্যস্ত। কিন্তু এদিকে আমি তো মারা যাচ্ছি।
—তোর আবার কি হলো?
—আমি তোরে খুব মিস করছি।
—ঢং করিস না।
—সিরিয়াসলি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
—কেন? তুই তো বলিস আমি নাকি শুধু ঝগড়া করি। এখন মিস করছিস কেন?
—দোস্ত আমি তো জানতাম, তুই আমার শুধুমাত্র একজন বন্ধু। কিন্তু আজ তুই যাওয়ার পর থেকে বুঝলাম আমার ধারণা ভুল। আর যখনই ভাবছি দুদিন পর তুই অন্য কারও হয়ে যাবি, তখনই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দোস্ত বড়লোক স্বামীর বাবুর্চি না হয়ে তুই বরং আমার জীবনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে জয়েন কর। কীরে করবি না? বিশ্বাস কর দোস্ত আমি তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

ফোনের ওপাশে চুপ করে থাকে কেয়া। কি উত্তর দেবে বুঝতে পারে না। একই সঙ্গে আনন্দ বেদনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওর মনের মধ্যে। ও নিজেও বুঝতে পারেনি বন্ধুত্ব কখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। কি করবে ও এখন? বুঝে উঠতে পারছে না। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

—কীরে চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল।
—কষে একটা থাপ্পড় মারব। হারামজাদা, এত দিন লাগালি এই কথাটা বলতে। এত দেরি করে বললি? আমি এখন কি করব? এদিকে সবই প্রায় ঠিক। তুই আমারে আর কত জ্বালাবি?
—তুই ঢাকা চলে আয়।
—চলে আয় মানে? এটা কি বাংলা সিনেমা? তুই বললি আমি চলে এলাম।

কীরে মা তাড়াতাড়ি কর। সবাই তোর জন্য বসে আছে। এখন ফোন রাখ পরে কথা বলিস। মা তাগাদা দেয় কেয়াকে। কেয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে রেখে দেন। তারপর চলে যান রান্নাঘরের দিকে। আজ উনি ভীষণ ব্যস্ত।
কেয়া বুঝতে পারে না ও এখন কি করবে। তবে বুঝতে পারছে রানাকে ছাড়া ওর চলবে না। পাথরের মতো নিশ্চুপ বসে থাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। চোখের কোণে একবিন্দু জল উঁকি দেয়। গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে ফেলে। ও চায় না কেউ ওর ভালোবাসার অশ্রু দেখে ফেলুক। ছোট বোন এসে হাত ধরে কেয়াকে ড্রয়িংরুমে নেওয়ার জন্য। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই উঠে দাঁড়ায় কেয়া। বোনের সঙ্গে আস্তে আস্তে পা বাড়ায় ড্রয়িংরুমের দিকে। যেখানে সবাই বসে আছে শাড়ি পরা এক পরিকে দেখার অপেক্ষায়।

বি. দ্রষ্টব্য. ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের পার্থক্য কি সত্যি আমরা বুঝি? না বুঝলে আপনার ভালোবাসাও হারিয়ে যেতে পারে। কালকের অপেক্ষায় না থেকে আজই বলে দেন, মনের সব কথা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা

আপডেট টাইম : ০৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০১৭

বাঙালি কন্ঠ নিউজঃ সকাল সাতটা। রোকেয়া হলের সামনে থেকে কেয়াকে নিয়ে রিকশায় উঠল রানা। উদ্দেশ্য কেয়াকে মানিকগঞ্জের বাসে উঠিয়ে দেবে। কারণ কেয়া হল ছেড়ে বাসায় চলে যাচ্ছে।

—তুই তাহলে চলেই যাবি? কেয়াকে প্রশ্ন করে রানা।
—এখানে থেকে আর কি করব?
—চাকরির জন্য পড়ালেখা করবি, চাকরির চেষ্টা করবি।
—তুই কর। আমার চাকরি লাগবে না। আমি এখন বিয়ে করব।
—অত বিয়ে বিয়ে করছিস কেন?
—আরে বলদ এটাতো ফরজ কাজ, আদায় করতে হবে না?
—ওতো হাদিস বলিস না। তার চেয়ে বল তোর বাবুর্চি হওয়ার শখ হয়েছে।
—মানে কি?
—মানে তুই এখন তোর জামাইয়ের সংসারে বাবুর্চির পোস্টে জয়েন করার জন্য অস্থির হয়ে আছিস।
—হ্যাঁ, অস্থির হয়ে আছি। তোর কোনো সমস্যা আছে?
—আমার সমস্যা থাকবে কেন? তোর জীবন তোর সিদ্ধান্ত। বন্ধু হিসেবে খারাপ লাগছে, তাই বললাম। যদি শুধু বাবুর্চিই হবি, তাহলে এত পড়ালেখা করার কি দরকার ছিল?
—দরকার ছিল। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমার খুব শখ এমএ পাস বাবুর্চি হওয়ার। উত্তর শুনে খুশি হয়েছিস?
—তোর বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে?
—প্রায়। বাসায় কয়েকজনকে দেখে লিস্ট করে রেখেছে। এখন আমি দেখে রায় দিলেই কবুল।
—শোন, যে ছেলের ছোট বোন আছে, তাকে বিয়ে করবি।
—কেন?
—আমি তোর ননদকে বিয়ে করব। যাতে তোর সঙ্গে সব সময় দেখা করতে পারি।
—মাফ চাই। গত কয়েক বছর অনেক জ্বালাইছোস, আর না। প্রতিদিন তোর সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে আমি টায়ার্ড হয়ে গেছি। আর তা ছাড়া তোর মতো বিশৃঙ্খল মানুষের সঙ্গে আমার ননদের বিয়ে দিয়ে ওর জীবন নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার নাই।
—বিশৃঙ্খল মানুষ বলছিস কেন?
—বলব না? নিয়মিত শেভ করিস না। শার্ট পরিস কিন্তু ইন করিস না। চুল রাখছিস লম্বা, সেটাও আঁচড়াছ না। আরও শুনতে চাস? আয়নায় নিজেরে দেখ, উত্তর পেয়ে যাবি।
—বলিস কী? আমার অবস্থা কি এতই খারাপ? আমিতো জানতাম না! আমার মনে হয় তুই মিথ্যে বলছিস। দেখ রাস্তা দিয়ে যে মেয়েই যাচ্ছে, আমার দিকে তাকাচ্ছে।
—ওরা তোরে দেখছে না। ওরা আমাকে দেখছে। আর ভাবছে এত সুন্দর কিউট একটা মেয়ে এই বান্দরের সঙ্গে কেন? তুই তো আস্ত একটা পাগল।
—বুঝছি তুই জেলাস। আমার মতো ছেলেকে পাচ্ছিস না, তাই জ্বলেপুড়ে মরছিস। আর কি বললি, আমি পাগল? শোন পাগলরা কিন্তু ভালো স্বামী হয়। এরা বউকে খুব ভালোবাসে।
—পাগলের ভালোবাসা আমার দরকার নাই। এই রকম পাগলরে আমি নিজেও বিয়ে করব না। আমার ননদের সঙ্গেও দেব না। তুই অন্য জায়গায় চেষ্টা কর।
—তোর মতো বন্ধু যাদের আছে, তাদের আর শত্রুর দরকার নাই।
—দেখ তুই কত খারাপ। আমি চলে যাচ্ছি, অথচ তুই এখনো ঝগড়া করছিস।

ইচ্ছে করলে কেয়া আরও কিছুদিন হলে থাকতে পারত। কিন্তু থাকবে না। যেহেতু মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। রেজাল্টও বের হয়ে গেছে। তাই হল ছেড়ে বাসায় যেতে নির্দেশ দিয়েছে ওর বাবা। রানা কেয়ার খুবই কাছের বন্ধু। রানা কেয়াকে এত তাড়াতাড়ি হল ছাড়তে মানা করেছিল। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেয়াকে হল ছাড়তে হচ্ছে। কারণ কেয়া তাঁর বাবা মানে সালাম সাহেবের নির্দেশ কখনই অমান্য করে না।
কেয়া চলে যাওয়ার পর থেকেই রানা এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তি পাচ্ছে না। ওর প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। টিএসসিতে এসেছিল মনটা ভালো করার জন্য। কিন্তু এখানে এসে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। কারণ প্রতিদিন বিকেলে ক্লাস শেষে এখানেই সময় কাটাত ওরা। হাসাহাসি, ঝগড়া, মারামারি, গল্প আর সঙ্গে চলত ঝালমুড়ি, চা–সিগারেট। সিগারেটটা টানত রানাই, কিন্তু ধরাতো কেয়া। দু–এক টান দিয়ে তারপর রানাকে দিত। প্রথম দিকে কেয়া রানাকে সিগারেট খেতে অনেক মানা করছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। যখন দেখল রানাকে সিগারেট থেকে ফেরাতে পারবে না তখন কেয়াও সিগারেট টানা শুরু করল। বলত—নাটকে দেখেছি সিগারেটে নাকি ভিটামিন আছে। তুই একাকী ভিটামিন খাবি তা তো হয় না। আয় দুই বন্ধু একসঙ্গেই ভিটামিন খাই।
রানা বুঝতে পারছে না, কেয়া চলে যাওয়ার পর কেন ওর এত খারাপ লাগছে। কেয়া তো স্রেফ ওর বন্ধু। বন্ধুর জন্য খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু ওর এত অস্থির লাগছে কেন? বুকের ভেতর এত শূন্যতা তো লাগার কথা না। কেয়াকে ছাড়া তো দেখি একটা দিনই কাটছে না। সারাজীবন কীভাবে কাটবে। রানা আর কিছু ভাবতে পারছে না। এখনই কথা বলা দরকার কেয়ার সঙ্গে। নীলক্ষেতে গিয়ে ফোনের দোকান থেকে ফোন দেয় কেয়াকে।

—শোন তোর জন্য একটা চাকরি পেয়েছি। করবি?
—তোরে না বলছি আমি এখন চাকরি করব না। আমি এখন বিয়ে করব। আর শোন এই মুহূর্তে আমি ভীষণ ব্যস্ত। কথা বলতে পারব না। ঢাকা থেকে ছেলেপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছে। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে আমার জন্য। আমি রেডি হচ্ছি। শাড়ি পরা যে কী ঝামেলা তুই বুঝবি না।
—তুই পরেছিস শাড়ি! কেমনে? তোর সঙ্গে শাড়ি যায়?
—মানে কি? আমি কি জিনস পড়ে বিয়ে করব? শোন একটু আগে বাবা আমাকে দেখে বলল, শাড়িতে আমাকে নাকি পরির মতো লাগছে।
—পরিকে তো পরির মতোই লাগবে। আর দোস্ত তুই তো বিয়ে নিয়ে অনেক ব্যস্ত। কিন্তু এদিকে আমি তো মারা যাচ্ছি।
—তোর আবার কি হলো?
—আমি তোরে খুব মিস করছি।
—ঢং করিস না।
—সিরিয়াসলি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
—কেন? তুই তো বলিস আমি নাকি শুধু ঝগড়া করি। এখন মিস করছিস কেন?
—দোস্ত আমি তো জানতাম, তুই আমার শুধুমাত্র একজন বন্ধু। কিন্তু আজ তুই যাওয়ার পর থেকে বুঝলাম আমার ধারণা ভুল। আর যখনই ভাবছি দুদিন পর তুই অন্য কারও হয়ে যাবি, তখনই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দোস্ত বড়লোক স্বামীর বাবুর্চি না হয়ে তুই বরং আমার জীবনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে জয়েন কর। কীরে করবি না? বিশ্বাস কর দোস্ত আমি তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

ফোনের ওপাশে চুপ করে থাকে কেয়া। কি উত্তর দেবে বুঝতে পারে না। একই সঙ্গে আনন্দ বেদনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওর মনের মধ্যে। ও নিজেও বুঝতে পারেনি বন্ধুত্ব কখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। কি করবে ও এখন? বুঝে উঠতে পারছে না। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

—কীরে চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল।
—কষে একটা থাপ্পড় মারব। হারামজাদা, এত দিন লাগালি এই কথাটা বলতে। এত দেরি করে বললি? আমি এখন কি করব? এদিকে সবই প্রায় ঠিক। তুই আমারে আর কত জ্বালাবি?
—তুই ঢাকা চলে আয়।
—চলে আয় মানে? এটা কি বাংলা সিনেমা? তুই বললি আমি চলে এলাম।

কীরে মা তাড়াতাড়ি কর। সবাই তোর জন্য বসে আছে। এখন ফোন রাখ পরে কথা বলিস। মা তাগাদা দেয় কেয়াকে। কেয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে রেখে দেন। তারপর চলে যান রান্নাঘরের দিকে। আজ উনি ভীষণ ব্যস্ত।
কেয়া বুঝতে পারে না ও এখন কি করবে। তবে বুঝতে পারছে রানাকে ছাড়া ওর চলবে না। পাথরের মতো নিশ্চুপ বসে থাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। চোখের কোণে একবিন্দু জল উঁকি দেয়। গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে ফেলে। ও চায় না কেউ ওর ভালোবাসার অশ্রু দেখে ফেলুক। ছোট বোন এসে হাত ধরে কেয়াকে ড্রয়িংরুমে নেওয়ার জন্য। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই উঠে দাঁড়ায় কেয়া। বোনের সঙ্গে আস্তে আস্তে পা বাড়ায় ড্রয়িংরুমের দিকে। যেখানে সবাই বসে আছে শাড়ি পরা এক পরিকে দেখার অপেক্ষায়।

বি. দ্রষ্টব্য. ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের পার্থক্য কি সত্যি আমরা বুঝি? না বুঝলে আপনার ভালোবাসাও হারিয়ে যেতে পারে। কালকের অপেক্ষায় না থেকে আজই বলে দেন, মনের সব কথা।