বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কালের পরিক্রমায় আকার-আকৃতি ও টেকসই কোনটাই আগের মতো নেই মীর জুমলা গেটের। ১৮২০ থেকে ১৮২৫ সালে নির্মিত স্থাপনাটি যৌবন শেষ করেছে শত বছর আগেই। এখন কোনোরকম পার করছে শেষ সময়।
মীর জুমলা গেটটি ঢাকা গেট ও ময়মনসিংহ গেট নামেও পরিচিত। অনেকে রমনা গেট নামেও চেনেন। তবে এর বর্তমান অবস্থা দেখে বলা যাবে না এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
প্রায় দুইশত বছর আগে নির্মিত গেটটি নগরায়ন ও সংস্কারের কারণে এখন সামান্য অংশই টিকে রয়েছে। এটি ভালোভাবে সংরক্ষণের তাগিদ দিচ্ছেন ইতিহাসবিদরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থাপনাটির সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য সাংস্কৃতিক দুর্বলতাই দায়ী।
রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমির দিকে যেতে সড়কটিতে অবস্থিত এ গেট। এর একটি স্তম্ভ রোড ডিভাইডারে, অপর একটি স্তম্ভ তিন নেতার মাজারের পাশে। তিন অংশের এ গেটের অপর অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের প্রাচীরের ভেতর। ঝোপঝাড়ের আড়ালে থাকা হলুদ রঙের মীর জুমলার তোরণ ভালো করে খেয়াল না করলে কারো চোখেই পড়বে না।
২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী গেইটটির নাম ‘মীর জুমলার গেট’। তবে এটি ঢাকা গেট নামেও পরিচিত।
এ গেটের নির্মাণকাল নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে ইতিহাসবিদদের। জানা গেছে, এ গেটের নির্মাণকাল নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন এএইচ আদনানী। তার মতে, এগুলো মোগল আমলে তৈরি হয়নি। কারণ স্তম্ভ দুটির গড়ন ইউরোপীয় ধাঁচে মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে যুক্ত করার জন্য রেসকোর্সের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি রাস্তা তৈরি করেন তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। এ রাস্তার প্রবেশমুখে ডস দুটি স্তম্ভ তৈরি করেন। যা এখনও অটুট। বর্তমান নজরুল এভিনিউর রাস্তাটিও ডস তৈরি করেন। ‘বাগে বাদশাহী’ নামে মোগল উদ্যানটি ইসলাম খাঁর আমলে ছিলো রমনা অঞ্চলে (যেটি বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও পুরনো হাইকোর্ট ভবন)। হাইকোর্ট ভবনের পূর্ব কোণে একই ধরনের দুটি স্তম্ভ বিশিষ্ট প্রবেশপথ ছিলো। মূলত সে সময় এ স্তম্ভের মধ্য দিয়ে চলাচল ছিলো হাতির।
এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন নতুন সময়কে বলেন, এ গেট নিয়ে আমার লেখা ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী নামে একটি বই আছে। যেখানে গেটটি ইংরেজ আমলে নির্মিত হওয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তর ব্যাখ্যা রয়েছে। তার লেখা বইয়ে এএইচ আদনানীর সঙ্গে একমত পোষণ করা হয়েছে।
শনিবার সরজমিনে দেখা যায়, স্তম্ভগুলোতে সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। নতুন করে রঙ করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, এতো পুরাতন ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পোস্টার লাগানো। এছাড়া ঝোপঝাড়ের কারণে স্থাপনাটির যৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে।
এ গেট নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গ কথা বলে জানা যায়, এটি তারা দেখাশোনা করেন না।
গেইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এ বিষয়ে ঢাবির প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ নতুন সময়কে বলেন, তিন নেতার মাজারের সামনেই এ গেইট। আমরা মাজার যেভাবে দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করি, গেইটটিও একইভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করি। গেইটের একটি স্তম্ভ রোড ডিভাইডারের উপর।
ঐতিহাসিক এ স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, স্থাপনাটি খুব ছোট। সিটি কর্পোরেশন, ঐতিহাসিক স্থাপনা বিভাগ কিংবা সরকারের অন্য কোন সংস্থার পক্ষে পৃথকভাবে দেখশোনার বিষয়টি আসে না। তাই আমরাই দেখাশোনা করি।
গেইটটিতে পোস্টার লাগানোর ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন, এখন গেইটির তিন পাশে তো সার্বক্ষনিক তিনজন লোক রাখা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমাদের একটি ভ্রাম্যমাণ টিম ২৪ ঘণ্টাই থাকে। সামনে বেরিকেট ও মাজারের সঙ্গেই সংযুক্ত গেটটি। এমন অবস্থানে থাকার পরও ঐতিহাসিক একটি স্তম্ভে পোস্টার লাগানো আমাদের সংস্কৃতির দুর্বলতা।