ঢাকা , বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মক্কা ও মদিনায় মহানবী (সা.)-এর কর্মপন্থা যেমন ছিল

মহানবী (সা.) কেবল একজন নবী বা ধর্মপুরুষ ছিলেন না, বরং তিনি একজন মহান নেতা ও সফল রাষ্ট্রনায়কও ছিলেন। তিনি একটি বৈরী পরিবেশকে পরাভূত করে একটি আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। নবুয়ত লাভের পর থেকেই তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু করেন। মক্কার সংকটময় দিনগুলোতেও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।

মক্কায় তিন কর্মসূচি

আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে মক্কায় মহানবী (সা.) তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। তাহলো—

১. মানসিক গঠন : ইসলাম আগমনের পর নবীজি (সা.) মুসলমানদের মানসিক গঠনে মনোযোগী হন। তিনি তা সম্পন্ন করেন ঈমানের দৃঢ়তা, ইবাদত তথা আল্লাহর আনুগত্য ও রুহানিয়্যাত তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের দীক্ষা দানের মাধ্যমে। তিনি শিরকের বিপরীতে তাওহিদ, প্রবৃত্তির অনুসরণের বিপরীতে আল্লাহর আনুগত্য এবং পার্থিব মোহের বিপরীতে আল্লাহর নৈকট্যের শিক্ষা দেন।

তাফসিরবিদরা বলেন, মক্কায় অবতীর্ণ সুরাগুলোতে পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠীর বর্ণনা তুলনামূলক বেশি এসেছে। বস্তুত এসব বর্ণনা মক্কায় চলমান অত্যাচার ও নিপীড়নের মুখে মুসলমানদের মনোবল অটুট রাখতে সাহায্য করেছে এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী করেছে। কেননা এসব ঘটনায় জালিমদের পতন, মুমিনের বিজয় এবং মুমিনদের প্রতি অত্যাচারের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

২. সামাজিক গঠন : মহানবী (সা.) মক্কায় ইসলাম গ্রহণকারী মুসলমানদের নিয়ে একটি সমাজ (কমিউনিটি অর্থে) গঠন করেন।

তিনি মক্কার মুসলিমদের মধ্যে এই বিশ্বাস স্থাপন করেন যে একই সমাজে বসবাস করলেও মুসলমানরা স্বতন্ত্র সম্প্রদায়। তারা ঈমান ও ইসলামের সুতায় বাঁধা। বিপরীতে যারা আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের সঙ্গে মুসলমানরা সম্পর্কহীন। মুসলমানরা পরস্পরের সহযোগী ও আশ্রয়দাতা। তারা যথাসম্ভব সংঘবদ্ধ থাকবে, তারা পরস্পরকে দ্বিন পালনে সাহায্য করবে এবং মুশরিকদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে।
গোপন অথচ পৃথক ও স্বতন্ত্র এই সামাজিক মূল্যবোধ জাতি হিসেবে মুসলমানদের আত্মপ্রকাশ সহজ করেছিল।৩. অস্তিত্বের জানান দেওয়া : মহানবী (সা.) নবুয়তের তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে মক্কার ভেতরে দাওয়াত দিলেও ধীরে ধীরে দাওয়াতের পরিধি মক্কার বাইরে বিস্তৃত হতে থাকে। তিনি এই সময় হজ মৌসুমে মক্কায় আগমনকারী হাজিদের মধ্যে, আরবের বিখ্যাত মেলাগুলোতে এবং তায়েফসহ মক্কার নিকটবর্তী গোত্রগুলোর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে হাজির হন। এর ফলে মক্কার বাইরে যেমন ইসলামের আহ্বান পৌঁছে যায়, তেমনি স্থানীয় নেতৃত্ব ও শক্তিগুলো ইসলাম ও মুসলমানের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হয়, যা পরবর্তী সময়ে মদিনা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বীকৃতি লাভে সহায়ক হয়েছিল।

মদিনায় ছয় কর্মসূচি

ইসলামী রাষ্ট্র গঠন ও তার বিকাশে মহানবী (সা.) মদিনায় একাধিক কর্মসূচি হাতে নেন। এর ভেতর মৌলিক ছয়টি কর্মসূচি তুলে ধরা হলো।

১. মসজিদভিত্তিক সমাজ গঠন : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করার পর সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদই ছিল মুসলমানদের সব কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। ইবাদত-বন্দেগি, দ্বিনি শিক্ষা, সামাজিক কল্যাণ, সালিস-বিচারসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো মসজিদেই গ্রহণ করা হতো। মসজিদ মূলত মুসলিম সমাজকে একমুখী করেছিল, তাদেরকে একক নেতৃত্বের অধীনে একতাবদ্ধ করেছিল এবং তাদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলেছিল।

২. ভ্রাতৃত্ব বন্ধন : হিজরতের পর মহানবী (সা.) মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের ভেতরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আগন্তুক মুহাজির সাহাবিদের মদিনায় পুনর্বাসনের পথকে সহজ করেছিল এবং মুহাজির ও আনসারিদের মধ্যে মানসিক মেলবন্ধন তৈরিতে সাহায্য করেছিল। ফলে তারা পরস্পরের ভাই হয়ে দ্বিনি কাজে অংশ নিয়ে ছিল।

৩. বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে চুক্তি : মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এসব চুক্তির ফলে মদিনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে মুসলিমরা একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

৪. মদিনা সনদ : মদিনা সনদ মূলত বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সম্পাদিত চুক্তিগুলোর একটি সম্মিলিত রূপ। এসব লিখিত চুক্তি মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করায় তাকে মদিনা সনদ বলা হয়। মদিনা সনদ একই মদিনা রাষ্ট্রের মুসলিম ও অমুসলিম সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিল। মদিনা সনদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারা হলো—

(ক) বনু আওফের ইহুদিরা মুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশে এক উম্মতের মতো বসবাস করবে, কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।

(খ) মুসলিম ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের লোক নিজ নিজ আয় উপার্জনের দায়িত্বশীল থাকবে।

(গ) এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের লোকেরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি, সদিচ্ছা ও পারস্পরিক উপকারের ভিত্তিতে কাজ করে যাবে, কোনো অন্যায়-অনাচার কিংবা পাপাচারের ভিত্তিতে কাজ করবে না।

(ঘ) কেউ কারো ওপর জুলুম করলে মজলুমকে সাহায্য করা হবে।

(ঙ) এই চুক্তিভুক্ত সবার জন্যই মদিনায় কোনো প্রকার হাঙ্গামা সৃষ্টি করা কিংবা রক্তপাত ঘটানো যাবে না।

(চ) চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো কোনো নতুন সমস্যা কিংবা ঝগড়া-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ার উপক্রম হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর মীমাংসা করবেন।

৫. বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠানো : হুদাইবিয়ার চুক্তির পর মহানবী (সা.) প্রায় ১০ জন রাজা, বাদশাহ ও শাসকের কাছে ইসলামের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রোম সম্রাট কায়সার, পারস্য সম্রাট কিসরা, হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি, ইস্কান্দারিয়ার (মিসর) শাসক মুকাওকিস, ইয়ামামার শাসক সুমামা বিন উসাল, শামের শাসক হারিস বিন আবি শামার গাসসানি প্রমুখ। তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীর বেশির ভাগ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন। এর ফলে সভ্য পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ইসলামের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বময় ইসলামের আলোচনা শুরু হয়।

৬. সেনাবাহিনী গঠন : মহানবী (সা.) মদিনায় আগমনের পর একটি নিয়মিত ও শক্তিশালী সেনা বাহিনী গঠন করেন। তাঁর বাহিনী প্রচলিত বেতনভুক্ত বাহিনীর মতো না হলেও তাদের ভেতরে পেশাদারির কোনো অভাব ছিল না। নবীজি (সা.) তাদের নিয়মিত অনুশীলন ও অভিযানের মাধ্যমে সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। মক্কা বিজয়ের সময় নবীজি (সা.)-এর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১০ হাজার। মক্কা বিজয়ের পর তা সংখ্যায় আরো বৃদ্ধি পায়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

মক্কা ও মদিনায় মহানবী (সা.)-এর কর্মপন্থা যেমন ছিল

আপডেট টাইম : ৫৬ মিনিট আগে
মহানবী (সা.) কেবল একজন নবী বা ধর্মপুরুষ ছিলেন না, বরং তিনি একজন মহান নেতা ও সফল রাষ্ট্রনায়কও ছিলেন। তিনি একটি বৈরী পরিবেশকে পরাভূত করে একটি আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। নবুয়ত লাভের পর থেকেই তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু করেন। মক্কার সংকটময় দিনগুলোতেও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।

মক্কায় তিন কর্মসূচি

আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে মক্কায় মহানবী (সা.) তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। তাহলো—

১. মানসিক গঠন : ইসলাম আগমনের পর নবীজি (সা.) মুসলমানদের মানসিক গঠনে মনোযোগী হন। তিনি তা সম্পন্ন করেন ঈমানের দৃঢ়তা, ইবাদত তথা আল্লাহর আনুগত্য ও রুহানিয়্যাত তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের দীক্ষা দানের মাধ্যমে। তিনি শিরকের বিপরীতে তাওহিদ, প্রবৃত্তির অনুসরণের বিপরীতে আল্লাহর আনুগত্য এবং পার্থিব মোহের বিপরীতে আল্লাহর নৈকট্যের শিক্ষা দেন।

তাফসিরবিদরা বলেন, মক্কায় অবতীর্ণ সুরাগুলোতে পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠীর বর্ণনা তুলনামূলক বেশি এসেছে। বস্তুত এসব বর্ণনা মক্কায় চলমান অত্যাচার ও নিপীড়নের মুখে মুসলমানদের মনোবল অটুট রাখতে সাহায্য করেছে এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী করেছে। কেননা এসব ঘটনায় জালিমদের পতন, মুমিনের বিজয় এবং মুমিনদের প্রতি অত্যাচারের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

২. সামাজিক গঠন : মহানবী (সা.) মক্কায় ইসলাম গ্রহণকারী মুসলমানদের নিয়ে একটি সমাজ (কমিউনিটি অর্থে) গঠন করেন।

তিনি মক্কার মুসলিমদের মধ্যে এই বিশ্বাস স্থাপন করেন যে একই সমাজে বসবাস করলেও মুসলমানরা স্বতন্ত্র সম্প্রদায়। তারা ঈমান ও ইসলামের সুতায় বাঁধা। বিপরীতে যারা আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদের সঙ্গে মুসলমানরা সম্পর্কহীন। মুসলমানরা পরস্পরের সহযোগী ও আশ্রয়দাতা। তারা যথাসম্ভব সংঘবদ্ধ থাকবে, তারা পরস্পরকে দ্বিন পালনে সাহায্য করবে এবং মুশরিকদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে।
গোপন অথচ পৃথক ও স্বতন্ত্র এই সামাজিক মূল্যবোধ জাতি হিসেবে মুসলমানদের আত্মপ্রকাশ সহজ করেছিল।৩. অস্তিত্বের জানান দেওয়া : মহানবী (সা.) নবুয়তের তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে মক্কার ভেতরে দাওয়াত দিলেও ধীরে ধীরে দাওয়াতের পরিধি মক্কার বাইরে বিস্তৃত হতে থাকে। তিনি এই সময় হজ মৌসুমে মক্কায় আগমনকারী হাজিদের মধ্যে, আরবের বিখ্যাত মেলাগুলোতে এবং তায়েফসহ মক্কার নিকটবর্তী গোত্রগুলোর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে হাজির হন। এর ফলে মক্কার বাইরে যেমন ইসলামের আহ্বান পৌঁছে যায়, তেমনি স্থানীয় নেতৃত্ব ও শক্তিগুলো ইসলাম ও মুসলমানের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হয়, যা পরবর্তী সময়ে মদিনা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বীকৃতি লাভে সহায়ক হয়েছিল।

মদিনায় ছয় কর্মসূচি

ইসলামী রাষ্ট্র গঠন ও তার বিকাশে মহানবী (সা.) মদিনায় একাধিক কর্মসূচি হাতে নেন। এর ভেতর মৌলিক ছয়টি কর্মসূচি তুলে ধরা হলো।

১. মসজিদভিত্তিক সমাজ গঠন : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করার পর সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদই ছিল মুসলমানদের সব কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। ইবাদত-বন্দেগি, দ্বিনি শিক্ষা, সামাজিক কল্যাণ, সালিস-বিচারসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো মসজিদেই গ্রহণ করা হতো। মসজিদ মূলত মুসলিম সমাজকে একমুখী করেছিল, তাদেরকে একক নেতৃত্বের অধীনে একতাবদ্ধ করেছিল এবং তাদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলেছিল।

২. ভ্রাতৃত্ব বন্ধন : হিজরতের পর মহানবী (সা.) মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের ভেতরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আগন্তুক মুহাজির সাহাবিদের মদিনায় পুনর্বাসনের পথকে সহজ করেছিল এবং মুহাজির ও আনসারিদের মধ্যে মানসিক মেলবন্ধন তৈরিতে সাহায্য করেছিল। ফলে তারা পরস্পরের ভাই হয়ে দ্বিনি কাজে অংশ নিয়ে ছিল।

৩. বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে চুক্তি : মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এসব চুক্তির ফলে মদিনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে মুসলিমরা একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

৪. মদিনা সনদ : মদিনা সনদ মূলত বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সম্পাদিত চুক্তিগুলোর একটি সম্মিলিত রূপ। এসব লিখিত চুক্তি মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করায় তাকে মদিনা সনদ বলা হয়। মদিনা সনদ একই মদিনা রাষ্ট্রের মুসলিম ও অমুসলিম সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিল। মদিনা সনদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারা হলো—

(ক) বনু আওফের ইহুদিরা মুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশে এক উম্মতের মতো বসবাস করবে, কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।

(খ) মুসলিম ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের লোক নিজ নিজ আয় উপার্জনের দায়িত্বশীল থাকবে।

(গ) এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের লোকেরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি, সদিচ্ছা ও পারস্পরিক উপকারের ভিত্তিতে কাজ করে যাবে, কোনো অন্যায়-অনাচার কিংবা পাপাচারের ভিত্তিতে কাজ করবে না।

(ঘ) কেউ কারো ওপর জুলুম করলে মজলুমকে সাহায্য করা হবে।

(ঙ) এই চুক্তিভুক্ত সবার জন্যই মদিনায় কোনো প্রকার হাঙ্গামা সৃষ্টি করা কিংবা রক্তপাত ঘটানো যাবে না।

(চ) চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো কোনো নতুন সমস্যা কিংবা ঝগড়া-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ার উপক্রম হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর মীমাংসা করবেন।

৫. বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠানো : হুদাইবিয়ার চুক্তির পর মহানবী (সা.) প্রায় ১০ জন রাজা, বাদশাহ ও শাসকের কাছে ইসলামের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রোম সম্রাট কায়সার, পারস্য সম্রাট কিসরা, হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি, ইস্কান্দারিয়ার (মিসর) শাসক মুকাওকিস, ইয়ামামার শাসক সুমামা বিন উসাল, শামের শাসক হারিস বিন আবি শামার গাসসানি প্রমুখ। তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীর বেশির ভাগ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন। এর ফলে সভ্য পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ইসলামের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বময় ইসলামের আলোচনা শুরু হয়।

৬. সেনাবাহিনী গঠন : মহানবী (সা.) মদিনায় আগমনের পর একটি নিয়মিত ও শক্তিশালী সেনা বাহিনী গঠন করেন। তাঁর বাহিনী প্রচলিত বেতনভুক্ত বাহিনীর মতো না হলেও তাদের ভেতরে পেশাদারির কোনো অভাব ছিল না। নবীজি (সা.) তাদের নিয়মিত অনুশীলন ও অভিযানের মাধ্যমে সুদক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। মক্কা বিজয়ের সময় নবীজি (সা.)-এর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১০ হাজার। মক্কা বিজয়ের পর তা সংখ্যায় আরো বৃদ্ধি পায়।