এইচআইভি বা এইডস একটি মরণব্যাধি রোগ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেশে তা ভয়াবহ আকারও ধারণ করেছে। মরণব্যাধি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগীর এ মরণব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের চেষ্টার ত্রুটি নেই। মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করতে চলছে নিরন্তর গবেষণা। তবে কোনো রোগ থেকে বাঁচতে হলে আগে জানা প্রয়োজন ওই রোগটি কেন হয়ে থাকে। যে-কোনো রোগের কারণ জানা থাকলে তা খুব সহজেই প্রতিহত করা সম্ভব হয়।
আমাদের অনেকের ধারণা, শুধু অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক থেকে এইচআইভি বা এইডস ছড়িয়ে থাকে। জেনে রাখা ভালো, শুধু অনৈতিক যৌন সম্পর্ক নয়, আরও অনেক কারণে এই রোগ ছাড়াতে পারে। এইডসের জন্য দায়ী ‘হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস’ (এইচআইভি) নামক রেট্রো ভাইরাসটি। মানুষের রক্ত ও অন্যান্য দেহরসেই একমাত্র বেঁচে থাকে এই ভাইরাস। রোগীর দেহ থেকে অন্যের শরীরে ছড়ায় রক্ত ও বীর্যের মাধ্যমে। বীর্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বলেই এই অসুখ ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, এই ভাইরাসের প্রধান কাজ হলো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া। একটা সময় সাধারণ সর্দি-কাশি আটকাতে পারে না শরীর। ফলে ‘অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি সিনড্রোম’ বা এইডসের প্রভাবে মৃত্যু অবধারিত হয়ে ওঠে।
ছড়ানোর কিছু কারণ : বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা না করায় এ রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। কারণ বর বা কনে কোনো একজন যদি এই ভাইরাসের বাহক হয়ে থাকেন, তবে যৌন সম্পর্কের ফলে অপরজনের শরীরে সহজেই প্রবেশ করবে এই রেট্রো ভাইরাস। প্রতিবার ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় নতুন সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহার না করলে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
এইডস আক্রান্ত রোগীর শরীরে ফোটানো সুচ থেকেও এ অসুখ সংক্রমিত হয়ে থাকে। অসুখে আক্রান্ত প্রসুতির সন্তানের শরীরেও এইডস হতে পারে। সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ যৌনজীবন রয়েছেÑ এমন পেশাদারদের ক্ষেত্রে এ অসুখের প্রভাব বেশি থাকে। মুমূর্ষু অস্থায় রক্তের প্রয়োজন হলে অবশ্যই এইডস পরীক্ষা করে শরীরে রক্ত দিতে হবে।
লক্ষণ : ঘনঘন জ্বর হওয়া ও এক-দেড় মাস ধরে একটানা জ্বর। জ্বরের সঙ্গে গলায় অস্বাভাবিক ব্যথা। খাবার খেতে ও গিলতে সমস্যা হয়। ক্রোয়েশিয়ার সংস্থা ‘অ্যাক্ট ডার্মাটোভেনরল’-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৮৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই গলায়, মাথায় র্যাশ দেখা দেয়। তীব্র প্রদাহ হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ঘাম। ঘুমের মধ্যেও তীব্র ঘাম হয়। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে বলে অল্পেই বমি ভাব, পেটের সমস্যা দেখা যায়।
যা করবেন : উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অবশ্য আধুনিক কিছু ওষুধে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর জীবন কিছুদিন বাড়ানো গেলেও সেসব চিকিৎসা পদ্ধতি মোটেই মধ্যবিত্তের আয়ত্তের বাইরে। তাই শুরুতেই চিকিৎসা নিন।