ঢাকা , সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জ্বালানির মূল্য শোধে চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর

জ্বালানির মূল্য পরিশোধে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। দ্রুত মূল্য পরিশোধে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ, গতকাল রবিবার আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য। এ ছাড়া সরকারকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন, এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানি কাতার গ্যাস। জ¦ালানি তেলের মূল্য পরিশোধেও চাপ রয়েছে। তবে সূত্র মতে, জ¦ালানি তেল আমদানিতে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বিপিসি। তাদের আর্থিক সংকট না থাকলেও ডলার সংকট সামাল দিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যেহেতু এ কারণে সহজে এলসি খোলা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতের আদানি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড চিঠি দিয়ে তাদের এই মর্মে সতর্ক করেছে যে, পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টে (পিপিএ) নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে পেমেন্ট দিলে পাওনা টাকার ওপর সারচার্জ দিতে হবে। ফলে আদানির পাওনা ৮৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত টাকা চলতি বছরের জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র মতে, আদানি পাওয়ার গতকাল রবিবার বিদ্যুৎ বিভাগে একটি অফিশিয়াল চিঠি প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানের কাছে বিল উত্থাপন করেছে। আদানির পাওনা পরিশোধে দেরি ও জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় কোম্পানিটি এরই মধ্যে ঝাড়খ-ে তাদের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ রেখেছে।

আদানি বলছে, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পিডিবি উত্থাপিত মাসিক চালানগুলোর বিল পরিশোধ করে, তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য অর্থ প্রদানে সারচার্জ প্রত্যাহার করা হবে। আদানির পক্ষে কৃষ্ণ রাও লিখেছেন- পিডিবি যেন তাদের প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করে। তাহলে উভয় পক্ষের জন্যই ভালো। আদানি ২০২৩ সালের ৮ জুন থেকে ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি মধ্যে থাকা সব বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পিডিবির মধ্যে গত ৯ জানুয়ারি বকেয়া পরিশোধ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পিডিবি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আদানির বকেয়া পাওনা পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগ ও অর্থ বিভাগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক হচ্ছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব- বলেন তিনি।

এদিকে পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানি শেভরনের পাওনা অর্থ বকেয়া পড়েছে প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে কোম্পানিটি গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে- অন্তত ৭৫ মিলিয়ন ডলার দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করা প্রয়োজন।

একই দিন কাতারের রাস লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচরাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (কাতার গ্যাস বা কাতার এনার্জি নামে পরিচিত) কাছ থেকে আরেকটি চিঠি পায় জ্বালানি বিভাগ। বাংলাদেশের কাছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি বিক্রি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ১৫০ মিলিয়ন ডলার। এ চিঠিতেও পাওনা অর্থ দ্রুত পরিশোধের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৭০ মিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধের চিঠি দুটির অনুলিপি এরই মধ্যে পেট্রোবাংলার কাছেও পাঠানো হয়েছে।

শেভরনের পাওনা অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও এমডি এরিক এম ওয়াকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে শেভরনের মোট পাওনা জমেছে ২২০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিক্রীত গ্যাসের মূল্য ১৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং বাকি ৪৫ মিলিয়ন ডলার জমেছে ভ্যাট ও সুদ হিসাবে।

জিটুজি ভিত্তিতে কাতারের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। এর মূল্য বাবদ বকেয়া পড়ে যাওয়া ১৫০ মিলিয়ন ডলার দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে কাতার গ্যাস। এর মধ্যে কাতার গ্যাসের বকেয়া পরিশোধেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, জিটুজি চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া পরিশোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পেট্রোবাংলা। সেটি করা না হলে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আবার শেভরনের জরুরি ভিত্তিতে চাওয়া ৭৫ মিলিয়ন ডলারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে চায় জ্বালানি বিভাগ। দেশে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশের জোগান দিচ্ছে শেভরন। কোম্পানিটি বাংলাদেশে তিনটি গ্যাসফিল্ড পরিচালনা করছে। এগুলো হলো বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তোলন হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে।

সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলাকে গ্যাস সরবরাহ বাবদ শেভরনের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল আসে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মতো। কয়েক মাস ধরেই শেভরনের বিল বকেয়া জমেছে। গত ডিসেম্বরে শেভরন ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বাংলাদেশ সফর করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকে বকেয়া বিল নিয়েও আলোচনা হয়। দেশে গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি পূরণে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে কাতার গ্যাসের কাছ থেকে কার্গোতে করে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে কম-বেশি ৪০ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। চলতি অর্থবছরও কাতার থেকে মোট ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানির কথা রয়েছে। এর অর্ধেক এরই মধ্যে দেশে এসেছে।

এদিকে বিপিসি সূত্রে জানা যায়, তারা বকেয়া তেলের বিল পরিশোধে আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে ফিরেছে। তবে এখনও তাদের বকেয়া প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপিসির অর্থ থাকলেও ডলার সংকটে সংস্থাটিকে প্রায়ই সংকটে পড়তে হচ্ছে। শুধু বিদেশি কোম্পানি নয়, দেশীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোরও অনেক বকেয়া জমেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সমন্বিত পাওনা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অনেক কোম্পানিকে বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। তাদের পাওনা পরিশোধেও সরকারের ওপর চাপ রয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জ্বালানির মূল্য শোধে চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর

আপডেট টাইম : ৯ ঘন্টা আগে

জ্বালানির মূল্য পরিশোধে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। দ্রুত মূল্য পরিশোধে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ, গতকাল রবিবার আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য। এ ছাড়া সরকারকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন, এলএনজি সরবরাহকারী কোম্পানি কাতার গ্যাস। জ¦ালানি তেলের মূল্য পরিশোধেও চাপ রয়েছে। তবে সূত্র মতে, জ¦ালানি তেল আমদানিতে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বিপিসি। তাদের আর্থিক সংকট না থাকলেও ডলার সংকট সামাল দিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যেহেতু এ কারণে সহজে এলসি খোলা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতের আদানি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড চিঠি দিয়ে তাদের এই মর্মে সতর্ক করেছে যে, পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টে (পিপিএ) নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে পেমেন্ট দিলে পাওনা টাকার ওপর সারচার্জ দিতে হবে। ফলে আদানির পাওনা ৮৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত টাকা চলতি বছরের জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র মতে, আদানি পাওয়ার গতকাল রবিবার বিদ্যুৎ বিভাগে একটি অফিশিয়াল চিঠি প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানের কাছে বিল উত্থাপন করেছে। আদানির পাওনা পরিশোধে দেরি ও জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় কোম্পানিটি এরই মধ্যে ঝাড়খ-ে তাদের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ রেখেছে।

আদানি বলছে, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পিডিবি উত্থাপিত মাসিক চালানগুলোর বিল পরিশোধ করে, তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য অর্থ প্রদানে সারচার্জ প্রত্যাহার করা হবে। আদানির পক্ষে কৃষ্ণ রাও লিখেছেন- পিডিবি যেন তাদের প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করে। তাহলে উভয় পক্ষের জন্যই ভালো। আদানি ২০২৩ সালের ৮ জুন থেকে ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি মধ্যে থাকা সব বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পিডিবির মধ্যে গত ৯ জানুয়ারি বকেয়া পরিশোধ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পিডিবি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আদানির বকেয়া পাওনা পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগ ও অর্থ বিভাগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক হচ্ছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব- বলেন তিনি।

এদিকে পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানি শেভরনের পাওনা অর্থ বকেয়া পড়েছে প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে কোম্পানিটি গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে- অন্তত ৭৫ মিলিয়ন ডলার দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করা প্রয়োজন।

একই দিন কাতারের রাস লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচরাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (কাতার গ্যাস বা কাতার এনার্জি নামে পরিচিত) কাছ থেকে আরেকটি চিঠি পায় জ্বালানি বিভাগ। বাংলাদেশের কাছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি বিক্রি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ১৫০ মিলিয়ন ডলার। এ চিঠিতেও পাওনা অর্থ দ্রুত পরিশোধের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৭০ মিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধের চিঠি দুটির অনুলিপি এরই মধ্যে পেট্রোবাংলার কাছেও পাঠানো হয়েছে।

শেভরনের পাওনা অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও এমডি এরিক এম ওয়াকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠির তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে শেভরনের মোট পাওনা জমেছে ২২০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিক্রীত গ্যাসের মূল্য ১৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং বাকি ৪৫ মিলিয়ন ডলার জমেছে ভ্যাট ও সুদ হিসাবে।

জিটুজি ভিত্তিতে কাতারের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছে পেট্রোবাংলা। এর মূল্য বাবদ বকেয়া পড়ে যাওয়া ১৫০ মিলিয়ন ডলার দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে কাতার গ্যাস। এর মধ্যে কাতার গ্যাসের বকেয়া পরিশোধেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, জিটুজি চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া পরিশোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পেট্রোবাংলা। সেটি করা না হলে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আবার শেভরনের জরুরি ভিত্তিতে চাওয়া ৭৫ মিলিয়ন ডলারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে চায় জ্বালানি বিভাগ। দেশে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশের জোগান দিচ্ছে শেভরন। কোম্পানিটি বাংলাদেশে তিনটি গ্যাসফিল্ড পরিচালনা করছে। এগুলো হলো বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তোলন হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে।

সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলাকে গ্যাস সরবরাহ বাবদ শেভরনের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল আসে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মতো। কয়েক মাস ধরেই শেভরনের বিল বকেয়া জমেছে। গত ডিসেম্বরে শেভরন ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বাংলাদেশ সফর করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকে বকেয়া বিল নিয়েও আলোচনা হয়। দেশে গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি পূরণে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে কাতার গ্যাসের কাছ থেকে কার্গোতে করে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে কম-বেশি ৪০ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। চলতি অর্থবছরও কাতার থেকে মোট ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানির কথা রয়েছে। এর অর্ধেক এরই মধ্যে দেশে এসেছে।

এদিকে বিপিসি সূত্রে জানা যায়, তারা বকেয়া তেলের বিল পরিশোধে আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে ফিরেছে। তবে এখনও তাদের বকেয়া প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিপিসির অর্থ থাকলেও ডলার সংকটে সংস্থাটিকে প্রায়ই সংকটে পড়তে হচ্ছে। শুধু বিদেশি কোম্পানি নয়, দেশীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোরও অনেক বকেয়া জমেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সমন্বিত পাওনা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অনেক কোম্পানিকে বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। তাদের পাওনা পরিশোধেও সরকারের ওপর চাপ রয়েছে।