বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ টুনটুনি অত্যন্ত অস্থির পাখি। কোথাও একদ- বসে থাকার সময় নেই। সারা দিন ওড়াওড়ি। লতাগুল্মের ফাঁক-ফোকরে লাফিয়ে বেড়ায়। এই পাখি নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা ছোটদের গল্প-কবিতা লিখেছেন। একটি গানও আছে-‘এক ছিল টোনা আর এক ছিল টুনি। টোনা বলে ওরে টুনি পিঠা কর।’ যদিও গানটি টোনাটুনির গল্প থেকে নেওয়া।
টুনটুনি পাখির দেখা মেলে ঝোঁপঝাঁড়ে। বনে জঙ্গলে। ছোট গাছ বা মাঝারি গাছে বাসা বাঁধে তারা। ছোট এই পাখিটা খুব চালাক। চোখের পলকেই উড়ে যায়। দুর থেকে দেখলে মনে হবে তার লেজটা খসে পড়ছে।
আসলে ওদের লেজের গড়নই এমন! বলা যায় পুচ্ছবিহীন পাখি। তার ওপর শরীরের তুলনায় মাথাটা বড়। তাই চেহারাটা যুত্সই মনে হয় না। বেশিরভাগ টুনটুনি একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় দেখা যায়।
টুনটুনি আকারে ছোট পাখি। এদের যত চালাক পাখি ভাবা হয়, আসলে তা নয়। এরা যেমন চালাক, তেমন বোকা। টুনটুনি বিপদ দেখলেই চেঁচামেচি করে। ফলে সহজেই শত্রুর কবলে পড়ে। টুনটুনির ইংরেজি নাম ‘কমন টেইলর বার্ড’।
এক কথায় দর্জি পাখি। এরা গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বানায়। বৈজ্ঞানিক নাম অর্থটোমাস সুটোরিউ। টুনটুনির বুক ও পেট সাদাটে। অনেকটা মাটির ঢিলার মতো। ডানার উপরিভাগ জলপাই-লালচে। মাথা জলপাই-লালচে। চোখের মণি পাকা মরিচের মতো। বুক সাদা পালকে ঢাকা। লেজ খাড়া, তাতে কালচে দাগ আছে। ঋতুভেদে পিঠ ও ডানার রঙ কিছুটা বদলায়।
টুনটুনি বিভিন্ন রকম খাবার খায়। এরা অনেক অপকারী পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ খাদ্য হিসেবে খায়। তা ছাড়া ছোট কেঁচো, মৌমাছি, ফুলের মধু, রেশম মথ ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ধান-পাট-গম পাতার পোকা, আম পাতার বিছা পোকা তাদের খাদ্য তালিকায় আছে। টুনটুনির বাসা খুব বেশি উঁচুতে হয় না। সাধারণত এরা ৬-১০ সেমি উচ্চতায় বাসা বাঁধে। ছোট গুল্মজাতীয় গাছ অথবা ঝোপঝাড় এদের প্রধান পছন্দ। শিম, লাউ, কাঠ বাদাম, সূর্যমুখী, ডুমুর, লেবু গাছে এরা বেশি বাসা বাঁধে।
পুরুষ ও স্ত্রী পাখি মিলে বাসা তৈরি করে। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। শৈবাল, শ্যাওলা, শিকড়, তন্তু দিয়ে বর্তুলাকার আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন।
পাখি বিশেষজ্ঞ এনামুল হক বলেন, টুনটুনি পাখি বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যাবে। পাখিটি হালকা ছোট আকারের। পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা বনের ঘাস চিকন করে ছিঁড়ে ছোট ঝোপের মধ্যে গাছের পাতা একটির সঙ্গে অপরটি সেলাই করে জোড়া লাগিয়ে বাসা বুনে। এ জন্য টুনটুনিকে ‘দর্জি পাখি’ বলা হয়।