বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় মেঘনা নদীতে খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার লুটেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনসহ অনেকেই।
জসিম উদ্দিন বলেন, মাছ চাষ করার অভ্যাস তাঁর আগে থেকেই ছিল। উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ পেয়ে ২০১৬ সালের ২৪ জুন থেকে বাড়ির কাছের মেঘনায় ১০টি খাঁচায় তেলাপিয়ার চাষ শুরু করেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ২০ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। ছয় মাস পরপর প্রতিটি খাঁচার মাছ বিক্রি করে ১৬ হাজার টাকা লাভ পাওয়া যায়।
মেঘনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য্য বলেন, নদীর পানিতে মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার কারণে জসিম উদ্দিনসহ এলাকার শতাধিক ব্যক্তি মাছ চাষে লাভবান হচ্ছেন। নদীতে মাছ চাষের জন্য মৎস্য কার্যালয় থেকে অনুমতি দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য তাঁরা প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন।
মাছ চাষের পদ্ধতি ও ব্যয়
জসিম উদ্দিন জানান, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য প্রথমেই খাঁচা তৈরি করতে হয়। জিআই পাইপের তৈরি প্রতিটি খাঁচার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট ও উচ্চতা ৬ ফুট। প্রতিটি খাঁচা তৈরি করতে জালের জন্য ৫ হাজার টাকা, সুতায় ২ হাজার, ৪টি প্লাস্টিকের ড্রামে ৪ হাজার, ৮টি জিআই পাইপে ৮ হাজার ৯৬০, ৮টি বাঁশে ১ হাজার ৬০০, ঢাকনা জালে ৯৪০, শ্রমিকের মজুরি ২ হাজারসহ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। একটি খাঁচা পাঁচ বছর ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি খাঁচায় প্রতি ছয় মাসে ৩ টাকা মূল্যের ১ হাজার মাছ (৩ হাজার টাকা), খাদ্য (৭ হাজার টাকা), খাঁচা রক্ষণাবেক্ষণ ও তৈরিতে ৪ হাজার ৯০০, নৈশপ্রহরী বাবদ খরচ ৬ হাজার টাকাসহ ২১ হাজার টাকা।
মাছ বিক্রি
প্রতি ছয় মাসে ১ হাজার মাছের মধ্যে ৮০০টি বেঁচে থাকে। এর ওজন ২৬৬ কেজি। এসব মাছ স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে ৩৭ হাজার ২৪০ টাকা পাওয়া যায়। এতে লাভ হয় প্রায় ১৬ হাজার ২৪০ টাকা। ১০টি খাঁচায় বছরে লাভ হয় প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা।
ইতিবাচক দিক
মাছ চাষের জন্য জমির ভাড়া লাগে না। রোগবালাই কম হয়। মাছ পুকুরের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে ওঠে ও স্বাদ বেশি হয়। তা ছাড়া যে স্থানে খাঁচায় মাছ চাষ হয়, সেখানে চাষ করা মাছের জন্য দেওয়া খাবার প্রাকৃতিক মাছও খেতে পারে, এতে খাঁচার নিচে প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম হয়।
কর্মসংস্থান
এ এলাকায় মাছচাষির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিটি খাঁচায় তিনজন লোকের বছরব্যাপী স্থায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে। মেঘনা নদীর ওমরাকান্দা এলাকায় বর্তমানে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০০টি খাঁচা রয়েছে। এতে এলাকার ৩০০ মানুষের স্থায়ী এবং অর্ধশত লোকের অস্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
দল গঠন করে কাজ
মোহাম্মদপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, তাঁরা দল গঠন করে মাছ চাষ করেন। তিনি দলনেতা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর দলে তাঁর স্ত্রী সালমা, প্রতিবেশী রোকেয়া, জামাল মিয়া, লুটেরচর গ্রামের সুমন মিয়া, ইনজিল মিয়া, মাছুম মিয়া, শারমীন, রূপচান য়া ও দড়ি লুটেরচর গ্রামের মিজানুর রহমান রয়েছেন। লাভের টাকা বছর শেষে সব সদস্য ভাগ করে নেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জসিম উদ্দিনের পর লুটেরচর গ্রামের মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে ১০টি খাঁচায় মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন মকবুলের স্ত্রী রিনা বেগম, প্রতিবেশী বাবুল মিয়া, মাছুদ মিয়া, হারুন মিয়া, মাসুদুর রহমান, ইকবাল হোসেন, মিলন মিয়া, রুনা আক্তার ও আবুল শিকদার। চলতি বছর লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ শিকদার ও লুটেরচর গ্রামের শামীম শিকদারের নেতৃত্বে আরও ২০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হবে।
সনাতন পদ্ধতি
*বৃদ্ধি কম
*স্বাদ কম
*খাদ্য বেশি লাগে
খাঁচা পদ্ধতি
*বৃদ্ধি বেশি
*স্বাদ বেশি
*খাদ্য কম লাগে