ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ খাদ্য নিরাপত্তা দিবস

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আজ খাদ্য নিরাপত্তা দিবস। নিরাপত্তা না থাকলেও দিবসটি আছে। কর্তৃপক্ষ কীভাবে দিবসটি মহাসমারোহে পালন করে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদি প্রশ্ন করা হয়, এমন একটি খাদ্যের নাম উল্লেখ করুন যাকে নিরাপদ খাদ্য তালিকার মাঝে আনা যায়! যেখানে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। মানুষের জন্য খাদ্য মজুদ করে রাখার নামই খাদ্য নিরাপত্তা নয়। সে খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ, তার ওপরই নির্ভর করে নিরাপত্তা।

এক কথায় বলা যায়, এমন নিরাপত্তা বাংলাদেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কমেছে গুণগত মান। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বলছে, তারা ছয় হাজার ৩৬০টি খাদ্যপণ্যের পরীক্ষা চালিয়ে যা পেয়েছে তা হলো-৯৭৮টি অর্থাৎ ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্যপণ্য বিষ মিশ্রিত। পরিসংখ্যানটি ২০১৫ সালের এবং একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের। তিন বছরে নিশ্চয়ই তা একই স্থানে দাঁড়িয়ে নেই। প্রমোশন হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, শস্য ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাছ ও মূল আমিষের উৎস ডিম-মুরগিও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেছেন, রাসায়নিকের উপর্যুপরি ও যথেচ্ছা ব্যবহার বিষয়টিকে আজ এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। পোলট্রিতে খাওয়ানো হচ্ছে ট্যানারির বর্জ্য। এই বর্জ্য মাছের খাবারেও ব্যবহার হচ্ছে। আবার পোলট্রি বর্জ্য জমি ও মাছের খামারে ব্যবহার হচ্ছে। এসবের কারণে শাকসবজিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যাচ্ছে, যা কলেরা ও ডায়রিয়ার জীবাণু বহন করে। এর মধ্যে শসা ও কাঁচামরিচ খুবই বিপজ্জনক।

এবার উৎপাদনের কথায় আসা যাক। বিশেষ করে চালের প্রসঙ্গই প্রণিধানযোগ্য। কেননা চালই হচ্ছে এ দেশের প্রধান খাদ্য। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের চালকল মালিকদের কাছ থেকে সরকার চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। সংগৃহীত হয়েছে মাত্র দুই লাখ ৯৯ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় এটা খুবই নগণ্য। পাঁচ দেশ থেকে সরকারিভাবে ১৬ লাখ টন আমদানির বিপরীতে চাল এসেছে চার লাখ ৩৬ হাজার টন। এ ছাড়া শুধু বন্যার কারণে উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে ২০ হাজার টনেরও বেশি। এফএও প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চালের বাজারদর এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এটা দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। মিডিয়া বলছে, চলতি মৌসুমে আমনের প্রাক্কলিত উৎপাদন এক কোটি ৩০ লাখ টন নির্ধারিত থাকলেও ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে ১৪ লাখ টন। সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে বলা যায় চালের মজুদেও রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা।

আমরা মনে করি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তায় তাদের ভূমিকা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্ন উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন আছে কি না। থাকলে তাদের কাজ কী হবে বা হওয়া উচিত। কেননা উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন থেকে অনেকটা দূরে সওে গেছি। লাখ লাখ টাকার অপচয় আর উৎসব করে প্রমাণ করা যাবে না যে, আমরা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আজ খাদ্য নিরাপত্তা দিবস

আপডেট টাইম : ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আজ খাদ্য নিরাপত্তা দিবস। নিরাপত্তা না থাকলেও দিবসটি আছে। কর্তৃপক্ষ কীভাবে দিবসটি মহাসমারোহে পালন করে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদি প্রশ্ন করা হয়, এমন একটি খাদ্যের নাম উল্লেখ করুন যাকে নিরাপদ খাদ্য তালিকার মাঝে আনা যায়! যেখানে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। মানুষের জন্য খাদ্য মজুদ করে রাখার নামই খাদ্য নিরাপত্তা নয়। সে খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ, তার ওপরই নির্ভর করে নিরাপত্তা।

এক কথায় বলা যায়, এমন নিরাপত্তা বাংলাদেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কমেছে গুণগত মান। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বলছে, তারা ছয় হাজার ৩৬০টি খাদ্যপণ্যের পরীক্ষা চালিয়ে যা পেয়েছে তা হলো-৯৭৮টি অর্থাৎ ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্যপণ্য বিষ মিশ্রিত। পরিসংখ্যানটি ২০১৫ সালের এবং একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের। তিন বছরে নিশ্চয়ই তা একই স্থানে দাঁড়িয়ে নেই। প্রমোশন হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, শস্য ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাছ ও মূল আমিষের উৎস ডিম-মুরগিও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেছেন, রাসায়নিকের উপর্যুপরি ও যথেচ্ছা ব্যবহার বিষয়টিকে আজ এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। পোলট্রিতে খাওয়ানো হচ্ছে ট্যানারির বর্জ্য। এই বর্জ্য মাছের খাবারেও ব্যবহার হচ্ছে। আবার পোলট্রি বর্জ্য জমি ও মাছের খামারে ব্যবহার হচ্ছে। এসবের কারণে শাকসবজিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যাচ্ছে, যা কলেরা ও ডায়রিয়ার জীবাণু বহন করে। এর মধ্যে শসা ও কাঁচামরিচ খুবই বিপজ্জনক।

এবার উৎপাদনের কথায় আসা যাক। বিশেষ করে চালের প্রসঙ্গই প্রণিধানযোগ্য। কেননা চালই হচ্ছে এ দেশের প্রধান খাদ্য। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের চালকল মালিকদের কাছ থেকে সরকার চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। সংগৃহীত হয়েছে মাত্র দুই লাখ ৯৯ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় এটা খুবই নগণ্য। পাঁচ দেশ থেকে সরকারিভাবে ১৬ লাখ টন আমদানির বিপরীতে চাল এসেছে চার লাখ ৩৬ হাজার টন। এ ছাড়া শুধু বন্যার কারণে উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে ২০ হাজার টনেরও বেশি। এফএও প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চালের বাজারদর এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এটা দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। মিডিয়া বলছে, চলতি মৌসুমে আমনের প্রাক্কলিত উৎপাদন এক কোটি ৩০ লাখ টন নির্ধারিত থাকলেও ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে ১৪ লাখ টন। সুতরাং সব দিক বিবেচনা করে বলা যায় চালের মজুদেও রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা।

আমরা মনে করি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তায় তাদের ভূমিকা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্ন উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন আছে কি না। থাকলে তাদের কাজ কী হবে বা হওয়া উচিত। কেননা উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন থেকে অনেকটা দূরে সওে গেছি। লাখ লাখ টাকার অপচয় আর উৎসব করে প্রমাণ করা যাবে না যে, আমরা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছি।