আন্দোলন নয়, ভোটযুদ্ধের কথাই ভাবছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। প্রস্তুতিও শুরু করেছে ভোটের। নির্বাচন আদায়ের জন্য কোন আন্তর্জাতিক লবিং জোরদার করেছে। বেগম খালেদা জিয়া এখন তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। অগ্রাধিকার দেওয়া বিষয় তিনটি হচ্ছে- ১. সরকারের দায়ের করা সকল মামলার আইনি লড়াই। ২. ভারতসহ গণতান্ত্রিক দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিবেশ আদায় করা। ৩. আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলকে উপযুক্ত করে তোলা।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, বিশেষ করে কাউন্সিলউত্তর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর এখন এই পথ ধরেই হাঁটছেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার হয়ে একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার মত পরিবেশ আদায় করার লক্ষে কাজ করছে। বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ নিয়ে তারা চিন্তা বিনিময় করছেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার কাছে থেকে দায়িত্ব পাওয়া একটি প্রতিনিধি দল বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নই নয় আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, ভারতকে তারা আশ্বস্ত করতে চাইছেন বিএনপি বরাবরই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং নির্বাচনে বিশ্বাসী একটি গণতান্ত্রিক দল। অতীতের ভুল ত্রুটি শোধরে তারা ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্র পরিচালনায় মনযোগী হবেন। নিজেদের পাশাপাশি ভারতের নিরাপত্তা বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে বিঘ্নিত হয় এমন কোন কিছু হতে দেবেন না।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বা চারদলীয় জোট যে আন্দোলনের পথে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল তাতে বর্জনে সফল হলেও প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েই ফিরে আসেনি পরবর্তী লাগাতার আন্দোলনে ক্ষতির পাল্লা ভারি করে মামলা ও জেল নির্যাতনের খেসারত দিয়ে ফিরেছে। এই মূল্যায়নটা বিএনপি পরিষ্কারই করেনি বিশ্বাস করে সিদ্ধান্তে এসেছে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক শক্তির সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় আসা দূরে থাক সরকারকে নড়ানো বা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, দলের হাই কমান্ডের উপর জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন এবং দলের উপর নির্বাসিত পুত্র তারেক রহমানের কর্তৃত্ব খর্বই নয় বন্ধ করার দেশি বিদেশী চাপ রয়েছে। জামায়াতকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চিত গ্যারান্টি ছাড়া খালেদা জিয়া আপাতত ছাড়তে চাচ্ছেন না। তিনি মনে করেন, জামায়াতকে সরানো সরকারেরই একটি চাল। এখন ছেড়ে দিলেই তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে। সেই সুযোগ আপাতত দিতে নারাজ। খালেদা জিয়া একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ভারতের কাছে যেমন দাবি জানিয়ে আসছেন তেমনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি ঢাকায় আসলে তার কাছেও দেশে গণতন্ত্র ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করেছেন। জন কেরি বিএনপি নেত্রীকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরামর্শ ও প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানালে জন কেরি তাদের ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, সংসদীয় রাজনীতিতে খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী না থাকায় জন কেরি তার সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারেননি। তাকেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে গিয়ে দেখা করতে হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অবহিত দেশে সরকার বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রীই হচ্ছেন খালেদা জিয়া।