ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর ছয় নির্দেশনা দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত বাস্তবায়িত হোক

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সড়ককে অনেকেই এখন ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। গণমাধ্যমেও সড়কের এই অভিধাটি বহুল ব্যবহৃত। পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর একটি। গড়পড়তা এখানে দৈনিক ২০ জনের মতো মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হন সড়ক দুর্ঘটনায়। বহু মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। অথচ এই অকালমৃত্যু রোধে কার্যকর উদ্যোগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরাম থেকে দুর্ঘটনারোধে অনেক সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গত চার দশকে সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের তেমন প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। ফলে সড়ক ক্রমেই বেসামাল হয়ে উঠছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৪০ জনের। তাই মানুষ জানতে চায়, সড়কের এই বেসামাল অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন হবে না? অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এগিয়ে এসেছেন এই দুঃখজনক পরিণতি রোধে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো দ্রুত এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, যাতে একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে না হয়, গাড়ির চালক ও সহকারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট দূরত্বে সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার ও বিশ্রামাগার তৈরি, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধ করা ও সিগন্যাল মেনে জেব্রাক্রসিং দিয়ে পারাপার নিশ্চিত করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা। ধারণা করা যায়, এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হলে সড়কে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে আসবে।

ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ। সেই সঙ্গে আছে অনিবন্ধিত বা ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান। অধিকাংশেরই ফিটনেস নেই। দেশে যন্ত্রচালিত গাড়ির চালক আছে ৭০ লাখের মতো, কিন্তু বিআরটিএর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের। লাইসেন্স প্রদানেও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে। গাড়ি চালাতে জানে না এমন ব্যক্তিও নাকি অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স পেয়ে যায়।

আবার রাস্তার দুরবস্থা, রাস্তা দখল করে বাজার বসানো, যত্রতত্র পার্কিং করাসহ অনেক কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, রাস্তায় প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলা—এসবও জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভিযোগ আছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাড়িচালক নেশাগ্রস্ত। তাদের ক্ষেত্রেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সময়োপযোগী নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমরা চাই, এই নির্দেশনাকে ভিত্তি ধরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হোক।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর ছয় নির্দেশনা দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত বাস্তবায়িত হোক

আপডেট টাইম : ১১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুন ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সড়ককে অনেকেই এখন ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। গণমাধ্যমেও সড়কের এই অভিধাটি বহুল ব্যবহৃত। পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর একটি। গড়পড়তা এখানে দৈনিক ২০ জনের মতো মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হন সড়ক দুর্ঘটনায়। বহু মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। অথচ এই অকালমৃত্যু রোধে কার্যকর উদ্যোগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরাম থেকে দুর্ঘটনারোধে অনেক সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গত চার দশকে সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের তেমন প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। ফলে সড়ক ক্রমেই বেসামাল হয়ে উঠছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৪০ জনের। তাই মানুষ জানতে চায়, সড়কের এই বেসামাল অবস্থার কি কোনো পরিবর্তন হবে না? অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এগিয়ে এসেছেন এই দুঃখজনক পরিণতি রোধে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো দ্রুত এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, যাতে একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে না হয়, গাড়ির চালক ও সহকারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট দূরত্বে সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার ও বিশ্রামাগার তৈরি, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধ করা ও সিগন্যাল মেনে জেব্রাক্রসিং দিয়ে পারাপার নিশ্চিত করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা। ধারণা করা যায়, এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হলে সড়কে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে আসবে।

ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ। সেই সঙ্গে আছে অনিবন্ধিত বা ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান। অধিকাংশেরই ফিটনেস নেই। দেশে যন্ত্রচালিত গাড়ির চালক আছে ৭০ লাখের মতো, কিন্তু বিআরটিএর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের। লাইসেন্স প্রদানেও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে। গাড়ি চালাতে জানে না এমন ব্যক্তিও নাকি অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স পেয়ে যায়।

আবার রাস্তার দুরবস্থা, রাস্তা দখল করে বাজার বসানো, যত্রতত্র পার্কিং করাসহ অনেক কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, রাস্তায় প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলা—এসবও জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভিযোগ আছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাড়িচালক নেশাগ্রস্ত। তাদের ক্ষেত্রেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সময়োপযোগী নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমরা চাই, এই নির্দেশনাকে ভিত্তি ধরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হোক।