বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ ফেনীর আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী বলেছেন, তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়নি, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, আমাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিষ্কার ঘোষণা করছি, আমাকে অবশ্যই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে, যে কমিটির সদস্য আমির হোসেন আমু আর তোফায়েল আহমেদের মতো নেতা। এই ফোরামে আমাকে নিয়ে শেখ হাসিনা আমার প্রতি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। এত বিরোধিতা, এত চক্রান্ত, এত মিডিয়ার আক্রমণের পরও তিনি আমার প্রতি এ রকম আন্তরিকতা রাখেন।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে তাতে সই করে আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ সময় বাহাউদ্দিন নাছিমসহ তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং অবশ্যই আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। এ ব্যাপারে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।
জয়নাল হাজারীকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা নিয়ে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সচিবালয়ে দেওয়া একটি বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে জয়নাল হাজারী এসব কথা বলেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জয়নাল হাজারী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল পৌনে ৫টায় ফেসবুক লাইভে আসেন এবং প্রায় আধঘণ্টার মতো কথা বলেন।
এর আগে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জয়নাল হাজারীকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করার বিষয়টি তার জানা নেই।
ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে হাজারী বলেন, রাজনীতি করতে হলে নাকি কিছু মিথ্যা কথা বলতে হয়। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের কোনো মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি কিছু জানি না। বলেছেন, আমার (ওবায়দুল কাদের) সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এটা ঠিক এবং শতভাগ সত্য যে এটা নিয়ে নেত্রী কারো সঙ্গে আলোচনা করেননি। কারণ, কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা, উপদেষ্টা করা এটা একান্তভাবে তার নিজস্ব এখতিয়ার। গত সম্মেলনে নেত্রীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটা অনেকটা নিয়োগ- কোনো ভোট বা কাউন্সিলের মাধ্যমে হওয়ার বিষয় নয়। আমার আগেও যাদের উপদেষ্টা কমিটিতে এনেছেন তাদের ক্ষেত্রেও এভাবে হয়েছে। কারো সঙ্গে আলোচনা করে তা করেননি। শুধু এ সংক্রান্ত চিঠি আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে তা গণমাধ্যমে চলে যায়।
লাইভে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করেছেন। এটা গতকাল (বুধবার) সব জায়গায় ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে আজকে আবার বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে। সে কারণেই কিছুটা হলেও বিভ্রান্তি দূর করতে আমার এই লাইভে আসা।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বোধ হয় খবর নিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারতেন। তিনি খবর নিলে এটা জানতে পারবেন।
জয়নাল হাজারী বলেন, ধন্যবাদ জানাই আমাদের সাধারণ সম্পাদককে, তিনি মিথ্যা বলেননি। ঠিকই তো আছে যে এটা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলাপ করার কোনো দরকার নেই। ওনার এটা জানারও কোনো দরকার নেই। আমাকে নেত্রী যে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন এটা তো উনিও জানতেন না। আমি উনার বাসায় গিয়ে এটা জানিয়ে এসেছি।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন আমাকে ফোন করে জানালেন নেত্রীর দস্তখত হয়ে গেছে। আমি নিজে এটা প্রচার করতে চাইনি। কিন্তু তারপরই দেখি বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে খবরটা চলে এসেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, -আমি সিঙ্গাপুরে অসুস্থ অবস্থায় থেকে এসব মিডিয়াকে কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? সেই ক্ষমতা কী আমার আছে? আজকে মিডিয়ায়ও আমাকে উপদেষ্টা করার খবর প্রচার করেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য অনুদান গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এমপি হাজারী বলেন, যেদিন আমি নেত্রীর হাত থেকে ৪০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছিলাম, সেদিনই নেত্রীকে বলেছিলাম- ‘আপনি বলছেন আমাকে কখনও বহিষ্কার করেননি, দলও করেনি, আপনিও করেননি। তখন আমি বলেছিলাম তাহলে দলে আমার অবস্থান কোথায়? তখন তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, অবস্থান ঠিক হয়ে যাবে। আমার আরও দুই একটি বিষয়ও তিনি মেনে নিয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন।
একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে অভিযোগ তুলে হাজারী বলেন, যারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বলে আসছে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেই পক্ষই আজকে আবার বলছে আমাকে উপদেষ্টা করা হয়নি। এখানে লোকগুলো দেখবেন, সেই অপশক্তিটাকে দেখবেন। এরা ওরা যারা ২০ বছর ধরে আমাকে দল থেকে ষড়যন্ত্র করে বের করে রেখেছিল। কিন্তু আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি। নেত্রী ২৫/৩০ জন ব্যক্তি ও ৩/৪ জন মন্ত্রীর সামনেই বলেছেন আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি। যেখানে নেত্রী বলছেন আমাকে কখনও দল থেকে বহিষ্কার কর হয়নি সেখানে আজকেও কিছু কুচক্রী বলছে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।
হাজারীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন নাসিম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার নিয়োগের পর সবার আগে সম্ভবত আলাউদ্দিন নাসিম স্ট্যাটাস দিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাহলে তিনি কি কোনও খবর না নিয়ে এই ধন্যবাদ জানিয়েছেন?