ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওড় ভ্রমণে মানতে হবে যেসব নির্দেশিকা

প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলা একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।  পর্যটকদের কাছে অবকাশ যাপনের অন্যতম জায়গা হয়ে ওঠেছে এ উপজেলা। দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান, আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেকের টিলা, স্রোতস্বীনী নদী যাদুকাটা, শহিদ সিরাজ (নিলাদ্রী) লেক, লাকমাছড়া ঝর্ণার মনোমুগ্ধকর সোন্দর্যের বর্ণনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে।

সবচেয়ে বেশি শিরোনামে এসেছে বিশ্ব ঐতিহ্য রামসার সাইট হিসেবে পরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বর্ণনা। ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরে এক কৃষক সমাবেশে এ অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণাও দেন।

সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওড়। বিরল প্রজাতির মৎস্য ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এই টাঙ্গুয়া। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওড়ে। আর বর্ষাকালে পানিতে টইটম্বুর টাঙ্গুয়ার হাওড় যেন সাগরে রূপ নেয়। প্রধানত বর্ষাকালেই টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান হাওড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। শত শত নৌকা নিয়ে হাওড়ে রাত্রী যাপন করেন তারা।

তবে শুরু থেকেই পরিবেশবাদী সংগঠন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন হাওড়ে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কথা থাকলেও, তা আর হয়ে ওঠেনি উপরন্তু হাওড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকিতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যদিও ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওড়কে ‘বিপন্ন প্রতিবেশ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার। পরে ২০০০ সালে ইউনেস্কো এটিকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পর্যটকদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে যেমন বাড়ছে ঠিক তেমন শঙ্কাও জেগেছে এর জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে। এর সঙ্গে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শানার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের নিকট দেখা দিয়েছে অন্যতম গুরুত্ববহ হয়ে।

এই বাস্তবতায় হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে ‘SMART TOURISM’ চালুর পাশাপাশি টাংগুয়ার হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরা ও হাওড় ভ্রমণ নিরাপদ-স্বাচ্ছন্দময় করে তোলতে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন চূড়ান্ত একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছেন।

নীতিমালায় প্রধান দিক হিসেবে বলা হয়েছে :-

পর্যটনের কারণে হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে বিঘ্নিত না হয় তার নিশ্চয়তা বিধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন পর্যটকবাহী জলযানকে হাওড়ে প্রবেশ করতে না দেওয়া। হাওড়ে অবস্থানকালীন সময় জলযানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানীয় মজুদ নিশ্চিত থাকতে হবে। হাওড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে নিয়ন্ত্রিত আকারে ভ্রমণ অনুমোদন করা। ট্যাকেরঘাট এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকায় নৌকা বা জলযানে রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে।

তাছাড়া পর্যটকবাহী জলযানে রান্নার জন্য ব্যবহার্য গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা যাবে না। সংরক্ষিত এলাকা সমূহে বিভিন্ন প্রাণির অবাধ বিচরণ, স্বাভাবিক আচরণ, প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

অন্যদিকে বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ এবং পর্যটকদের সাথে সমন্বয় সাধন করতে হবে। পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। ভ্রমণকালে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো হাতিয়ার, ফাঁদ, বিষ ইত্যাদি কোন অবস্থাতেই বহন করা যাবে না এবং মাছ শিকার বা ধরার সহায়ক কোন সরঞ্জাম বহন করা যাবেনা। হাওড়ে ভ্রমণের জন্য পর্যটক, ট্যুর অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ ও জলযান ব্যবহার সংক্রান্ত বিধি নিষেধ প্রণয়ন করা।

এছাড়া সর্বোচ্চ ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জলযান হাওড়ে ভ্রমণ করতে পারবে তবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনীয় সময় হাওড়ে অবস্থান করা যাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২দিন ১ রাত পর্যটকরা হাওড়ে অবস্থান করতে পারবে।

হাওড়ে জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকান্ড বা আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অবকাঠামো ও উপরিকাঠামো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। জলযান রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য যে কোন ধরনের আদায়যোগ্য ফি এর একটি তালিকা বিভিন্ন দপ্তর ও স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দৈনিক চলাচলযোগ্য নৌকা বা জলযানের সংখ্যা নির্ধারণ করে প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটকগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারে সে বিষয়ে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকদের সহযোগিতা করা।

হাওড়ে ভ্রমণের রুট নির্ধারণ করা এবং ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা। নৌযান বা হাউসবোটের বর্জ্যসমূহ পরিবেশবান্ধব উপায়ে নির্দিষ্ট সেফটিক ট্যাংকে নির্গমন নিশ্চিত করা। ইভটিজিং বা মাদক প্রচলিত আইন বিরোধী কার্যকলাপ ইত্যাদি রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম অভিযান বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ।

ট্যুর অপারেটর, নৌযান-হাউসবোট মালিক ও পরিচালকদের যেসব বিধি-নিষেধ মানতে হবে :

নির্দিষ্ট শর্তাবলি পূরণসাপেক্ষে জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন বা অনুমোদন নিতে হবে। প্রাথমিক অনুমোদন গ্রহণের ৩ মাসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নৌযানসমূহের নিবন্ধন ও জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন এবং রুট পারমিট গ্রহণ করে (অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংক্রান্ত যাবতীয় আইন ও বিধানাবলী অনুযায়ী) জেলা প্রশাসন হতে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, নৌযান সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী তৈরী হতে হবে।

নৌযানের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নির্ধারিত ট্যুরিস্ট, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, লাইফ জ্যাকেট রাখার পাশাপাশি নৌযানে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী থাকতে হবে। প্রশিক্ষিত মাঝি বা সুকানী দ্বারা নৌযান পরিচালনা করতে হবে।

হাওড়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণের নিমিত্তে প্রতিদিন প্রশাসন কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক নৌযান হাওড়ে পর্যটক বহন করতে পারবে। তাছাড়া কেবলমাত্র জেলা প্রশাসন নৌযানের তালিকা হতে পর্যায়ক্রমে পর্যটক বহন করার জন্য নৌযান বাছাই করবে।

স্বাভাবিক মাত্রার অধিক শব্দ সৃষ্টিকারী, অতিরিক্ত বা কালো ধোঁয়া উদগীরণকারী কিংবা ত্রুটিপূর্ণ কোন জলযান পর্যটক পরিবহনে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পর্যটকবাহী নৌকা বা জলযানে বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পর্যটকবাহী নৌযানে পর্যটক ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম (লাইফ জ্যাকেট, বয়া) কার্যকারিতা যাত্রা শুরুর পূর্বে নিয়মিত পরীক্ষা করে নিতে হবে। পর্যটকবাহী নৌযানে সৌর শক্তি ব্যবহারে সচেষ্ট হতে হবে।

হাওড়ের অভ্যন্তরে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী জেনারেটর বহন থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি রাত ১০ টার পর জলযানে ব্যবহৃত জেনারেটর বন্ধ রাখতে হবে। নৌকা বা জলযানে নিরাপদে ওঠা-নামার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটকবাহী নৌযানে রাত্রিকালীন অবস্থানের ক্ষেত্রে অনুমোদিত সংখ্যক পর্যটকের বেশী পর্যটক বহন ও যত্রতত্র লঞ্চ বা জলযান নোঙর করা যাবে না এবং রাত্রিকালীন অবস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিতকরণসহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অপরাধ সংঘটিত হতে দেখা গেলে বা আলামত পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করাসহ অপরাধ বা দুর্ঘটনা উদ্ঘাটন বা প্রতিরোধে সহযোগিতা করতে হবে।

ভ্রমণের পূর্বে প্রত্যেক পর্যটকের পরিচয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি একটি ফরমে ( নাম, মোবাইল নম্বর, এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন ইত্যাদি) সংগ্রহ করে স্থানীয় প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট জমা দিতে হবে। রাত্রিকালীন চলাচলের সময় নৌযানে নির্দেশিকা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সুনামগঞ্জ বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হওয়ায় বজ্রপাত ও বৃষ্টির সময় অবশ্যই পর্যটকদের অবস্থান নৌকা বা জলযানের ভিতরে নিশ্চিত করতে হবে।

ভ্রমণকালে প্রচলিত আইন, বিধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলা, যেখানে সেখানে অবতরণ, বিচরণ ও অবস্থান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো মাইক বা মাইক্রোফোন জাতীয় উচ্চ শব্দযন্ত্র বহণ করা যাবে না। হাওড়ে নির্জনতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে হবে। পর্যটকবাহী নৌকা চলাচলের জন্য নির্ধারিত রুট অনুসরণ করতে হবে। ভ্রমণকালে মানববর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য কোনোভাবেই হাওড়ের পানিতে ফেলা যাবে না। হাউস বোটে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেফটিক ট্যাংক সরবরাহ রাখতে হবে।

অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং মাছের প্রজনন স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে চিহ্নিত এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌযান দিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তবে পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ইঞ্জিন বিহীন লোকাল নৌকায় নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভ্রমণ করতে পারবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সময়ে সময়ে কর্তৃপক্ষের জারীকৃত যে কোনো আদেশ, নির্দেশনাবলী প্রতিপালন করতে হবে। পর্যটন স্পটসমূহ সীমান্তবর্তী হওয়ায় পর্যকবাহী হাউসবোট বা নৌযান নিয়ে কোনোভাবেই সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করা যাবে না।

পর্যটকদের যা মেনে চলতে হবে :

হাওড়ের প্রবেশপথে বা অবস্থান বা ভ্রমণকালে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক নৌযান পরিদর্শনকালে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। হাওড়ে প্রবেশ করার পর জলে, স্থলে কোনভাবেই কোন আবর্জনা না ফেলা এবং জলযানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কেবলমাত্র নির্ধারিত স্থানে আবর্জনা ফেলতে হবে।

ট্যাকেরঘাট ব্যতীত নৌকা বা জলযানে অন্যকোথাও রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পূর্বে অবহিত করতে হবে। শিক্ষা সফরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। প্রতি গ্রুপে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিভাবক বা শিক্ষক থাকতে হবে। নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত যত্রতত্র হাওড়, নদী বা খালের পানিতে অবতরণ না করা এবং গোসল করা ও সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকান্ড বা আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

সুনামগঞ্জ বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হওয়ায় বজ্রপাতের ও বৃষ্টির সময় নৌকা বা জলযানের ভিতরে অবস্থান করতে হবে। যেকোন প্রকার অসামাজিক কর্মকান্ড যেমন ইভটিজিং, মাদক গ্রহনসহ বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। স্থানীয় জনগণের সাথে কোনো ধরণের বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না। স্থানীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যেকোনো ধরণের প্রতারণা বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মূল্যবান মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। সীমান্তবর্তী পর্যটন স্পটসমূহে কোনোভাবেই সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করা যাবেনা।

হাউসবোট ওনার্স এসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জ সমিতির প্রচার সম্পাদক হাসানুর রহমান উল্লাস বলেন,  পর্যটকবাহী নৌযান ও হাউসবোট ব্যবস্থাপনায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন যে নীতিমালা করেছেন তা আমরা পেয়েছি। এসব বিধি-নিষেধ অবশ্যই মেনে চলা হবে। এবং আগামি দিনেও হাওড়ের পর্যটন ঘিরে যেকোনো নিয়মকানুন মেনে চলেই হাউসবোটগুলো পরিচালনা করা হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, হাওড়ের জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকবাহী নৌযান-হাউসবোট ও আগত দর্শনার্থীদের এসব নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

হাওড় ভ্রমণে মানতে হবে যেসব নির্দেশিকা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪

প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলা একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।  পর্যটকদের কাছে অবকাশ যাপনের অন্যতম জায়গা হয়ে ওঠেছে এ উপজেলা। দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান, আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেকের টিলা, স্রোতস্বীনী নদী যাদুকাটা, শহিদ সিরাজ (নিলাদ্রী) লেক, লাকমাছড়া ঝর্ণার মনোমুগ্ধকর সোন্দর্যের বর্ণনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে।

সবচেয়ে বেশি শিরোনামে এসেছে বিশ্ব ঐতিহ্য রামসার সাইট হিসেবে পরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বর্ণনা। ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরে এক কৃষক সমাবেশে এ অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণাও দেন।

সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওড়। বিরল প্রজাতির মৎস্য ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এই টাঙ্গুয়া। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওড়ে। আর বর্ষাকালে পানিতে টইটম্বুর টাঙ্গুয়ার হাওড় যেন সাগরে রূপ নেয়। প্রধানত বর্ষাকালেই টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান হাওড়ের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। শত শত নৌকা নিয়ে হাওড়ে রাত্রী যাপন করেন তারা।

তবে শুরু থেকেই পরিবেশবাদী সংগঠন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন হাওড়ে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কথা থাকলেও, তা আর হয়ে ওঠেনি উপরন্তু হাওড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকিতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যদিও ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওড়কে ‘বিপন্ন প্রতিবেশ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার। পরে ২০০০ সালে ইউনেস্কো এটিকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পর্যটকদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে যেমন বাড়ছে ঠিক তেমন শঙ্কাও জেগেছে এর জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে। এর সঙ্গে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শানার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের নিকট দেখা দিয়েছে অন্যতম গুরুত্ববহ হয়ে।

এই বাস্তবতায় হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে ‘SMART TOURISM’ চালুর পাশাপাশি টাংগুয়ার হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরা ও হাওড় ভ্রমণ নিরাপদ-স্বাচ্ছন্দময় করে তোলতে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন চূড়ান্ত একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছেন।

নীতিমালায় প্রধান দিক হিসেবে বলা হয়েছে :-

পর্যটনের কারণে হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে বিঘ্নিত না হয় তার নিশ্চয়তা বিধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোন পর্যটকবাহী জলযানকে হাওড়ে প্রবেশ করতে না দেওয়া। হাওড়ে অবস্থানকালীন সময় জলযানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানীয় মজুদ নিশ্চিত থাকতে হবে। হাওড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে নিয়ন্ত্রিত আকারে ভ্রমণ অনুমোদন করা। ট্যাকেরঘাট এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকায় নৌকা বা জলযানে রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে।

তাছাড়া পর্যটকবাহী জলযানে রান্নার জন্য ব্যবহার্য গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা যাবে না। সংরক্ষিত এলাকা সমূহে বিভিন্ন প্রাণির অবাধ বিচরণ, স্বাভাবিক আচরণ, প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

অন্যদিকে বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ এবং পর্যটকদের সাথে সমন্বয় সাধন করতে হবে। পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। ভ্রমণকালে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো হাতিয়ার, ফাঁদ, বিষ ইত্যাদি কোন অবস্থাতেই বহন করা যাবে না এবং মাছ শিকার বা ধরার সহায়ক কোন সরঞ্জাম বহন করা যাবেনা। হাওড়ে ভ্রমণের জন্য পর্যটক, ট্যুর অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ ও জলযান ব্যবহার সংক্রান্ত বিধি নিষেধ প্রণয়ন করা।

এছাড়া সর্বোচ্চ ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জলযান হাওড়ে ভ্রমণ করতে পারবে তবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনীয় সময় হাওড়ে অবস্থান করা যাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২দিন ১ রাত পর্যটকরা হাওড়ে অবস্থান করতে পারবে।

হাওড়ে জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকান্ড বা আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অবকাঠামো ও উপরিকাঠামো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। জলযান রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য যে কোন ধরনের আদায়যোগ্য ফি এর একটি তালিকা বিভিন্ন দপ্তর ও স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দৈনিক চলাচলযোগ্য নৌকা বা জলযানের সংখ্যা নির্ধারণ করে প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটকগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারে সে বিষয়ে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকদের সহযোগিতা করা।

হাওড়ে ভ্রমণের রুট নির্ধারণ করা এবং ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা। নৌযান বা হাউসবোটের বর্জ্যসমূহ পরিবেশবান্ধব উপায়ে নির্দিষ্ট সেফটিক ট্যাংকে নির্গমন নিশ্চিত করা। ইভটিজিং বা মাদক প্রচলিত আইন বিরোধী কার্যকলাপ ইত্যাদি রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম অভিযান বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ।

ট্যুর অপারেটর, নৌযান-হাউসবোট মালিক ও পরিচালকদের যেসব বিধি-নিষেধ মানতে হবে :

নির্দিষ্ট শর্তাবলি পূরণসাপেক্ষে জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন বা অনুমোদন নিতে হবে। প্রাথমিক অনুমোদন গ্রহণের ৩ মাসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নৌযানসমূহের নিবন্ধন ও জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন এবং রুট পারমিট গ্রহণ করে (অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংক্রান্ত যাবতীয় আইন ও বিধানাবলী অনুযায়ী) জেলা প্রশাসন হতে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, নৌযান সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী তৈরী হতে হবে।

নৌযানের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নির্ধারিত ট্যুরিস্ট, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, লাইফ জ্যাকেট রাখার পাশাপাশি নৌযানে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী থাকতে হবে। প্রশিক্ষিত মাঝি বা সুকানী দ্বারা নৌযান পরিচালনা করতে হবে।

হাওড়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণের নিমিত্তে প্রতিদিন প্রশাসন কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক নৌযান হাওড়ে পর্যটক বহন করতে পারবে। তাছাড়া কেবলমাত্র জেলা প্রশাসন নৌযানের তালিকা হতে পর্যায়ক্রমে পর্যটক বহন করার জন্য নৌযান বাছাই করবে।

স্বাভাবিক মাত্রার অধিক শব্দ সৃষ্টিকারী, অতিরিক্ত বা কালো ধোঁয়া উদগীরণকারী কিংবা ত্রুটিপূর্ণ কোন জলযান পর্যটক পরিবহনে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পর্যটকবাহী নৌকা বা জলযানে বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পর্যটকবাহী নৌযানে পর্যটক ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম (লাইফ জ্যাকেট, বয়া) কার্যকারিতা যাত্রা শুরুর পূর্বে নিয়মিত পরীক্ষা করে নিতে হবে। পর্যটকবাহী নৌযানে সৌর শক্তি ব্যবহারে সচেষ্ট হতে হবে।

হাওড়ের অভ্যন্তরে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী জেনারেটর বহন থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি রাত ১০ টার পর জলযানে ব্যবহৃত জেনারেটর বন্ধ রাখতে হবে। নৌকা বা জলযানে নিরাপদে ওঠা-নামার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটকবাহী নৌযানে রাত্রিকালীন অবস্থানের ক্ষেত্রে অনুমোদিত সংখ্যক পর্যটকের বেশী পর্যটক বহন ও যত্রতত্র লঞ্চ বা জলযান নোঙর করা যাবে না এবং রাত্রিকালীন অবস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিতকরণসহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অপরাধ সংঘটিত হতে দেখা গেলে বা আলামত পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করাসহ অপরাধ বা দুর্ঘটনা উদ্ঘাটন বা প্রতিরোধে সহযোগিতা করতে হবে।

ভ্রমণের পূর্বে প্রত্যেক পর্যটকের পরিচয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি একটি ফরমে ( নাম, মোবাইল নম্বর, এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন ইত্যাদি) সংগ্রহ করে স্থানীয় প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট জমা দিতে হবে। রাত্রিকালীন চলাচলের সময় নৌযানে নির্দেশিকা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সুনামগঞ্জ বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হওয়ায় বজ্রপাত ও বৃষ্টির সময় অবশ্যই পর্যটকদের অবস্থান নৌকা বা জলযানের ভিতরে নিশ্চিত করতে হবে।

ভ্রমণকালে প্রচলিত আইন, বিধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলা, যেখানে সেখানে অবতরণ, বিচরণ ও অবস্থান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো মাইক বা মাইক্রোফোন জাতীয় উচ্চ শব্দযন্ত্র বহণ করা যাবে না। হাওড়ে নির্জনতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে হবে। পর্যটকবাহী নৌকা চলাচলের জন্য নির্ধারিত রুট অনুসরণ করতে হবে। ভ্রমণকালে মানববর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য কোনোভাবেই হাওড়ের পানিতে ফেলা যাবে না। হাউস বোটে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেফটিক ট্যাংক সরবরাহ রাখতে হবে।

অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং মাছের প্রজনন স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে চিহ্নিত এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌযান দিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তবে পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ইঞ্জিন বিহীন লোকাল নৌকায় নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভ্রমণ করতে পারবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সময়ে সময়ে কর্তৃপক্ষের জারীকৃত যে কোনো আদেশ, নির্দেশনাবলী প্রতিপালন করতে হবে। পর্যটন স্পটসমূহ সীমান্তবর্তী হওয়ায় পর্যকবাহী হাউসবোট বা নৌযান নিয়ে কোনোভাবেই সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করা যাবে না।

পর্যটকদের যা মেনে চলতে হবে :

হাওড়ের প্রবেশপথে বা অবস্থান বা ভ্রমণকালে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক নৌযান পরিদর্শনকালে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। হাওড়ে প্রবেশ করার পর জলে, স্থলে কোনভাবেই কোন আবর্জনা না ফেলা এবং জলযানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কেবলমাত্র নির্ধারিত স্থানে আবর্জনা ফেলতে হবে।

ট্যাকেরঘাট ব্যতীত নৌকা বা জলযানে অন্যকোথাও রাত্রিযাপন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পূর্বে অবহিত করতে হবে। শিক্ষা সফরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। প্রতি গ্রুপে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভিভাবক বা শিক্ষক থাকতে হবে। নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত যত্রতত্র হাওড়, নদী বা খালের পানিতে অবতরণ না করা এবং গোসল করা ও সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকান্ড বা আচার-আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

সুনামগঞ্জ বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হওয়ায় বজ্রপাতের ও বৃষ্টির সময় নৌকা বা জলযানের ভিতরে অবস্থান করতে হবে। যেকোন প্রকার অসামাজিক কর্মকান্ড যেমন ইভটিজিং, মাদক গ্রহনসহ বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। স্থানীয় জনগণের সাথে কোনো ধরণের বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না। স্থানীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যেকোনো ধরণের প্রতারণা বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মূল্যবান মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। সীমান্তবর্তী পর্যটন স্পটসমূহে কোনোভাবেই সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করা যাবেনা।

হাউসবোট ওনার্স এসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জ সমিতির প্রচার সম্পাদক হাসানুর রহমান উল্লাস বলেন,  পর্যটকবাহী নৌযান ও হাউসবোট ব্যবস্থাপনায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন যে নীতিমালা করেছেন তা আমরা পেয়েছি। এসব বিধি-নিষেধ অবশ্যই মেনে চলা হবে। এবং আগামি দিনেও হাওড়ের পর্যটন ঘিরে যেকোনো নিয়মকানুন মেনে চলেই হাউসবোটগুলো পরিচালনা করা হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, হাওড়ের জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকবাহী নৌযান-হাউসবোট ও আগত দর্শনার্থীদের এসব নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।