ঢাকা , রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মগোপনে রাজশাহীর ২০ কাউন্সিলর, সেবাবঞ্চিত নাগরিকরা

শেখ হাসিনার সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং অন্তত ২৬ জন কাউন্সিলর আত্মগোপনে যান। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এলাকায় ফিরে এলেও এখনো অন্তত ২০ জন কাউন্সিলর আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে নগরীর সাধারণ মানুষ অন্তত ১৪ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।সাবেক মেয়র লিটনসহ এসব কাউন্সিলরের নামে হত্যা এবং বিএনপির অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা এখনো পলাতক রয়েছেন। ৫ আগস্ট অনেক কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এখনো আতঙ্কে অফিস করতে পারছেন না কোনো কোনো কাউন্সিলর ও কার্যালয়ের সচিবও। তাঁরা সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে কাজ করছেন।
এসব কারণে এলাকার মানুষ কাউন্সিলর কার্যালয়ের জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সূত্র মতে, গত বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত রাসিক নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৬টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন মেয়র লিটনসহ আত্মগোপনে যান ২৬ কাউন্সিলর।

ছয়জন এলাকায় ফিরে এসেছেন। এখনো পলাতক অন্তত ২০ জন।এসব কাউন্সিলরের মধ্যে রয়েছেন নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানে আলম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল জামান, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ আব্দুল মমিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযিম, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ টেকন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহাতাব উদ্দিন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলাউদ্দিন।

এলাকায় ফিরেছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরুসহ অন্তত ছয়জন। এখনো অন্তত ২০ জন পলাতক থাকায় নাগরিকরা কাউন্সিলর কার্যালয়ের অন্তত ১৪ ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘আমার বাড়ি ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। আমার স্ত্রী মারা গেছেন বেশ কিছু দিন হলো। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলতে ওয়ারিশান সনদ দরকার। জরুরি এই সনদটি ছাড়া কোনো কাজই আমরা করতে পারছি না। কিন্তু কাউন্সিলর পলাতক থাকায় আমি সেই সনদ নিতে পারছি না।’

নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে বিদেশ যাবে। সে এই এলাকার বাসিন্দা কি না, সে জন্য একটি প্রত্যয়ন দরকার। পাশাপাশি নাগরিক সনদও দরকার। কিন্তু কাউন্সিলর না থাকায় আমি সেটি পাচ্ছি না।’

নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করব। কিন্তু কাউন্সিলর এলাকায় নেই। কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি, কার্যালয়টি ভেঙে লুটপাট চালানো হয়েছে। কম্পিউটার নিয়ে যাওয়ায় সচিব কোনো কাজ করতে পারছেন না বলে জানালেন। কিন্তু আমার জরুরি দরকার জন্ম নিবন্ধন সনদটি।’

এভাবে প্রতিদিন কাউন্সিলর কার্যালয়ে নানা কাজে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে নগরীর হাজারো মানুষকে। জানতে চাইলে দুজন কাউন্সিলর পলাতক থাকা অবস্থায় হোয়াটসঅ্যাপে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সদন প্রদানসহ এলাকার ছোটখাটো জটিলতা নিরসনের সালিস করি। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সচিবদেরও কার্যালয়ে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে তাঁরা সিটি করপোরেশনে অফিস করছেন। আমরাও মামলার ভয়ে আত্মগোপনে আছি। ফলে নাগরিকরা নানা ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘অনেক কাউন্সিলরই এলাকায় থাকতে পারছেন না বলে শুনেছি। নগর ভবনসহ কোনো কোনো ওয়ার্ড কার্যালয়েও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফলে নাগরিক সেবা থেকে অনেকে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব সমস্যার দ্রুত নিরসনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মগোপনে রাজশাহীর ২০ কাউন্সিলর, সেবাবঞ্চিত নাগরিকরা

আপডেট টাইম : ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪
শেখ হাসিনার সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং অন্তত ২৬ জন কাউন্সিলর আত্মগোপনে যান। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এলাকায় ফিরে এলেও এখনো অন্তত ২০ জন কাউন্সিলর আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে নগরীর সাধারণ মানুষ অন্তত ১৪ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।সাবেক মেয়র লিটনসহ এসব কাউন্সিলরের নামে হত্যা এবং বিএনপির অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা এখনো পলাতক রয়েছেন। ৫ আগস্ট অনেক কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এখনো আতঙ্কে অফিস করতে পারছেন না কোনো কোনো কাউন্সিলর ও কার্যালয়ের সচিবও। তাঁরা সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে কাজ করছেন।
এসব কারণে এলাকার মানুষ কাউন্সিলর কার্যালয়ের জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সূত্র মতে, গত বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত রাসিক নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৬টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন মেয়র লিটনসহ আত্মগোপনে যান ২৬ কাউন্সিলর।

ছয়জন এলাকায় ফিরে এসেছেন। এখনো পলাতক অন্তত ২০ জন।এসব কাউন্সিলরের মধ্যে রয়েছেন নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানে আলম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল জামান, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ আব্দুল মমিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযিম, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ টেকন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহাতাব উদ্দিন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলাউদ্দিন।

এলাকায় ফিরেছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরুসহ অন্তত ছয়জন। এখনো অন্তত ২০ জন পলাতক থাকায় নাগরিকরা কাউন্সিলর কার্যালয়ের অন্তত ১৪ ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘আমার বাড়ি ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। আমার স্ত্রী মারা গেছেন বেশ কিছু দিন হলো। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলতে ওয়ারিশান সনদ দরকার। জরুরি এই সনদটি ছাড়া কোনো কাজই আমরা করতে পারছি না। কিন্তু কাউন্সিলর পলাতক থাকায় আমি সেই সনদ নিতে পারছি না।’

নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে বিদেশ যাবে। সে এই এলাকার বাসিন্দা কি না, সে জন্য একটি প্রত্যয়ন দরকার। পাশাপাশি নাগরিক সনদও দরকার। কিন্তু কাউন্সিলর না থাকায় আমি সেটি পাচ্ছি না।’

নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করব। কিন্তু কাউন্সিলর এলাকায় নেই। কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি, কার্যালয়টি ভেঙে লুটপাট চালানো হয়েছে। কম্পিউটার নিয়ে যাওয়ায় সচিব কোনো কাজ করতে পারছেন না বলে জানালেন। কিন্তু আমার জরুরি দরকার জন্ম নিবন্ধন সনদটি।’

এভাবে প্রতিদিন কাউন্সিলর কার্যালয়ে নানা কাজে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে নগরীর হাজারো মানুষকে। জানতে চাইলে দুজন কাউন্সিলর পলাতক থাকা অবস্থায় হোয়াটসঅ্যাপে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সদন প্রদানসহ এলাকার ছোটখাটো জটিলতা নিরসনের সালিস করি। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সচিবদেরও কার্যালয়ে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে তাঁরা সিটি করপোরেশনে অফিস করছেন। আমরাও মামলার ভয়ে আত্মগোপনে আছি। ফলে নাগরিকরা নানা ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘অনেক কাউন্সিলরই এলাকায় থাকতে পারছেন না বলে শুনেছি। নগর ভবনসহ কোনো কোনো ওয়ার্ড কার্যালয়েও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফলে নাগরিক সেবা থেকে অনেকে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব সমস্যার দ্রুত নিরসনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’